রাজ্যবাসীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হয়েছে তবুও রেগায় শ্রমদিবস বাড়াতে কেন্দ্রে দরবার রাজ্যের

REGA CMনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৯ এপ্রিল৷৷ রাজ্যে গরীব অংশের মানুষের জীবন যাত্রার মানের উন্নতি ঘটেছে এই যুক্তি দেখিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার রেগা প্রকল্পে ত্রিপুরার জন্য মোট শ্রমদিবসের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে৷ গরীব অংশের মানুষের জীবন যাত্রার মানোন্নয়ন সত্বেও রেগা প্রকল্পে শ্রমদিবস বাড়ানোর রাজ্যের দাবী নিয়ে অস্পষ্টতা দেখা দিয়েছে৷ একদিকে যখন এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল গরীব অংশের মানুষের আর্থিক মানোন্নয়ন৷ সেই মোতাবেক রাজ্য সরকারের নানাবিধ কর্মসূচী এবং এই প্রকল্পের দৌলতে গরীব অংশের মানুষের জীবন যাত্রার মানের উন্নতি ঘটেছে৷ ফলে, কী অর্থে রাজ্য সরকার ক্রমাগত রেগা প্রকল্পে শ্রমদিবস বাড়ানোর জন্য দরবার করছে তা নিয়ে প্রশ্ণ উঠছে৷ শনিবার প্রজ্ঞা ভবনে এমজিএনরেগা প্রকল্প নিয়ে এক পর্যালোচনা বৈঠকে রাজ্যে গরীব অংশের মানুষের জীবন যাত্রার মানের উন্নতির বিষয়টি উঠে আসে৷ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এই নিয়ে প্রশংসা কুড়ালেও শ্রমদিবস বাড়ানোর দাবিতে কেন্দ্রের উপর চাপ বজায় রাখতে হবে বলে জোড়ালো সওয়াল করেছেন৷
আজ বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করতে প্রজ্ঞাভবনে সমস্ত জেলা সভাধিপতি, পঞ্চায়েত সমিতি ও বি এ সির চেয়্যারম্যান, জেলা শাসক, বি ডি ও দের নিয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷ এতে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী নরেশ জমাতিয়া, মুখ্যসচিব ওয়াই পি সিং, গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের প্রধান সচিব জি এস জি আয়েঙ্গার উপস্থিত ত্রিপুরার৷ বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার এম জি এন রেগা প্রকল্পে ত্রিপুরার জন্য মোট শ্রমদিবসের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে৷ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভাল কাজ করাকেই এর জন্য কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে৷ কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে মাথায় করে ময়লা ফেলার যে কাজ তা ত্রিপুরায় কেউ করেন না৷ এ রাজ্যে শ্রমদাসও নেই৷ এছাড়া আদিম জাতি হিসাবে চিহ্ণিত রিয়াং জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে নানাবিধ প্রকল্প নেয়া হচ্ছে৷ ফলে তাদের জাবনযাত্রার মানেরও উন্নতি ঘটেছে৷ যে রাজ্যে এই বিষয়গুলি নেই সেখানে শ্রমদিবস ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এজন্য রাজ্যকে পুরসৃকত করার বদলে উল্টো বিপাকে ফেলে দেয়া হয়েছে৷ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়৷ রাজ্যের জোরালো প্রতিবাদের মুখে শেষ পর্যন্ত গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, সেপ্ঢেম্বর অক্টোবর মাস নাগাদ পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্তের পুনর্মূল্যায়ন করা হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রের উপর চাপ বজায় রাখতে হবে৷ এপ্রিল থেকে যে বছর শুরু হয়েছে তার প্রথম চার, পাঁচ মাসের কাজের উপর নির্দ্ধারণ হবে সব কিছু৷ এ সময় বেশী করে কাজ করতে হবে৷
উল্লেখ্য, এম জি এন রেগায় অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে ত্রিপুরা সহ ১০টি রাজ্যে এ বছরের ১লা এপ্রিল থেকে নতুন পদ্ধতি চালু হয়েছে৷ গত বছর পি এফ এম এস পদ্ধতির মাধ্যমে এই প্রকল্পে অর্থ প্রদান করা হয়েছে৷ এতে বেশ কিছু ক্ষেত্রেই শ্রমিকদের কাছে অর্থ পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল৷ এ বছর নেশন্যাল ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ( এন ই এফ এম এস)-র মাধ্যমে শ্রমদিবসের টাকা কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক সরাসরি শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক একাউন্টে ঢুকিয়ে দেবে৷ ফলে শ্রমদিবসের কাজ শেষ করার পর খুব সহসাই শ্রমিকরা তাদের মজুরী পেয়ে যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে৷
এদিন, বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, এ বছর রেগায় অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে যে নতুন পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে তার প্রতি জেলা শাসকদের তীক্ষ্ন নজর রাখতে হবে৷ কোন সমস্যা হলেই তা গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের প্রধান সচিবকে জানাতে হবে৷ নেট সংযোগ নিয়ে কোন সমস্যা থাকলে তা ১৫ ই এপ্রিলের মধ্যে মিটিয়ে ফেলার জন্য তিনি গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের প্রধান সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন৷ ২০১৬-১৭ সালে এই প্রকল্পে এ ডি সি এলাকায় রাস্তা তৈরী করার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার জন্যও তিনি নির্দেশ দিয়েছেন৷
কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে আগের ৩টি অর্থ বছরের অসমাপ্ত কাজ চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে শেষ করে ফেলার জন্য তিনি জেলা শাসকদের বলেছেন৷ ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের জন্য সুবিধাভোগীদের নাম চূড়ান্ত করা হয়ে গেছে বলেও বৈঠকে জানানো হয়৷ ২০১৭ সালের মার্চ মাসের মধ্যে সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত এবং ভিলেজ কমিটিতে পাকা শৌচালয় নির্মাণের যে লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে তাতে পৌঁছানো যাবে বলে বৈঠকে আশা প্রকাশ করা হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী এই কাজগুলি করার ক্ষেত্রে মাদ্রাসা এবং অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রগুলির দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে বলেছেন৷ তিনি সমস্ত ক্ষেত্রেই সমন্বয় সাধন করে কাজ করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *