BRAKING NEWS

সততার পরীক্ষা

scamএক সময়ের অগ্ণিকন্যা এখন স্রেফ ক্ষমতার দম্ভে শুধু দৌড় আর দৌড় চালাইয়াছেন৷ পিছনে তাকাইবার যেন সময় নাই৷ দলের সর্বময় কর্ত্রী৷ তাঁহার সিদ্ধান্তই দলে শেষ কথা৷ এমন একক ক্ষমতার অধিকারী আর কয়জন জননেত্রীকে পাওয়া যাইবে সন্দেহ আছে৷ সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন সাঁড়াশী আক্রমণে যেন বন্দীদশায়৷ তাঁহার ভয়ে বাঘেমোষে একঘাটে জল পান করে পশ্চিমবঙ্গে৷ তৃণমূল হঠাইতে সব দল এককাট্টা৷ এত সাধারণ জীবনের অধিকারী হইয়াও তাঁহার দল বা দলের নেতামন্ত্রীদের নিষ্কলুষ রাখিতে পারিলেন না৷ সারদা কেলেংকারীতে নিজের মন্ত্রিসভার সদস্য দিনের পর দিন কারাগারে কাটাইতেছেন৷ এই কেলেংকারীর ঘটনায় তাঁহার বিরুদ্ধে আঙুল উঠিয়াছে৷ এতসব ঘটনা মোকাবিলা করিয়া দৃঢ় মানসিক বল বুকে পুষিয়া, যেখানে এত এত আক্রমণের সামনে মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতেছেন, যখন সব দল এককাট্টা হইয়া তৃণমূল কংগ্রেসকে আটকাইতে নাওয়া খাওয়া ভুলিয়া গিয়াছেন, সেখানে, তখনও তিনি প্রাণবন্ত, প্রতিজ্ঞায় ভাস্বর৷ কিন্তু, বোধহয় বিধিবাম৷ ঠিক নির্বাচনের প্রাক লগ্ণে নারদ স্ট্রিং অপারেশন রিপোর্ট প্রকাশ করিয়া মমতাকে আরেক বিড়ম্বনায় ফেলিয়া দিল৷ নারদ এজেন্সি ডট কম নামে একটি সংস্থার স্টিং অপারেশনে উঠিয়া আসিয়াছে তৃণমূল কংগ্রেসের সাতজন সাংসদ, কয়েকজন মন্ত্রী, মেয়র, বিধায়কের লাখ লাখ টাকা ঘুষ নিবার চিত্র ও কথোপকথন৷ এই ঘটনায়, খুব স্বাভাবিক ভাবেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁহার দল ভোটের মুখে বড়সর ধাক্কার মুখেই পড়িয়া গেল৷
এই স্টিং অপারেশনের মাধ্যমে যে চাঞ্চল্যকর কেলেংকারীর ঘটনা উঠিয়া আসিয়াছে, লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ নেওয়া ও কথোপকথন দেখানো হইয়াছে, তাহা যদি সত্যি হয় তাহা হইলে মমতার সামনে কঠিন প্রশ্ণ আসিয়া দাঁড়াইবে৷ তহলেকার কেলেংকারীর রিপোর্টের পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা হইতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পদত্যাগ করিয়াছিলেন৷ খুব স্বাভাবিক ভাবেই, এই অভিযোগের বা ঘুষ কান্ডের বিষয়ে তিনি কি পদত্যাগ করিবেন? প্রশ্ণ উঠিয়াছে, এই ঘুষকান্ডের রিপোর্ট ঠিক বিধানসভা ভোটের মুখে কেন ফাঁস করা হইল? ইহার পিছনে যে বড়সর ষড়যন্ত্র নাই তাহাই বা জোর দিয়া বলা যাইবে কি করিয়া? তাহা ছাড়াও উপযুক্ত ও উচ্চ পর্য্যায়ের তদন্ত ছাড়া এই রিপোর্ট সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়াও সংগত হইবে না৷ কারণ, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সুযোগ নিয়া এমন ছবি তৈরী করাও খুব কঠিন কাজ নহে৷ সে যাহাই হউক, উচ্চ পর্য্যায়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করিয়া আগে স্টিং অপারেশনের রিপোর্টর সত্যতা প্রমাণিত হইবার পরই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া যাইতে পারে৷
একথা অনেক বেশী সত্যি, যে দল ক্ষমতায় থাকে সেই দলের মন্ত্রী ও ক্ষমতাশালীরা দুর্নীতিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত থাকেন৷ এই দুর্নীতি শুধু তৃণমূল কংগ্রেসের আমলেই নহে৷ পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের শাসনে দুর্নীতি কেলেংকারীর বহু অভিযোগ সম্পর্কে কী ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হইয়াছে? এই ত্রিপুরায় এত স্বচ্ছতার মাঝেও তো কলংকের কালিমা লাগিতেছে৷ একের পর এক দুর্নীতির ঘটনা আছে৷ ব্লকে ব্লকে কোটি কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ আছে৷ অন্যান্য রাজ্যে তো আরও মারাত্মক ঘটনা৷ মন্ত্রীরা স্বয়ং টাকা ছাড়া কথা বলেন না৷ সেখানে তো পুকুর চুরি৷ আসামের অবস্থা কি৷ সেখানে তো দুর্নীতির পাহাড়৷ জনগণের টাকা আত্মসাতের ঘটনা কোথায় না ঘটিতেছে৷ উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রায় সব রাজ্যই তো দুর্নীতির সেরার শিরোপা পাইতে পারে৷ সুতরাং যাহারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে গলা ফাটাইয়া চলেন তাহারা কিন্তু নিজেদের ছিদ্র দেখেন না৷ ইহাই রাজনীতিতে বড় অভিশাপ৷ ব্যাক্তি মমতা ব্যানার্জী হয়তো একপয়সাও ঘুষ নেন না৷ কিন্তু তাঁহার চেলা চামুন্ডারা তো সব সাবার করিয়া দিতেছে৷ দলের ইমেজ মাটিতে মিশাইয়া দিতেছে৷ তৃণমূল মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়কদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয় তাহা হইলে কঠোর পদক্ষেপ নিতেই হইবে৷ রাজনীতিতে তাঁহার সততাই একমাত্র মূলধন৷ তাহা রক্ষা করিতে কঠোর সিদ্ধান্তই মমতাকে স্বমহিমায় উজ্জ্বল করিতে পারে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *