BRAKING NEWS

পুলিশের বিরুদ্ধে জুলুমের অভিযোগ এনে সিট্যুর মোটর শ্রমিকদের প্রকাশ্যে গুন্ডামী

MOTORনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১ মার্চ৷৷ পুলিশের বিরুদ্ধে জুলুমের অভিযোগ এনে রাজ্যের চারটি জেলায় সিট্যুর সমর্থিকত মোটার শ্রমিকরা একপ্রকার গুন্ডামী করল মঙ্গলবার৷ গোমতী, পশ্চিম, দক্ষিণ ও সিপাহীজলা জেলার বিভিন্ন স্থানে চালকরা যান ধর্মঘট করেছে৷ জাতীয় সড়কের উপর অবরোধ আন্দোলন গড়ে তুলে৷ যানবাহন আটক করে রাখে৷ এমনিতে ধর্মঘটের ফলে পরিবহণ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে তার উপর ধর্মঘটিরা অন্যান্য প্রাইভেট গাড়ি ও ছোট গাড়ি চলাচলেও বাধা সৃষ্ট করে৷ তাতে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হয়ে উঠে৷ রাজধানী আগরতলা শহরের বটতলায় রীতিমতো ধুন্ধুমার কান্ড ঘটে যায়৷ মোটর শ্রমিকরা ছোট গাড়ির চালকদের যাত্রী পরিবহণে বাধা দেয়৷ এনিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়৷ কয়েকজন যাত্রী ও চালককেও মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ৷ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ ও টিএসআর বাহিনী৷ পুলিশের সাথেও ধস্তাধস্তি হয়েছে৷ কিন্তু যান চালকদের বিরুদ্ধে পুলিশের এদিন নরম মত পোষণ করার ঘটনাকে ঘিরে জনমনে নানা প্রশ্ণ উঠেছে৷ অতীতে রাজধানীবাসী দেখেছেন সিট্যুর মোটর শ্রমিকরা কিভাবে পুলিশের উপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছেন৷ প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুলিশ শাসক দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন সিট্যুর গুন্ডামীর বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ করছে না৷
আইনের নামে যান শ্রমিকরা পুলিশি হয়রানির শিকার৷ এই অভিযোগে সৃষ্ট বিক্ষোভের আগুন ছুড়িয়ে পরলো আগরতলার বাইরেত্ত৷ মঙ্গলবার যান শ্রমিকদের কর্মবিরতী ও পথ অপরোধে প্রায় স্তব্ধ রইলো তিন তিনটি জেলা৷ প্রভাব পড়লো, সুকল, কলেজ অফিস আদালতের কাজকর্মেত্ত৷
আইনের নামে বিভিন্ন অজুহাতে পুলিশি হয়রানির শিকার ছোট যান বাহন শ্রমিকরা৷ মূলত এই অজুহাতে সোমবার অঘোষিত যান ধর্মঘট হয় আগরতলায়৷ নাগেরতলা মোটর স্ট্যান্ড থেকে দক্ষিম দিকে আসা গাড়ি চলাচল করেনি দীর্ঘক্ষন৷ মঙ্গলবার এই বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পরলো গোমতী, দক্ষীন, সিপাহী জলা সহ পশ্চিম জেলার একাংশে৷ খানে খানে অঘোষিত যান ধর্মঘট, পথ অবরোধ৷ সকাল থেকেই যাত্রী দুর্ভোগ, যদিও যান শ্রমীকদের দাবি ও আন্দোলনের যুক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ণ তুলছেন অনেকেই৷
শ্রমীকদের দাবি মানতে হলে উপেক্ষিত হবে আইন৷ যার ফলে মহা বিপাকে পরে যান প্রশাসনের কর্মকতা ও শ্রমীক নেতৃত্বরাও৷ সকাল থেকে শুরু হওয়া মেরাথন ধর্মঘট ও পথ অবরোধের প্রভাব পরে সুকল কলেজ অফিস আদালতেত্ত৷ রাস্তায় গাড়ি ঘোড়ার চলাচল না থাকায় মহা সমস্যায় পরে যায় ছাত্রছাত্রী সমেত সকলে৷ মাসের প্রথম দিনটিতেই সুকল, কলেজ, অফিস আদালত ব্যাঙ্ক৷ সব কিছুতেই কর্মচারিদের উপস্থিতিরজ্ঝর হার ছিল নগন্য৷ যারাই এসেছিলেন তাদের আসতে হয়েছে অনেক ঝুকি ঝামেলা সহ্য করে৷ দুপুর প্রায় দুটোর পর সর্বত্রই রাস্তায় নামেন শ্রমিক নেতৃত্ব৷ তারা বুঝিয়ে সুঝিয়ে শ্রমিকদের গাড়ি চালনার ক্ষেত্রে উদ্যোগী হলে কিছুটা স্বাভাবিক হয় পরিস্থিতি৷ প্রায় আড়াই টার নাগাদ কিছু কিছু গাড়ি রাস্তায় যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে শুরু করে৷ পুলিশী হয়রানির প্রতিবাদে মঙ্গলবারও গোমতী জেলায় যান চলাচল দীর্ঘক্ষণ বন্ধ রাখেন মোটর শ্রমিকরা৷ অবশেষে জেলা পুলিশ সুপার নমনীয় মনোভাব গ্রহণ করায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়৷ এদিকে, গোমতী জেলার উদয়পুরে মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনেও পুলিশী জুলুমের প্রতিবাদে যান চলাচল স্তব্ধ করেন দেন মোটর শ্রমিকরা৷ গত বেশ কিছুদিন ধরেই পুলিশ অতিরিক্ত যাত্রী ও পণ্য পরিবহণের অজুহাতে যান বাহন আটক করে বিভিন্ন কঠোর ধারায় মামলা গ্রহণ করে আসছে এবং মোটা অঙ্কের টাকা আর্থিক জরিমানা আদায় করে আসছে৷ তাতে মোটর শ্রমিকরা একদিকে যেমন হয়রানির শিকার হচ্ছেন৷ ঠিক তেমনি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন৷ উদ্ভুত পরিস্থিতিতে মোটর শ্রমিকরা যান চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন৷ সোমবার থেকেই বিভিন্ন সড়কপথে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়৷ মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনেও পুলিশী জুলুমের প্রতিবাদে মোটর শ্রমিকরা যান চলাচল বন্ধ রাখেন৷ তাতে যাত্রী দুর্ভেএাগ চরম আকার ধারণ করেছে৷ বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করতে পারছেন না৷ সমস্যা জটিল থেকে জটিলতর আকার ধারণ করতে শুরু করে৷
শেষ পর্যন্ত নরম মনোভাব পোষণ করে আরক্ষা প্রশাসন৷ গোমতী জেলার জেলা পুলিশ সুপার সরস্বতী আর বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় প্রস্তাব দেন৷ সে অনুযায়ী ত্রিপুরা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠকে বসেন৷ শ্রমিকদের পক্ষ থেকে সমস্যা পুলিশ সুপারের সামনে তুলে ধরা হয়৷ পুলিশ সুপার দাবিগুলির যৌক্তিকতা স্বীকার করেন৷ এখন থেকে যানবাহন আটক করে, হয়রানি করা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়৷ সে প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতেই মোটর শ্রমিকরা যান ধর্মঘট ,প্রত্যাহার করে নেন৷ শ্রমিকদের দাবিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল একই দিনে একই গাড়িকে একাধিকবার আটক করে চেকিং করা যাবে না৷ জরিমানা বাবদ অর্থ সঙ্গে সঙ্গেই নিতে হবে৷ কোন মামলা আদালতে পাঠানো যাবে না৷
বিশালগড়ে সড়ক অবরোধকে কেন্দ্র করে মতভেদের জেরে আক্রান্ত হলেন দুই শ্রমিক নেতা৷ মোটর শ্রমিকদের হাতেই শ্রমিক নেতা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় স্থানীয় জনগণ রীতিমত বিস্মিত৷ পুলিশ নির্বিকার৷
যানবাহনের চালকদের উপর পুলিশি জুলুমের প্রতিবাদে আজ বিশালগড়ে পথ অবারোধ করেন মোটর শ্রমিকরা৷ মোটর শ্রমিক নেতারা এসে মাতববরী করার চেষ্টা করা হলে শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে নেতাদের উপর আক্রমণ চালায়৷ তাতে দুই শ্রমিক নেতা জখম হয়৷ তারা হল সিআইটিইউর বিশালগড় বিভাগীয় সভাপতি নারায়ণ নাথ ভৌমিক ও বিশালগড় বক্সনগর রোডের ইউনিয়ন সম্পাদক মুকলেসুর রহমান৷ সকাল থেকে পথ অবরোধ চলতে থাকলেও পুলিশ অবরোধ স্থলে আসার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি৷ শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় এসডিপিও অরুণ কুমার সরকার, ডিএসপি মৃণালকান্তি ধর, ওসি কান্তিলাল বৈদ্য পুলিশ ও টিএসআর বাহিনী অবরোধস্থলে আসেন৷ অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশ আধিকারিকদের প্রায় আধঘন্টা বাকবিতন্ডা হয়৷ দুর্ঘটনাস্থলেই চালকদের ৭ বছরের জেল ও লাইসেন্স বাতিল করা হচ্ছে৷ এধরনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেবার দাবি জানিয়েছে মোটর শ্রমিকরা৷ যান চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রী সাধারণ, ছাত্রছাত্রী সহ সকল অংশের মানুষজনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে৷উল্লেখ্য, পুলিশী জুলুমের প্রতিবাদেই মোটর শ্রমিকরা আন্দোলনে সামিল হয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *