হাজারো চেষ্টা করিয়াও কুম্ভকর্ণের নিদ্রা ভঙ্গ করা গেল না৷ আসামের গগৈ সরকার যে কুম্ভকর্ণের চাইতেও ভয়ংকর তাহা বার বার প্রমাণিত হইয়াছে৷ একটি গণনির্বাচিত সরকার এত দায়িত্বহীন ও কলংকিত হইতে পারে ভাবা যায় না৷ আবারও যদি এই গগৈ সরকারই ক্ষমতায় আসিয়া যায় তাহা হইবে গোটা আসামের জন্য দুর্ভাগ্যের৷ তবে, এইবারের নির্বাচনে গগৈর দল কংগ্রেস বড় বেশী সুবিধাজনক অবস্থায় আছে বলিয়া মনে হয় না৷ গগৈ সরকারের বিমাতৃসুলভ
আচরণের ঘটনায় বরাাক উপত্যকা নহে, ত্রিপুরার সীমান্ত সংলগ্ণ আসাম এলাকায় জাতীয় সড়কের বেহাল অবস্থা চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়া দিল একটি গণতান্ত্রিক সরকারের বৈষম্য কতবেশী নগ্ণ হইতে পারে৷ এই ভয়ংকর পরিস্থিতি নিরসনে গত কয়েক বছর যাবৎই চিৎকার চলিতেছে৷ ওই অঞ্চলের, অর্থাৎ পাথারকান্দি হইতে শুরু করিয়া বদরপুর পর্য্যন্ত জাতীয় সড়ক তো যান চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত৷ বদরপুরে বরাকের উপর গ্যামন সেতুটি তো একেবারে জীর্ণ দশায়৷ প্রতিদিন শত শত যানবাহন এই সেতু পারাপার করিতেছে৷ সেতুটির পরিস্থিতি এমনই যে যেকোনও সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটিতে পারে৷ এই সেতু মেরামতি ও বদরপুর হইতে চুড়াইবাড়ি আসাম সীমান্ত পর্য্যন্ত জাতীয় সড়ক সংস্কার ও মেরামতি জোর গতিতে করা হইতেছে না৷ আসামের লোয়ারপোয়ায় জাতীয় সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে সবচাইতে বেশী দূর্ভোগের শিকার হয় ত্রিপুরা৷ বহির্রাজ্য হইতে পণ্য আমদানীর এখনও প্রধান মাধ্যমই হইতেছে জাতীয় সড়ক৷ বর্ষা আসিলেই আবার লোয়ারপোয়া বিপর্য্যস্ত হইবে৷ যান চলাচলের অনুপযোগী হইয়া পড়িবে ত্রিপুরা আবার গভীরতর সমস্যায় আক্রান্ত হইবে৷
শত চিৎকার করিয়া আসামের কংগ্রেস সরকারের ঘুম ভাঙ্গানো যায় নাই৷ কিছুদিন পূর্বে একটি ‘কার র্যালির’ অভিযাত্রীরা এই সড়ক পথে ত্রিপুরা সফরে আসিয়া বাংলাদেশ হইয়া দিল্লীতে পৌঁছিয়াছিলেন৷ তাঁহারা এই বেহাল জাতীয় সড়কের ঘটনা সম্পর্কে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং তাহাদের এক মুখপাত্র কেন্দ্রীয় মহাসড়ক মন্ত্রী নীতিন গডকড়ির কাছে এই বিপর্য্যস্ত অবস্থার কথা তুলিয়া ধরিবেন বলিয়া ত্রিপুরায় কথা দিয়া গিয়াছিলেন৷ ত্রিপুরা সরকারও এই বিষয়ে কেন্দ্রকে হস্তক্ষেপ করিতে বার বার অনুরোধ করিয়াছেন৷ কিন্তু না, কাজ যদিও চলিতেছে খুব ঢিমেতালে৷ জরুরী ভিত্তিতে দিন রাত এক সঙ্গে বেশী শ্রমিক, বেশী মেশিন ইত্যাদি কাজে লাগাইয়া এই সড়ক মেরামতিই যেখানে কাম্য সেখানে নমঃ নমঃ করিয়া ছেলে ভুলানো কারবারই তো চলিতেছে৷ ত্রিপুরার রাজ্যপাল তথাগত রায় এই বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়া লোয়ারপোয়ার জাতীয় সড়কের অবস্থা দেখিতে সফর করিবেন বলিয়া সিদ্ধান্ত নেওয়ায় রাজ্যবাসী নিঃসন্দেহে আশ্বস্ত হইবেন৷ এবং রাজ্যপালের ভূমিকাকে সাধুবাদ জানাইবেন৷ উদ্বোধন, ফিতা কাটা বা মঞ্চ আলোকিত করা ছাড়াও যে রাজ্যপাল অনেক কাজ করিতে পারেন৷ লোয়ারপোয়ার বিপর্য্যস্ত অবস্থার নিরসনে রাজ্য সরকারের আবেদন নিবেদনেও যখন তেমন কাজ হইল না তখন বিশ্বাস করা যাইতে পারে রাজ্যপালের সফর অনেক বেশী সাফল্য আনিবে৷ তিনি সরাসরি কেন্দ্রীয় মহাসড়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নীতিন গডকড়ির হস্তক্ষেপ চাহিতে পারেন, রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এইভাবে রাজ্যপাল যদি অগ্রণী ভূমিকা নিতে পারেন তাহা হইলে রাজ্যের প্রভূত উপকারই হইবে৷ সাধারণ মানুষ তখন হয়তো আর বলিতে পারিবেন না যে রাজ্যপাল ঢাল তলোয়ারহীন নিধিরাম সরদার৷ অনেকেই দাবী তুলিয়াছেন রাজ্যপালের পদই তুলিয়া দেওয়া হউক৷ রাজ্যপালরা যদি রাজ্যের কল্যাণে নিজেদের ভূমিকা কাজে লাগাইতে পারেন, শুধু ফিতা কাটা আর উদ্বোধনে নিজেকে আটকাইয়া না রাখেন তাহা হইলে রাজ্যপাল পদের সার্থকতা জনমনে রেখাপাত করিবে৷ আমরা বিশ্বাস করি, রাজ্যপাল লোয়ারপোয়া দর্শন করিয়া যথাবিহিত ব্যবস্থা নিয়া দূর্ভোগের হাত হইতে ত্রিপুরাকে বাঁচাইবেন৷ আর এজন্য রাজ্যপালকে রাজ্যবাসী ধন্য ধন্য না করিয়া পরিবেন না৷
2016-03-21

