নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩০ অক্টোবর৷৷ পাহাড় প্রমাণ অভিযোগ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে৷ তাই, একাধিক অভিযোগের স্পষ্টিকরণ দিতে গিয়ে কার্য্যত নতুন করে প্রশ্ণ তুলে দিয়েছে খোদ রাজ্য সরকার৷ চিটফান্ড কাণ্ডে মামলার গতি প্রকৃতি সম্পর্কে বিধানসভাতেও তথ্য দিয়েছে রাজ্য সরকার৷ নতুন করে সোমবার সরকারি পোর্টালে বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ ও তার স্পষ্টিকরণ দেওয়া হয়েছে৷ এরমধ্যে অন্যতম, চিটফান্ড সংক্রান্ত অভিযোগের সাফাই দিতে গিয়ে কিছু বিষয় সুকৌশলে এড়িয়ে গেছে বামফ্রন্ট সরকার৷ বিশেষ করে স্পষ্টিকরণে রাজ্য সরকার পাঁচ মন্ত্রির জড়িত থাকার অভিযোগের কথা উল্লেখ করলেও এই ব্যাপারে কোন স্পষ্টিকরণ দেয়নি৷ তাতে প্রশ্ণ উঠেছে, যে সমস্ত বিষয়গুলিতে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে তার স্পষ্টিকরণ না দিয়ে এর সত্যতায় সিলমোহর দিল কি রাজ্য সরকার?
স্পষ্টিকরণ দিতে গিয়ে রাজ্য সরকার প্রথমে দাবি করে, প্রশাসনিক কাজকর্মে সর্বদাই স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়৷ বলা হয়েছে, ত্রিপুরাতে সার্বজনিন ব্যবস্থা সার্বিকভাবে পরিচালিত হয়৷ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নও আধুনিক পরিকাঠামো দ্বারা পরিচালিত হয়৷ রাজ্য সরকারের প্রাথিষ্ঠানিক ব্যবস্থা সমুহ মূলত উঁচু তলা থেকে নিচু স্তর পর্যন্ত সকলেই স্বচ্ছতার সাথে কাজ করে চলেছে৷ সমস্ত বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে৷ স্বচ্ছতা নিয়ে যখনই সওয়াল উঠে, তখনই ব্যবস্থা নেওয়া হয়৷ লেনদেনের নিয়মিত পরীক্ষা নিরিক্ষাও করা হয়ে থাকে৷ বর্তমানে রাজ্য সরকারের ১ লক্ষ ৬১ হাজার কর্মচারী রয়েছেন৷ ফলে, একটা অংশ কিছু অন্যায় কাজের সাথে লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করেন৷ কিন্তু, এখানে মনে করার কোন অবকাশ নেই,কোন অনিয়ম হলে প্রশাসন তাদের বরদাস্ত করে থাকে৷ যখনই কোন প্রশাসনিক আমলার বিরুদ্ধে কিংবা প্রকল্পের কাজকর্মে অভিযোগ উঠে তখনই এর তদন্তক্রমে ব্যবস্থা নেওয়া হয়৷
এমনই একটি অভিযোগ সম্পর্কে রাজ্য সরকার এর স্পষ্টিকরণ দিয়েছে৷ অভিযোগে বলা হয়েছে রোজভ্যালি রাজ্যের উপজাতি জনগণের ৩৫ কোটি টাকা লুঠ করে নিয়ে গেছে৷ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার রোজভ্যালি পার্কের উদ্বোধনে রোজভ্যালির কাজকর্মের প্রশংসা করেছেন৷ রোজভ্যালি মামলায় সিবিআই মন্ত্রী বিজিতা নাথকে জেরা করেছে৷ সাথে আরো অভিযোগ, রোজভ্যালি ঘোটালায় রাজ্যের আরো ৫ জন মন্ত্রী জড়িত আছেন৷
এই অভিযোগের স্পষ্টিকরণে জানানো হয়েছে, রাজ্য সরকার ৩৭টি এনবিএফসির বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের অনুরোধ জানিয়েছিল৷ ২০১৩ সালের ১২ মে ২৭টি মামলা এবং ২০১৩ সালের ২৭ মে ১০টি মামলা তদন্তের জন্য সিবিআইর কাছে পাঠিয়েছিল রাজ্য সরকার৷ এরমধ্যে প্রথম পাঠানো ২৭টি মামলায় মাত্র ৫টি মামলা সিবিআই গ্রহণ করেছে৷ বাকি ৩২টি মামলা সিবিআই তদন্ত করবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছে৷ তখন মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঐ ৩২টি মামলায় সিবিআই তদন্তের অনুরোধ জানিয়েছিলেন৷ কিন্তু, ২০১৪ সালের ১০ মে প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী রাজ্য সরকারকে জানিয়েছে, ঐ ৩২টি মামলা খুবই ছোট ফলে সিবিআই দ্বারা তদন্ত করা সম্ভব নয়৷
স্পষ্টিকরণে জানানো হয়েছে, দ্বিতীয় দফায় সিবিআইর কাছে পাঠানো ১০টি মামলায় তিনটি মামলা ছিল রোজভ্যালির বিরুদ্ধে৷ পশ্চিম আগরতলা থানায় মামলা নম্বর ১৩২/১৩, ১৪০/১৩ এবং ১৪১/১৩৷ এই মামলাগুলি সিবিআই তদন্তের জন্য গ্রহণ করেনি৷ তবে কলকাতায় রোজভ্যালির বিরুদ্ধে পৃথক একটি মামলায় সিবিআই তদন্ত শুরু করেছে তাতে ত্রিপুরা একা নয়৷ বোঝানো হয়েছে অন্য রাজ্যও রয়েছে৷ স্পষ্টিকরণে আরো বলা হয়েছে, রোজভ্যালি সংক্রান্ত তিনটি মামলা সিট তদন্ত করছে৷ তাছাড়া, রোজভ্যালির ১২৬৪১২ একর জমি, এলআইসি’র ১২৪ টি পলিসি এবং বিভিন্ন ব্যাঙ্কে রাখা ৯৯ হাজার ৮৩৭ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে৷ স্পষ্টিকরণে রাজ্য সরকার জোর গলায় দাবি করেছে, রোজভ্যালির বিরুদ্ধে সমস্তরকম ব্যবস্থা কড়া ভাবে এবং যথাসময়ে নেওয়া হয়েছে৷
কিন্তু প্রশ্ণ উঠেছে, মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রী বিজিতা নাথ এবং আরো ৫ মন্ত্রির বিষয়ে যে অভিযোগ উঠেছে সে বিষয়ে কোন স্পষ্টিকরণ নেই কেন৷ এদিন, সরকার পোর্টালে প্রকাশিত স্পষ্টিকরণে তাঁদের বিষয়ে বামফ্রন্ট সরকার সুকৌশলে এড়িয়ে গেছে বলেই মনে হয়েছে৷ আদৌ মুখ্যমন্ত্রী রোজভ্যালি পার্কের উদ্বোধনি অনুষ্ঠানে গিয়ে ঐ সংস্থার প্রশংসা করেছিলেন কিনা, যদি করে থাকেন কেনইবা প্রশংসা করেছিলেন, সেবিষয়ে কোন স্পষ্টিকরণ দেওয়া হয়নি৷ মন্ত্রী বিজিতা নাথকে রোজভ্যালি ইস্যুতে সিবিআই জেরা করেছে, তারও কোনও স্পষ্টিকরণ দেয়নি রাজ্য সরকার৷ সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো, রোজভ্যালি ঘোটালায় রাজ্যের আরো ৫ মন্ত্রির যুক্ত থাকার বিষয়টি রাজ্য সরকার খারিজ করেনি৷ স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ণ উঠেছে, রোজভ্যালি ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রী বিজিতা নাথের বিরুদ্ধে যে অভিযোগের আঙ্গুল উঠেছে, এর সাথে আরো ৫ মন্ত্রি রোজভ্যালি ঘোটালায় যুক্ত রয়েছেন তাতে রাজ্য সরকার কার্যত সিলমোহর দিল কিনা৷