এক কৃতি চিকিৎসকের মৃত্যুতে শোকের ছায়া

ধর্মনগর, ৩০ মার্চ :

এক প্রতিভাবান চিকিৎসকের অকাল মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ধর্মনগর ও আশপাশের অঞ্চলে। ডক্টর জামিরুল রহমান, যিনি জি আর রহমান নামে পরিচিত ছিলেন, তার মৃত্যুতে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ একইসঙ্গে শোক প্রকাশ করেছেন।

ধর্মনগর মহকুমার যুবরাজনগর বিধানসভার মঙ্গলখালী গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন জি আর রহমান। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন মেধাবী। গ্রামে হিন্দু-মুসলমান একসঙ্গে বসবাস করতেন এবং তাদের সাহায্যেই তিনি পড়াশোনায় এগিয়ে যেতে পেরেছিলেন। কঠোর পরিশ্রম করে তিনি চিকিৎসাশাস্ত্রে এমবিবিএস এবং পরবর্তীতে মেডিসিনে এমডি সম্পন্ন করেন। সরকারি চাকরিতে যোগ দিলেও পরবর্তীতে তা ছেড়ে ধর্মনগরে একটি ক্লিনিক স্থাপন করেন এবং মানবসেবায় নিজেকে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করেন।

তার চিকিৎসার খ্যাতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। জটিল রোগ নিরাময়ে তার সুনাম ছিল অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ের মানুষ তার কাছে চিকিৎসার জন্য আসতেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন তিনি। ভালো কবিতা লিখতেন, গানও গাইতে পারতেন। কিন্তু তার অন্তরে লুকিয়ে ছিল এক অব্যক্ত বেদনা, যা ধীরে ধীরে তাকে মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে।

মানসিক অবসাদই শেষ পর্যন্ত তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। চেন্নাইয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার মরদেহ যখন ধর্মনগরে আনা হয়, তখন শোকার্ত মানুষের ঢল নামে। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সবাই তাকে শেষ বিদায় জানাতে হাজির হন।

সাম্প্রতিক সময়ে কোনো ধর্মীয় গুরু বা রাজনৈতিক নেতার মৃত্যুতে এমন দৃশ্য দেখা যায়নি। দুই সম্প্রদায়ের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রিয় চিকিৎসকের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এই বিরল দৃশ্য চোখে জল এনে দিয়েছে সকলের।

ধর্মনগরের মানুষ আজও বিশ্বাস করেন, ডক্টর জি আর রহমান কেবল একজন চিকিৎসকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন মানবতার প্রতীক। তার অভাব কখনো পূরণ হওয়ার নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *