রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করার পরামর্শ সঠিক সময়ে নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশায় রাখল কমিশন

তালিকা থেকে ২৮ হাজারের বেশী ভূঁয়া ভোটার বাদ
নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৯ নভেম্বর৷৷ সঠিক সময়ে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কি না এনিয়ে রাজ্যবাসীকে ধোঁয়াশার মধ্যেই

বুধবার আগরতলায় সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ভারতের নির্বাচন কমিশনের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এ কে জ্যোতি (মাঝে)৷ সাথে রয়েছেন কমিশনের অন্যান্য আধিকারীকরা৷ ছবি নিজস্ব৷

রাখল ভারতের নির্বাচন কমিশন৷ রাজ্য সফরে এসে নির্বাচন কমিশনের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন৷ কমিশন রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা ও ভোটার তালিকার উপর গুরুত্ব দিয়েছে৷ রাজ্য অতিথিশালায় সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এ কে জ্যোতি জানিয়েছেন রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির জন্য পুলিশ প্রধানকে বলেছেন৷ পাশাপাশি ভোটার তালিকা নিয়ে তিনি জানান ইতিমধ্যে ২৮ হাজারের বেশী ভূঁয়া ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে৷
এদিকে, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন৷ কমিশন রাজ্যের সামগ্রিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও উন্নত করার জন্য পুলিশ মহানির্দেশককে নির্দেশ দিয়েছে৷ সে অনুযায়ী কমিশনকে আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে৷ দুদিনের রাজ্য সফর শেষে নির্বাচন কমিশনের পূর্ণাঙ্গ টিম আজ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়৷ মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এ কে জ্যোতি বলেন, রাজ্যের আইন -শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও উন্নত করার জন্য পুলিশ মহানির্দেশককে বলা হয়েছে৷ সে অনুযায়ী তিনি আশ্বাসও দিয়েছেন৷ ত্রিপুরায় সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ এবং সাংবাদিক হত্যার বিষয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং সাংবাদিক সহ সমস্ত ভোটার এবং জনগণের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশের কথাও তিনি উল্লেখ করেন৷ তিনি আরও বলেন, এটাই কমিশনের চূড়ান্ত সফর নয়৷ এর পর আবারও কমিশন সফরে আসবে এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবে৷ নির্বাচন পাঁচ বছরের মধ্যে নিয়মানুযায়ী করাতে হয়৷ কিন্তু সে জন্য উপযুক্ত পরিবেশ থাকা দরকার৷ জনগণ যাতে নির্ভয়ে বিনা বাধায় তাঁদের মতাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন তা সুনিশ্চিত করা হবে৷ তিনি উল্লেখ করেন, রাজ্য নির্বাচন দফতরকেও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উপযুক্ত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ ইতিমধ্যেই ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে৷ ভোটারদের যাতে অনৈতিক ভাবে কোনও রাজনৈতিক দল প্রভাবিত না করতে পারে তার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে, তিনি জানান৷
রাজ্যের ভোটার তালিকায় চলতি সংশোধন প্রক্রিয়ায় এখন পর্যন্ত ২৮ হাজারের বেশী নাম বাদ পড়েছে৷ সংশোধনী প্রক্রিয়ার জন্য একটি বিশেষ সফটওয়ার ব্যবহার করা হচ্ছে৷ রাজ্য সফর শেষে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এ কে জ্যোতি বলেন, ইতিমধ্যেই ২১ হাজার ভুয়ো ভোটারের নাম বাদ পড়েছে৷ সেই সঙ্গে সাত হাজার ৭৩ টি নাম এমন পাওয়া গেছে যা দুই জায়গায় রয়েছে৷ ফলে একস্থানে ভোটার রেখে বাকিটা বাদ দেওয়া হয়েছে৷ ইতিমধ্যেই ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়ে গেছে৷ তিনি বলেন, ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য একটি বিশেষ আইডি সফটওয়ার ব্যবহার করা হচ্ছে৷ ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজে নিযুক্তদের সহ সামগ্রিক ব্যবস্থা জিপিএস সিস্টেমের আওতায় আনা হয়েছে৷ ভারত – বাংলাদেশ সীমান্তে কড়া নজরদারি রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান জ্যোতি৷ মুখ্যনির্বাচন কমিশনার আরও জানিয়েছেন, রাজ্যের নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে নির্বাচন কমিশনের টিম পুনরায় রাজ্য সফরে আসবে৷ বর্তমানে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের জন্য প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে৷
সর্বত্রই এবার ই ভি এম-এর সঙ্গে ভি ভি প্যাট ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়ে শ্রী জ্যোতি বলেন, এখন থেকে সমস্ত নির্বাচনে ভি ভি প্যাট ব্যবহার করা হবে৷ এ বিষয়ে বছরের জুন মাসেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল৷ পরীক্ষামূলকভাবে এর প্রথম ব্যবহার গোয়ার বিধানসভা নির্বাচনে করা হয়৷ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হিমাচলপ্রদেশে বিধানসভার নির্বাচনেও এর ব্যবহার করা হয়৷ তিনি জানান, ২০১৯ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠেয় লোকসভার নির্বাচনেও ভি ভি প্যাট যুক্ত ইভিএম ব্যবহার করা হবে৷ এর জন্য ২৩ লক্ষ ইভিএম এবং ১৬ লক্ষ ভিভি প্যাট কেনা হবে৷ এর জন্য পাঁজ হাজার কোটি টাকা ব্যহ হবে এবং ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করেছে৷ ২০১৮ সালের সেপ্ঢেম্বর মাসের মধ্যে সমস্ত মেশিন কেনার কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন৷ মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানান, মাদক সহ বিভিন্ন দ্রব্যাদি পাচার রোধে সীমান্তে কড়া নজরদারী রাখা হবে৷ বর্ডার, চেক পোষ্ট সমূহে ওয়েবকাস্ট, সিসিটিভি কভারেজ, ভিডিওগ্রাফি কভারেজ ইত্যাদি করা হবে৷ বিভিন্ন স্পর্শকাতর এবং ভোটগ্রহণ কেন্দ্রগুলিতেও সুবিধা রাখা হবে৷ আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কোনও ভোটারই যাতে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া থেকে দূরে না থাকেন তা সুনিশ্চিত করা হবে বলে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন৷
সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার অচল কুমার জ্যোতি ছাড়াও নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা, নির্বাচন কমিশনার ওম প্রকাশ রাওয়াত, নির্বাচন কমিশনের ডিরেক্টর জেনারেল ধীরেন্দ্র ওঝা, উপনির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন এবং রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক শ্রীরাম তরুণীকান্তি উপস্থিত ছিলেন৷