নির্বাচনী বিধি প্রশ্ণের মুখে

RAIL TRIPURAআশংকা করা হইতেছে যে, নির্বাচনী বিধির গ্যাঁড়াকলে আগরতলা হইতে ব্রডগেজে রেলের যাত্রা পিছাইয়া যাইতে পারে৷ ত্রিপুরার মানুষের হৃদয় লালিত স্বপ্ণের দীর্ঘ প্রতীক্ষার বাস্তবায়নে যদি নির্বাচনী বিধি অন্তরায় হইয়া দাঁড়ায় তাহা হইবে চরম দূর্ভাগ্যের৷ রেলের সুরক্ষা কমিশন আগরতলা হইতে বদরপুর পর্য্যন্ত রেল চলাচলের ছাড়পত্র দিয়াছেন৷ সুরক্ষা বিষয়ে যেখানে বাধা কাটিল সেখানে নির্বাচনী বিধি ব্রডগেজ উদ্বোধন পিছাইয়া যাওয়ার ঘটনা দূর্ভাগ্যের নহে বড় বেশী বিড়ম্বনারও৷ উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের সদর দপ্তর আসামের গুয়াহাটির মালিগাঁওএ৷ যেহেতু, এই আসামেই বিধানসভার নির্বাচন সেখানে আগরতলা হইতে ব্রডগেজ রেলের উদ্বোধন এই মুহুর্তে হয়ত আর হইতেছে না৷ যদিও এই বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য জানা যায় নাই৷ রেল মন্ত্রক এই বিষয়ে নিশ্চয়ই নির্বাচন কমিশনের অনুমতি চাহিবে৷
আগরতলা-বদরপুর লাইনে ব্রডগেজের কাজ তো চালু প্রক্রিয়া৷ ইতিমধ্যে যাত্রী রেল চালাইয়াছে সুরক্ষা কমিশন৷ রেল চলিবে ত্রিপুরা হইতে৷ আবার বদরপুর বা গুয়াহাটি-কলকাতা দিল্লী রেল যাত্রার সূচনাও তো হইবে একটি চালু প্রক্রিয়ার মধ্যেই৷ সুতরাং ইহা তো নতুন কোন কর্মসূচি নহে৷ নির্বাচন কমিশনকে তাহা খতাইয়া দেখিতে হইবে৷ ভারতবর্ষ বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ৷ পঞ্চায়েত, পুরসভা, নগরসভা হইতে শুরু করিয়া বিভিন্ন স্বয়ংশাসিত সংস্থার নির্বাচন ইত্যাদি বছরভর লাগিয়াই আছে৷ সারা বছর জুড়িয়াই নির্বাচন৷ আর এই নির্বাচন ঘোষণার অর্থই হইল সমস্ত সরকারী কর্মযজ্ঞের মুখে লাগাম পরাইয়া দেওয়া৷ এমনিতেই সরকারী কাজে আঠার মাসে বছর হয়৷ সরকারী অফিসগুলিতে কাজ কর্মের দক্ষতা কমিতেছে৷ ঢিলেমি, অলসতা, কাজে ফাঁকি দেওয়ার রোগ তো লাগিয়াই আছে৷ এই অবস্থায় বৃহত্তম গণতন্ত্রের ঠ্যালায় তো ত্রিপুরার মানুষ চরম বিড়ম্বনায়, ত্রিপুরা কেন সারা দেশেই তো সেই একই পরিস্থিতি৷ ভোট আসিলেই সরকারী কাজের টেন্ডার ইত্যাদিও বন্ধ হইয়া যায়৷ এই যদি আমাদের গণতন্ত্রের ঐতিহ্য বা বিধি হয় তাহা হইলে এই নির্বাচনও প্রশ্ণের মুখে পড়িয়া যাওয়াটাই সঙ্গত৷ এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনী আচরণ বিধি সম্পর্কে আরও বেশী পর্যালোচনা করার খুব বেশী তাগিদ দেখা দিয়াছে৷
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ভারতের নির্বাচনী অবস্থা অনেকখানিই ঢিলেঢালা অবস্থায় ছিল৷ ভারতের নির্বাচন কমিশন তো একসময় কেন্দ্রের সরকারের অঙ্গুলী নির্দেশে কাজ করিত৷ সেই পরিস্থিতির অনেক বেশী পরিবর্তন হইয়াছে এবং কমিশন অনেক বেশী শক্তিশালী ও স্বাধীন চেতা হিসাবে জনমনে প্রতিষ্ঠা পাহিয়াছে৷ প্রকৃত পক্ষে ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার পদে টি এন শেষাণের অভিষেক নির্বাচনী ক্ষেত্রে নবযুগের সূচনা হইয়াছে৷ কমিশনের ক্ষমতা কতখানি, কিভাবে কমিশন নির্বাচন ব্যবস্থাকে সত্যিকারের নিরপক্ষে ভিতের উপর দাঁড় করাইতে পারে তাহা দেশবাসী অবলোকন করিয়াছেন৷ শেষাণের এই অবদান ভুলিয়া গেলে চলিবে না৷ জো হুজুর মার্কা নির্বাচন কমিশনের স্থলে নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের উত্তরণ দেশের গণতন্ত্রকেও শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করাইয়াছে৷ আজ আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের গণতন্ত্রের সুনাম ছড়াইয়াছে৷ যদিও নির্বাচনী ব্যবস্থায় আরও অনেক গলদ ত্রুটি ইত্যাদি রহিয়াছে তবু, ভারতের গণতন্ত্রের মহিমা গোটা বিশ্বেই আজ প্রশংসার বিষয় হইয়া দাঁড়াইয়াছে৷ এই অবস্থার মধ্যে নির্বাচনী আচরণ বিধির ক্ষেত্রে নতুন করিয়া প্রশ্ণ দেখা দিয়াছে৷ চালু প্রক্রিয়া ও জনস্বার্থ যেখানে জড়িত সেখানে কাজ বন্ধ রাখার ঘটনা কতখানি সংগত সেই প্রশ্ণ উঠিয়াছে৷ ত্রিপুরা যোগাযোগের দিক দিয়া একেবারেই যন্ত্রণাকাতর৷ এই অবস্থায় ব্রডগেজ রেল চালু করিবার সবুজ সংকেত পাইয়া গিয়াছে উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে৷ এই অবস্থায় আসামে বিধানসভার নির্বাচনের কারণে এতবড় এক ঐতিহাসিক সূচনা পিছাইয়া যাইবে? নির্বাচনী আচরণ বিধি সেখানে বাঁধা হইয়া দাঁড়াইবে? এই নির্বাচনী আচরণ বিধি নিয়া নতুন করিয়া ভাবিতে হইবে৷ কারণ, দেশে এখন নির্বাচনের ছড়াছড়ি৷ সারা বছর কোন না কোনও নির্বাচন থাকে৷ আর এইসব নির্বাচনেও বিধি লাগিয়া যায়৷ তাই, নির্বাচন কমিশনকে ভোটের বিধি নিয়া নতুন করিয়া ভাবিতে হইবে৷