নিজস্ব প্রতিনিধি, অমরপুর, ১৭ মার্চ৷৷ মডেল রাজ্যের দাবিদাররা রাজ্যে সবুজ বিপ্লবের গল্প শুনিয়ে থাকে৷ কিন্তু রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকা সবুজ বিপ্লবের নগ্ণচিত্র দেখতে পাওয়া যায়৷ প্রয়োজনীয় সেচের অভাবে রাজ্যের গ্রাম পাহাড়ের একটা বিরাট অংশের কৃষিজমি পতিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে৷ যার ফলে কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল পরিবারগুলি হতাশায় দিন কাটাতে হচ্ছে৷ প্রশাসনিক আধিকারিকরা সব কিছু জেনে বুঝেও কোনো এক অজ্ঞাত কারণে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে আসছে৷
একমাত্র জল সেচের অভাবে করবুক মহকুমার পশ্চিম একছড়ি ভিলেজ কমিটির বিরাট অংশের জমিতে কৃষিকাজ মুখ থুবরে পড়ে আছে৷ ওই এলাকার বেশিরভাগ বসবাসকারীরা প্রধানত কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল থাকলেও সেচের অভাবে শুখা মরশুমে কৃষকরা চাষাবাদ করতে পারেন না৷ কৃষকদের বর্ষার উপর নির্ভর করে থাকতে হয়৷ এলাকায় জমি থাকলেও বরো ফসল রোপন ক রতে পারে না চাষিরা৷ যার ফলে কৃষকদের বছরের একটা সময় আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হতে হচ্ছে৷ বৃষ্টির জলের ফলে বছরে একবার ফসল ফলানো সম্ভব হয়৷ যার থেকে উৎপাদিত সামগ্রীর অর্থ দিয়ে পুরো বছর বহু কষ্টে কৃষকরা তাদের সংসার প্রতিপালন করে৷ কৃষকদের অভিযোগ জমিতে সেচের ব্যবস্থা থাকলে তারা বছরে দুইবার ফসল ফলাতে পারত৷ বর্ষা মরশুমে ধান ও শুখা মরশুমে বিভিন্ন শাক সবজির উৎপাদন করা সম্ভব হত৷ এতে করে কৃষকদের আর্থিক সংস্থান হত এবং বাজারে শাক সবজির উর্দ্ধমূল্য কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকত৷ চাষীদের অভিযোগ প্রশাসনিক আধিকারিকদের থেকে শুরু করে শাসক দলীয় নেতা বিধায়ক সকলের কাছে বহু বছর যাবৎ এলাকায় সেচ ব্যবস্থার দাবি করে আসলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না৷ প্রতিশ্রুতির গল্পশুনা গেলেও ভোট শেষ হতেই এলাকাবাসীর দুঃখ দুর্দশার কথা বেমালুম ভুলে যান কান্ডারিরা৷ শাসক দলের গণসংগঠন সারা ভারত কৃষক সভারনেতারা নিজেদের কৃষক দরদি বলে দাবি করলেও কৃষকদের সমস্যা সমাধানে তাদের কোন ভূমিকা নেই৷ যার ফলে পশ্চিম একছড়ি ভিলেজের কানির পর কানি কৃষি জমি বর্তমান শুখা মরশুমে খালি পড়ে আছে৷
এদিকে, পশ্চিম একছড়ি ভিলেজের যোগেন্দ্র পাড়ার একাংশ চাষী নিজেদের উদ্যোগে সবজি চাষ করতে গিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলছে৷ কারণ জমিতে সরকারি সেচের ব্যবস্থা না থাকায় কতিপয় চাষী নিজেরাই দমকল ভাড়া নিয়ে পুকুর কিংবা নদী থেকে জল সংগ্রহ করে বহু কষ্টে সবজি চাষ করছে৷ এতে করে সবজি উৎপাদনে চাষীদের অধিক খরচ পড়ছে বলে অভিযোগ৷ আবার পশ্চিম একছড়ি ভিলেজের আশপাশে বড় কোন বাজার না থাকায় চাষিরা উৎপাদিত সবজির ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না৷ যার ফলে চাষিদের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে৷ শুধু পশ্চিম একছড়ি না করবুক মহকুমার প্রায় প্রতিটি ভিলেজ সেচ ব্যবস্থার বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে৷ অভিযোগ কৃষি ও সেচ দপ্তরকে আলাদা করার ফলেসমস্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে৷ একে অন্যের উপর দোষ চাপাতে ব্যস্ত৷ এদিকে, করবুক মহকুমা হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়ার বহু বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও করবুকে সেচ দপ্তরের কোন আধিকারিকের কার্যালয় আজ পর্যন্ত গড়ে উঠেনি৷ যার ফলে মহকুমার কৃষকরা হাতের নাগালে সেচ দপ্তরকে পাচ্ছে না৷ এমতাবস্থায় সবুজ বিপ্লবের স্বপ্ণকে বাস্তবায়িত করতে সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারকে কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে বলে মনে করছেন চাষীরা৷