কলকাতা, ২৮ মার্চ (হি. স.) : শনিবার রাত ৩টে নাগাদ লালগড় থেকে গ্রেফতার হলেন ছত্রধর মাহাতো । ২০০৯ সালে সিপিআইএম নেতা প্রবীরমাহাতো খুনের ঘটনা-সহ একাধিক জঙ্গলমহলের পুরনো মামলায় ছত্রধর মাহাতোকে সমন পাঠাচ্ছিল এনআইএ। কিন্তু গুরুত্ব না দেওয়ায় শনিবার ভোররাতে লালগড়ের বাড়িতে হানা দিয়ে তাকে গ্রেফতার করল এনআইএ।
ছত্রধর মাহাতোর স্ত্রী নিয়তি মাহাতো জানান, রাত ৩টে নাগাদ প্রায় ৪০ জনের একটি বাহিনী হাজির হয় লালগড়ের নতুন পাকা বাড়ির কাছে।দরজায় টোকা দিতে ছত্রধর মাহাতোর বড় ছেলে দরজা খোলে। তখনই এনআইএ-র লোকজন ভেতরে ঢুকে সেখানে থাকা ছত্রধর মাহাতোরনিরাপত্তারক্ষী ও ছেলেদের সমস্ত মোবাইল গুলি আগে নিয়ে নেয়। এরপর ছত্রধর মাহাতো সেখানে রয়েছে কিনা ভালো করে পরীক্ষা করে নেয় পুরোবিল্ডিংটি। বেশ কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করে ছত্রধর মাহাতোর ছেলে ও নিরাপত্তা রক্ষীদের। তারপর এনআইএ-র টিম সেখান থেকে বেরিয়ে ছত্রধর মাহাতোর আমলিয়া গ্রামের ভেতরে থাকা পুরনো মাটির বাড়ির কাছে যায়। নিয়তী মাহাতো আরও বলেন, বাড়িতে দরজা ভেঙে অতর্কিতে ঢুকে পড়ে তারা।বাড়ির সকলে কিছু জানার চেষ্টা করার আগেই নিজেদের পরিচয় না দিয়েই প্রতিটি ঘরে ঢুকে সকলের মোবাইলগুলো নিজেদের হস্তগত করে ওইলোকজন। ততক্ষণে ছত্রধর মাহাতো বুঝতে পেরে বাড়ির বারান্দায় বেরিয়ে সকলকে জিজ্ঞাসা করেন-আপনারা কারা? কী কারণে এসেছেন? উত্তরেওই লোকজন জানান তারা পুলিশ জ্ঞানেশ্বরী মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে, তাই তাঁকে যেতে হবে। তখনই ছত্রধর স্থানীয় থানার পুলিশ কোথায় জানতে চাইলে কোন উত্তর না দিয়ে টেনে হিঁচড়ে তাঁকে গাড়িতে তোলে বলে অভিযোগ। নিয়তী মাহাতোর অভিযোগ-খালি গায়ের গামছা পরা অবস্থাতেই রীতিমতো টানাহেঁচড়া চলে। পরিবারের লোকেরা প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন, যারা এসেছিল তারা এনআইএর লোকজন। নির্বাচনের পরেই ছত্রধরকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রসঙ্গত, ইএপিএ আইনে যাবজ্জীবনের সাজা কাটিয়ে গত বছরই মুক্তি পেয়েছিলেন লালগড়ের সন্ত্রাসবিরোধী জনসাধারণ কমিটির নেতা। সমাজের ফেরার পাশাপাশি জীবনেরও মূল স্রোতে ফিরেছেন ছত্রধর মাহাতো। সরকার বিরোধী থেকে এখন শাসকপক্ষে।
১১ বছর পরে শনিবার ঝাড়গ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত লালগড় থানার আমলিয়া গ্রামে নিজের বুথে সস্ত্রীক ভোট দিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক ছত্রধর মাহাতো। শনিবার স্ত্রী নিয়তি মাহাতোকে সঙ্গে নিয়ে আমলিয়া ভোটকেন্দ্রে গিয়ে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে তিনি ভোট দেন। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক ছত্রধর মাহাতো বলেছিলেন, ‘১০ বছর পর ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়ে মনে হচ্ছে আমি যেন নতুন ভোটার। ভারতের প্রতিটি মানুষের উচিত তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করার জন্য ভোট দেওয়া ।আমি ভারতবর্ষের একজন নাগরিক তাই আমি ভোট দান করেছি।’ছত্রধর আরও বলেন যে, ‘ঝাড়গ্রাম শুধু নয়, ঝাড়গ্রাম জেলার চারটি আসনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরা জয়লাভ করবে । শনিবার থেকে খেলা শুরু হয়েছে। আগামী দিনে এই খেলা চলবে। খেলার নাম হল উন্নয়ন। উন্নয়নের খেলা বাংলায় আরও জোর কদমে শুরু হবে।’ সেই সঙ্গে তিনি বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় সংস্থা তাকে বারবার ডাকছে যার ফলে তিনি দলের কাজ ঠিকভাবে করতে পারেনি। তিনি আরও বলেন যে এতে দলের কোন ক্ষতি হবে না। জঙ্গলমহলের মানুষ এবার বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করবে। চার-শূন্য গোলে তৃণমূল জয়লাভ করবে । এরপরেই ভোর রাতে তাকে গ্রেফতার করল এনআইএ।