গুয়াহাটি, ২০ মার্চ, (হি.স.) : রাজ্যের চতুর্দশ বিধানসভা নির্বাচনে প্রায় সব দলেই প্রার্থিত্বকেন্দ্রিক বিক্ষোভ যখন তুঙ্গে, তখন আগামীকাল ২১ তারিখ অনুষ্ঠেয় রাজ্যসভার দুটি আসনেও কংগ্রেস ও বিরোধী-সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয় সম্পর্কে ঘোর অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। সোজা কথায় বিধানসভা নির্বাচনের প্রার্থী তালিকার সঙ্গে জড়িত হয়ে গেছে রাজ্যসভার দুই আসনের জন্য ভোটের ভবিষ্যৎ। রাজ্যসভার এই দুই আসনে কে জয়ী হবেন তা এখন দলীয় টিকিট-বঞ্চিত বেশ কয়েকজন বিধায়কের ওপর নির্ভর করছে। কেননা, এইসব টিকিট-বঞ্চিতরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা নিজের নিজের দলের হুইপ অনুযায়ী দলীয় প্রার্থীদের ভোট দেবেন না। দুলিয়াজানের বিধায়ক তথা কংগ্রেস নেত্রী অমিয়া গগৈ এবার দলের টিকিট না-পেয়ে ইতিমধ্যে ওই কেন্দ্রে লড়তে নির্দল হিসেবে তাঁর মনোনয়ন পেশ করেছেন। দল সমর্থিত রাজ্যসভার দুই প্রার্থী রিপুন বরা ও রানি নরহকে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে তাঁর সাফ কথা, আমি কেন কংগ্রেস প্রার্থীকে ভোট দেব। আমি এখন নির্দলীয়, কোনও দল নেই আমার। এদিকে টিকিট-বঞ্চিত আরেক বিধায়ক শরৎ শইকিয়া বলেছেন, দলের কাছে যদি আমার ভোটের মূল্য থাকত তাহলে আমাকে নিশ্চয়ই টিকিট দেওয়া হত। তাই যেহেতু দল আমার ভোটকে মূল্যবান বলে মনে করেনি তাই আমাকেও আমার ভোট ভেবেচিন্তে দিতে হবে। এদিকে বিজেপি-র দুই বিধায়ক মনোরঞ্জন দাস ও যাদব ডেকাও দলীয় টিকিট পাননি। ক্ষুব্ধ মনোরঞ্জনবাবুও দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধাচরণ করে পাটাসারকুচিতে বিধানসভা নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়বেন বলে জানিয়েছেন। তাই তিনিও রাজ্যসভার ভোটে দলের হুইপ মানবেন না। অবশ্য বিজেপি-র আরেক টিকিট-বঞ্চিত বিধায়ক যাদব ডেকা জানান, তাঁকে টিকিট না-দিলেও দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি যাবেন না। এদিকে বদরুদ্দিন আজমলের এআইইউডিএফও তাঁদের পাঁচ বিধায়ককে টিকিট দেয়নি। এঁরা বিলাসীপাড়া (পূর্ব)-র গুলআখতারা বেগম, জলেশ্বরের মইনুদ্দিন আহমেদ, গোয়ালপাড়া (পূর্ব)-র মনোয়ার হুসেন, ধুবড়ির জাহানুদ্দিন এবং রূপহীহাটের মজিবুর রহমান। দলের টিকিট না-পেয়ে তাঁরাও রাজ্যসভার ভোটে দলের নির্দেশ মানবেন বলে নিশ্চয়তা নেই। এই পাঁচ বিধায়কের কৌশলী বক্তব্যেই তা অনুমান হচ্ছে। তাঁরা বলেছেন, আমরা ১৮ জন। আমাদের ভোট দলের সম্পদ। আমরা ভালো কাজ করলেও দলের সুনাম হয় না। গত পাঁচ বছর নিষ্ঠা সহকারে কাজ করেও এবার টিকিট থেকে বঞ্চিত হলাম। তাই আমরা আমাদের ভোট নিজের বিচার-বুদ্ধিতে যাকে ইচ্ছে তাকেই দেব। অগপও তাদের দুই বিধায়ক মুকুন্দরাম চৌধুরী ও প্রবীণ হাজরিকাকে দলীয় টিকিট দেয়নি। রাজ্যসভা ভোটে তাঁদের অবস্থান কী হবে তা অবশ্য এখনও স্পষ্ট হয়নি। এককথায়, সব দিক থেকে বিচার করলে রাজ্যসভার ভোটযুদ্ধ এবার বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, অসমে রাজ্যসভার দুটি শূন্য আসনে ভোট হবে আগামীকাল ২১ মার্চ। এই দুই আসনে কংগ্রেসের দুই প্রার্থী রিপুন বরা ও রানি নরহ তাঁদের মনোনয়ন জমা করেছেন। তাঁদের বিপরীতে বিরোধীদের সমর্থনে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মহাবীর জৈন। ১২৬ আসনের বিধানসভায় ১২ জন বিধায়কের পদ কেড়ে নেওয়ায় বর্তমানে বিধায়কের সংখ্যা ১১৪। তাই প্রথম প্রার্থীর জয়লাভের জন্য কম করেও ৩৯ জন বিধায়কের সমর্থন প্রয়োজন। দ্বিতীয় প্রার্থীর ক্ষেত্রে যিনি বেশি ভোট পাবেন তিনিই জয়ী হবেন। গণ্ডগোল লেগেছে এখানেই। মনে করা হচ্ছে, কংগ্রেসের প্রথম পছন্দের প্রার্থী রিপুন বরা হেসে-খেলেই বিজয়ী হয়ে যাবেন। দ্বিতীয় পছন্দের রানি নরহকে নিয়েই মাথাব্যথা কংগ্রেসের। জানা গেছে, গত দুদিন ধরে রানি নরহ তাঁকে প্রথম পছন্দের প্রার্থী করতে মুখ্যমন্ত্রীকে বেজায় চাপ দিচ্ছেন।-