BRAKING NEWS

রাজ্যে দূর্ঘটনা রোধে আইন বদলের দাবী, পর্যালোচনা করে দেখার আশ্বাস মুখ্যমন্ত্রীর

ACCIDENTনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২২ মার্চ৷৷ রাজ্যে ক্রমবর্ধমান যান দুর্ঘটনা হ্রাসে আইন বদলের পক্ষে সওয়াল করলেন কংগ্রেস বিধায়ক রতন লাল নাথ৷ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন৷ মঙ্গলবার রাজ্য বিধানসভায় রেফারেন্স পিরিয়ডে বিধায়ক রতন লাল নাথের জনস্বার্থে আনা একটি নোটিশের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার রাজ্যে যান দুর্ঘটনায় এবং সে সম্পর্কিত হতাহতের সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে বলে জানান৷ কিন্তু বিধায়ক রতন লাল নাথ দাবি করে বলেন, যেখানে গত ৮১ দিনে ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে সেখানে যান দুর্ঘটনা এবং সে সম্পর্কিত হতাহতের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে মনে করাটা উচিত হবে না৷ তাঁর মতে, যত দিন পর্যন্ত আইন পরিবর্তন করা হবে না ততদিন যান দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে না৷ তিনি বলেন, আইপিসি, সিআরপিসি সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে৷ সেক্ষেত্রে ২৭৯/৩৩৮ সিআরপিসি সংশোধন করলে যান চালকরা দুর্ঘটনার পর সহজেই জামিন পাবেন না৷ অধিকতর ক্ষেত্রে যান দুর্ঘটনার পর যান চালকরা সহজেই জামিন পেয়ে যান৷ শ্রীনাথের এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী সহমত পোষণ করে বলেন, আইন সংশোধন করা যায় কিনা তা পর্যালোচনা করে দেখতে হবে৷ যান চালকদের সতর্ক করার ক্ষেত্রে আইন সংশোধনের মাধ্যমে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে সেটা সম্ভব বলে মেনে নেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং৷ তবে, এর আগেও এবিষয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছে৷ তাতে বেশ কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা উঠে এসেছে৷
এদিন, মুখ্যমন্ত্রী বিধায়ক শ্রীনাথের নোটিশের জবাব দিতে গিয়ে বলেন, রাজ্যে যান দুর্ঘটনা এবং সেই সম্পর্কিত হতাহতের সংখ্যা ক্রমহ্রাসমান৷ ২০১৩ সালের তুলনায় ২০১৪ সালে যান দুর্ঘটনার সংখ্যা ১২৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং যান দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা যথাক্রমে ১৬৮ এবং ৪১ শতাংশ কমেছে৷ অনুরূপভাবে ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালের যান দুর্ঘটনার সংখ্যা ৯৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং এগুলিতে নিহতের সংখ্যা ১৫৯ শতাংশ এবং আহতের সংখ্যা ১৬৮ শতাংশ কমেছে৷ উল্লেখ্য, এই নোটিশটির বিষয়বস্তু ছিল রাজ্যে ক্রমবর্ধমান যান দুর্ঘটনা বৃদ্ধিরোধে রাজ্য সরকার কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থ্য গ্রহণ সম্পর্কে৷
মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়ের উপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, তুলনামূলক বিচারে যান দুর্ঘটনার সংখ্যা ক্রমে হ্রাস পেলেও যান দুর্ঘটনার সংখ্যা এবং সেইসব ঘটনায় আহত ও নিহতের সংখ্যা যথেষ্ট উদ্বেগজনক৷ যান দুর্ঘটনার সংখ্যা কমানোর জন্য পরিবহন দপ্তর এভং পুলিশ প্রশাসন উভয়ই বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে৷ রাজ্যে যানদুূর্ঘটনার জন্য মূলত যে সব বিষয়গুলিকে চিহ্ণিত করা হয়েছে সেগুলি হল অতিদ্রুত যান চালনা, দ্রুত এবং অসতর্ক যান চালনা, রাস্তায় অবস্থিত ব্লাইন্ড কার্ভ, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় যান চালনা, অসতর্কভাবে ওভারটেক করার প্রবণতা, অতিরিক্ত পণ্য পরিবহণ, অত্যাধিক বৃষ্টিপাত, যান-বাহন চালকদের ট্রাফিক বিধি ভঙ্গ করার প্রবণতা, যান বাহন চালকদের একাংশের যোগ্যতা ও দক্ষতার অভাব, বেআইনী ভাবে যান-বাহন পার্ক করা৷ পরিবহন দপ্তর যে সব ব্যবস্থা নিয়েছে তার উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মোটর ভেহিক্যাল এ্যাক্ট, ১৯৮৮ এর ধাার ৫৩ অনুযায়ী ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষে ৯ জন এবং ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে ৭২ জন যানমালিকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, মোটর ভেহিক্যাল এ্যাক্ট, ১৯৮৮ এর ধারা ১৯ (ডি) অনুযায়ী ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষে ২০ জন এবং ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে ৫৬ জন যানচলকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, দ্রুতগতির যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন ইস্যু করা হয়েছে, যান দুর্ঘটনা রোধের জন্য বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের হাতে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যানদুর্ঘটনা রোধে জনসচেতনতা মূলক কর্মসূচীর অঙ্গ হিসাবে প্রতি বছর জানুযায়ীর প্রথম সপ্তাহকে পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ হিসাবে পালন করা হয়৷ স্বরাষ্ট্র দপ্তরের গৃহীত ব্যবস্থাদি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রয়াস উদ্যোগের মাধ্যমে যানবাদন ব্যবহাকারী, যানবাহন চালক এবং সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, সুকলছাত্র, যানবাহনের মালিক, চালক এবং অন্যান্যদেরকেও সচেতন করার জন্য বিশষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ এবং দ্রুতগতির যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে৷ দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকাগুলি চিহ্ণিত করে সেখানে ট্রাফিক পুলিশ বা থানা পুলিশকর্মী নিয়োজিত করে যান বাহন নিয়ন্ত্রিত করা হচ্ছে৷ আগরতলা শহরে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রোড ডিভাইডার ব্যবহার করে দুর্ঘটনা হ্রাস করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ অতি দ্রুতগামী যানবাহনকে চিহ্ণিত করার জন্য বিভিন্ন স্থানে স্পিড রাডার গান ব্যবহার করে সেইসব যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে৷ প্রতিটি জেলার ট্রাফিক ইউনিটকে শক্তিশালী করা হয়েছে৷ চিহ্ণিত স্থানে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রনের জন্য স্পিড ব্যরিয়ার গঠন করা হয়েছে৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফুটপাথ নির্মাণ এবং আগরতলা শহরের কিছু জাগয়া ফ্লাই ওভার নির্মাণের কাজ চলছে৷ রাস্তা পারাপারের জন্য জেব্রা ক্রসিং দেওয়া হয়েছে৷ পরিবহন দপ্তরের সহযোগিতায় মাঝে মাঝেই বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে যানবাহনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পরীক্ষা করা হচ্ছে৷ আগরতলা শহরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পর্যায়ক্রমে ইলেক্টনিক ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা প্রবর্তন করার চিন্তা রয়েছে৷ ট্রাফিক দপ্তর শক্তিশালী ও কার্যকরী করার জন্য ইতিমধ্যেই দপ্তরের নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে৷ আগরতলা শহরে বর্তমানে দুই পর্যায়ে সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশ যাননিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করে থাকে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে রাজ্যে যানদুর্ঘটনার সংখ্যা হ্রাস করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ এতে কিছু অগ্রগতি রয়েছে৷ কিন্তু আত্মসন্তুষ্টির সুযোগ নেই৷ সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে যাতে দ্রুত আরোও অগ্রগতি ঘটানো যায়৷ বিবেচনায় এটাও রাখতে হবে যে জনসংখ্যা, যানবাহনের সংখ্যা, ব্যবসা-বাণিজ্য, মানুষের চলাচল ও জীবনযাত্রার গতি বাড়ছে৷ স্বভাবতই এই সকল বিষয়ের প্রতি নজর রেখেই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *