নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৬ মে৷৷ দেশের বর্তমান পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার সুকল পড়ুয়াদের

রাজনৈতিকভাবে সচেতন হওয়ার পাঠ দিয়েছেন৷ শুধু বই-পুস্তকে আবদ্ধ থাকলে চলবে না, দেশে কি ঘটছে সেদিকেও নজর রাখতে হবে বলে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন৷ কারণ, আগামী দিনে আজকের নবীন প্রজন্ম দেশ পরিচালনার দায়িত্বে বৃত হবে৷ এজন্য তিনি আজকের নবীন প্রজন্মকে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাঁধে গুরুদায়িত্ব তুলে দিয়েছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী এদিন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উদ্দেশ্যে বলেন, কাঁচা মাটি যেভাবে তৈরি করার চেষ্টা করবেন সেভাবেই গড়ে তোলা সম্ভব৷ নজরুল জন্মজয়ন্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন৷
শুক্রবার সারা রাজ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৯তম জন্ম জয়ন্তী পালিত হচ্ছে৷ কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর, আগরতলা রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে৷ কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিকৃতীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ তাছাড়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সংসৃকতি দপ্তরের মন্ত্রী ভানুলাল সাহা, সম্মানীত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী, বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মিহির দেব, উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ বিপ্রদাস পালিত, রাজ্য শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ পর্ষদের অধিকর্তা রতীশ মজুমদার৷ সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা উত্তম কুমার চাকমা৷
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার কাজী নজরুল ইসলামের ছোট বেলার জীবন সংগ্রামের কথা স্মরণ করেন এবং কীভাবে তাঁর সাহস ও আাত্ম বিশ্বাস তাঁর চারদিকের প্রতিবন্ধকতাকে দূর করতে সহায়তা করেছিল তা ছাত্র ছাত্রীদের সামনে তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, নজরুল একাধারে দেশপ্রেমিক, তেমনি সমাজের কুসংস্কারের উধের্ব উঠে হিন্দু মুসলিম ঐক্যের জন্য সচেষ্ট ছিলেন৷ তিনি তাঁর এই কাজে কলম, কন্ঠ ও সঙ্গীতকে ব্যবহার করে ছিলেন৷ নজরুলের জীবন থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের চিন্তায়, চেতনায়, মননে বড় হতে মুখ্যমন্ত্রী পরামর্শ দেন৷ মুখ্যমন্ত্রী নজরুলের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, তিনি ছিলেন মহান ব্যক্তি৷
এদিন মুখ্যমন্ত্রী সুকল পড়ুয়াদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে পাঠ দিতে গিয়ে কৌশলে তিনি রাজনীতিকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছেন৷ কিন্তু, নাম না করে বিজেপিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি৷ তিনি বলেন, বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার রেশন কার্ড তুলে দিতে চাইছে৷ তার বদলে গরুর আধার কার্ড এনেছে৷ কোনদিন বলবে, গরু ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে, কটাক্ষ মুখ্যমন্ত্রীর৷ তিনি উদ্বেগের সুরে এও বলেন, ব্রিটিশরা এদেশে যা করেছিল, এখন একটা প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি তাই করার চেষ্টা করছে৷ তাঁর বক্তব্য, বইয়ের পোকা হয়ে থাকলে চলবে না৷ দেশে কি ঘটছে সে খবরও রাখতে হবে৷ তাঁর মতে, দেশের খবর না রাখলে শুধু নম্বর পেয়ে কোন লাভ হবে না৷ এই পরিস্থিতিতে আজকের নবীন প্রজন্ম সঠিক পথের দীশা দেখাতে ভূমিকা নিতে পারবে বলে আশা ব্যক্ত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷
শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তীর ভাষায় নজরুল ছিলেন একজন ব্যস্ততম ও সচেতন ব্যক্তি যিনি তাঁর নাতিদীর্ঘ জীবনের মধ্যেও সমাজে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা, সাম্রাজবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে মুক্ত সমাজ গঠন করতে চেয়েছিলেন৷ তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে সমাজের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে ছিলেন৷ তথ্য ও সংসৃকতি মন্ত্রী ভানুলাল সাহাও নজরুল ইসলামের সাম্রাজবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই এর কথা আলোকপাত করেন এবং বলেন, যাঁরা সংসৃকতি নিয়ে চর্চা করেন তাঁরাও যেন তাদের চর্চায় রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে পাথেয় করেন৷

