প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পাঁচ দেশের সফর শেষে ভারত ফিরেছেন

নয়াদিল্লি, ১০ জুলাই : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বৃহস্পতিবার ভারতে ফিরে এসেছেন, পাঁচটি দেশের সফর শেষ করার পর। তাঁর এই সফরের মধ্যে ছিল ঘানা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল এবং নামিবিয়া। প্রধানমন্ত্রী এই সফরটি ২ জুলাই থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত সম্পন্ন করেন, এবং তার সফরের একটি বড় অংশ ছিল রিও ডি জেনেইরো, ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ১৭তম ব্রিকস শিখর সম্মেলনে অংশগ্রহণ।

প্রধানমন্ত্রী মোদী এই সফরে ভারতের বৈশ্বিক কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন। সফরের সময়, তিনি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, এবং বিশেষভাবে গ্লোবাল সাউথে ভারতের উপস্থিতি আরও বৃদ্ধি করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তাঁর নেতৃত্বে ভারতের কূটনৈতিক কর্মসূচির বৃদ্ধি এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও একাধিক উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা গেছে। সফরের মধ্যে বেশ কিছু স্মারক চুক্তি এবং ঘোষণাও করা হয়েছে, যা ভারতের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করবে।

প্রধানমন্ত্রী মোদী আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল সফরের সময় বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব, বিনিয়োগের সুযোগ, কৃষি, প্রযুক্তি এবং প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়েও আলোচনা করেন। আর্জেন্টিনায়, তিনি আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রপতি জাভিয়ের মিইলি সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসেন, যেখানে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করার নানা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। ব্রাজিল সফরের সময়, প্রধানমন্ত্রী রিও ডি জেনেইরোতে অনুষ্ঠিত ১৭তম ব্রিকস শিখর সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন, যেখানে তিনি বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।

ঘানা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, এবং নামিবিয়ায় গ্লোবাল সাউথের প্রতি প্রতিশ্রুতি
প্রধানমন্ত্রী মোদী ঘানা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, এবং নামিবিয়ায় তার সফরের সময় গ্লোবাল সাউথের প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতি জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন। ঘানা সফরের সময়, প্রধানমন্ত্রী প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ৩০ বছরের বেশি সময় পর দেশটির রাজধানী আক্রা সফর করেন। তিনি ঘানার রাষ্ট্রপতি জন মহামার সঙ্গে বৈঠক করেন এবং ঘানার মানুষের জন্য আরও উন্নত অবকাঠামো, শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়ন পরিকল্পনার বিষয়ে আলোচনা করেন। এ সময়, তাকে ঘানার সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান, ‘অফিসার অফ দ্য অর্ডার অফ দ্য স্টার অফ ঘানা’ প্রদান করা হয়।

ত্রিনিদাদ ও টোবাগো সফরের সময়, প্রধানমন্ত্রী মোদী এই দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। প্রধানমন্ত্রী এই দেশের সর্বোচ্চ সম্মান, ‘অর্ডার অফ দ্য রিপাবলিক অফ ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো’ প্রাপ্ত হন, যা তাকে তার কূটনৈতিক দক্ষতা এবং ভারত-ত্রিনিদাদ ও টোবাগো সম্পর্কের উন্নয়ন বিষয়ে অসাধারণ অবদান রাখার জন্য প্রদান করা হয়।

নামিবিয়ায়, প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রথম ভারতীয় নেতা হিসেবে দেশটির সংসদে ভাষণ দেন। তাঁকে নামিবিয়া তার সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান, ‘অর্ডার অফ দ্য মোস্ট অ্যানসিয়েন্ট ওয়েলভিটচিয়া মিরাবিলিস’ প্রদান করে। তিনি এই সম্মান গ্রহণ করেন দেশটির রাষ্ট্রপতি নেটুম্বো নান্দি-নদৈতওয়ার কাছ থেকে।

প্রধানমন্ত্রী মোদী ব্রাজিল, নামিবিয়া এবং ত্রিনিদাদ ও টোবাগো থেকে তাদের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান লাভ করেছেন। ব্রাজিল তাকে ‘গ্র্যান্ড কলার অফ দ্য ন্যাশনাল অর্ডার অফ দ্য সাদার্ন ক্রস’, নামিবিয়া ‘অর্ডার অফ দ্য মোস্ট অ্যানসিয়েন্ট ওয়েলভিটচিয়া মিরাবিলিস’, এবং ত্রিনিদাদ ও টোবাগো তাকে ‘অর্ডার অফ দ্য রিপাবলিক অফ ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো’ সম্মান দিয়েছে।

এটি প্রধানমন্ত্রী মোদীর কর্মজীবনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা, কেননা মে ২০১৪ থেকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি ২৭টি আন্তর্জাতিক সম্মান অর্জন করেছেন। এই সম্মান ভারতীয় কূটনীতির শক্তি এবং বিশ্বে ভারতীয় নেতৃত্বের গুরুত্বের প্রতিফলন।

প্রধানমন্ত্রী মোদী ঘানা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, এবং নামিবিয়া পার্লামেন্টে ভাষণ দেন, যা ভারতের কূটনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তিনি একযোগে কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে বিদেশী সংসদে ১৭টি ভাষণ দেন, যেখানে আগের সকল কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী মিলিয়ে মোট ১৭টি ভাষণ দিয়েছেন (মনমোহন সিং – ৭, ইন্দিরা গান্ধী – ৪, জওহরলাল নেহরু – ৩, রাজীব গান্ধী – ২, পিভি নরসিংহ রাও – ১)।

প্রধানমন্ত্রী মোদীর পাঁচ দেশের সফর দেশের কূটনীতি, বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে সহযোগিতাকে আরও উন্নত করেছে। এই সফর ভারতকে আন্তর্জাতিক স্তরে আরও শক্তিশালী অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছে। নতুন বাণিজ্যিক সুযোগ, সহযোগিতার ক্ষেত্র এবং সম্পর্কের শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে ভারতের কূটনীতির পরিসর বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই সফরের মাধ্যমে ভারতের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আরও মজবুত হয়েছে এবং বিশ্বমঞ্চে ভারতের ভূমিকা আরও দৃঢ় হয়েছে।