BRAKING NEWS

দক্ষতা ও সংরক্ষণ

Skillশুক্রবার আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে দক্ষতা বিকাশের কর্মশালায় কাজের নীরিখেই বিচার করিবার চিন্তাধারাই প্রাধান্য পাইয়াছে৷ জাতপাতের ভিত্তিতে মূল্যায়ন না করিবার যে আওয়াজ দক্ষতা বিকাশ শীর্ষক কর্মশালায় উঠিয়াছে তাহাকে বর্তমান কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ও বিভিন্ন ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক দলগুলি যে এক কথায় নাকচ করিয়া দিবেন সে বিষয়ে বোধহয় সন্দেহ নাই৷ আগরতলায় প্রজ্ঞাভবনে ‘দক্ষতা বিকাশ’ শীর্ষক কর্মশালায় দেশের প্রখ্যাত হেয়ার ড্রেসার জাভেদ হাবিব হইতে শুরু করিয়া রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের মন্ত্রী তপন চক্রবর্তী দক্ষতার নীরিখে মূল্যায়ণের উপর জোর দেন৷ আগরতলায় দক্ষতা বিকাশ নতুন ডাইরেক্টরেট অফিসের উদ্বোধন হইয়া গিয়াছে৷ এদিন ইহারই অঙ্গ হিসাবে দক্ষতা বিকাশের প্রশিক্ষণের জন্য বাছাইকৃতদের নিয়া কর্মশালা করা হয়৷ প্রখ্যাত হেয়ার ড্রেসার জাভেদ হাবিব এদিন নিজের জীবনের অভিজ্ঞতারও বর্ণনা করিয়াছেন এই কর্মশালায়৷ তিনি বলিয়াছেন, কেশ বিন্যাস মানুষের সঙ্গে সকাল হইতে রাত পর্য্যন্ত জুড়িয়া রহিয়াছে৷ অথচ ক্ষৌরকারদের অনেকেই নির্দিষ্ট জাতির বলিয়া হেয় করিয়া থাকেন৷
বিভিন্ন উপমা ঘটনা তুলিয়া ধরিয়া বিভিন্ন বক্তাই দক্ষতা বিকাশের ক্ষেত্রে আরও অগ্রণী হইবার আওয়াজ তুলিয়াছেন৷ প্রশ্ণ উঠিয়াছে, আমাদের সংবিধান, সরকারী নীতি নিয়ম কি দক্ষতাকে মূল্য দেয়? দক্ষতা বৃদ্ধির প্রধান অন্তরায় তো জাতপাতের সংরক্ষণ৷ সমাজের পিছাইয়া পড়া অংশকে অন্যভাবে আগাইয়া নিবার সাহায্য দেওয়া যেখানে সঙ্গত সেখানে জাতপাত ভিত্তিক সংরক্ষণ প্রথার সঙ্গে দক্ষতার মূল্যায়ণের যুক্তিকে কি খাটো করিতেছে না? কিংবা বলা যায়, এই বক্তব্য কি পরস্পর বিরোধী নহে? পিছাইয়া পড়া অংশের মানুষকে সমাজের মূল স্রোতে তুলিয়া আনা, তাহাদের উন্নতির ক্ষেত্রে সহায়তার জন্যই মাত্র দশ বছরের জন্য ‘সংরক্ষণ’ চালু করা হইয়াছিল৷ সরকারী চাকুরী দেওয়া ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে এই সংরক্ষণ নিয়া জোর প্রশ্ণ উঠিয়াছে৷ অনেক এসসি ও এসটি সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন সরকারী উচ্চপদে আসীন আছেন৷ তাঁহাদের মধ্য বিত্তশালীদের সংখ্যাও কম নহে৷ অথচ মেধাবী হওয়া সত্বেও দরিদ্র অংশের বা গরীব পরিবারের ছেলেমেয়েরা সরকারের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা হইতে বঞ্চিত থাকিতেছে৷ অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার ভিত্তিতে সংরক্ষণই যুক্তি সম্মত ও বিজ্ঞান ভিত্তিক৷ সেই পথে কোনও সরকার বা রাজনৈতিক দল হাটিতে নারাজ৷ কারণ, ভোটের রাজনীতি৷
সমাজের পিছাইয়া পড়া অংশের মানুষের ভোট টানিতে সব দলই জাতপাত ভিত্তিক সংরক্ষণের পক্ষে সওয়াল করিতেছেন৷ আজ যখন দক্ষতা বিকাশের কথা উঠিতেছে তখন ইহা খুব প্রাসঙ্গিক যে, মেধা ও দক্ষতা সত্বেও স্রেফ ‘যুক্তিহীন’ সংরক্ষণের কারণে চাকুরী ও পদোন্নতি পাইয়া যাইবে? আজ সরকারী অফিসগুলির অবস্থা কি ভয়াবহ৷ দক্ষ কাজের লোক নাই৷ জোড়াতালি দিয়া দপ্তর চলে৷ সংরক্ষণের কারণে অদক্ষ ব্যাক্তি দক্ষ ব্যাক্তির ‘বস’ বনিয়া যাইতেছেন৷ শুধু দুঃখজনকই নয় ইহা চরম নীতিহীনতা৷ আজ সরকারী চাকুরী ইত্যাদির আশায় না থাকিয়া বেকারদের দক্ষতা বৃদ্ধির কথা বলা হইতেছে৷ যখন দক্ষতা বৃদ্ধির কথা বলা হইবে অন্যদিকে অদক্ষরা স্রেফ সংরক্ষণের জোরে সরকারী সুযোগ সুবিধা পাইয়া যাইবে? চরম অনৈতিক ঘটনা দিনের পর দিন চলিতে পারে না৷ আজ একের পর এক সংরক্ষণের ক্ষেত্র প্রসারিত হইতেছে৷ এসসি, এসটিরাই শুধু নহে সংরক্ষণের আওতায় আসিয়াছে ওবিসিরাও৷ এই সংরক্ষণ প্রথা বিলোপ না হওয়া পর্য্যন্ত দেশবাসীর সুবিচার করা যাইবে না৷ আজ এজন্যই অসাম্যের, বঞ্চনার ঘটনায় বর্ণাহিন্দুদের মধ্যেও ক্ষোভের আগুন জ্বলিতেছে৷ আরএসএস বা বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বক্তব্যকে সর্বাংশে উড়াইয়া দিবার মতো নহে৷ যদি এই অনৈতিক সংরক্ষণ স্রেফ ভোটের রাজনীতির কারণে চলিতেই থাকে তাহা হইলে আগামী দিনে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ভয়াল হইতে পারে৷ এই সম্ভাবনাকে খাটো করিয়া দেখিলে ভবিষ্যতে দেশবাসীকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়িতে হইবে৷ দক্ষতা বিকাশের কর্মশালায় জাতপাতের ভিত্তিতে মূল্যায়ন না করার যে আওয়াজ উঠিয়াছে তাহার সুর একটাই সংরক্ষণ প্রথা বাতিল কর৷ সরকারী অনুষ্ঠানেই পরোক্ষ জাতপাতের বিরুদ্ধে জোর দাবী, আলোচনা চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়া দিল জাতপারে ভ্রান্ত রাজনীতির খেসারত একদিন রাজনৈতিক দলগুলিকে দিতেই হইবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *