নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৫ মার্চ৷৷ রাজ্যের জনগণের স্বাস্থ্য সুুরক্ষিত রাখতে রাজ্য সরকার ধারাবাহিকভাবে কাজ করে চলেছে৷ সরকারের আন্তরিকতায় কোনও ঘাটতি নেই৷ প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের কাছে যতটা সম্ভব স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছানো যায়, সেই লক্ষ্যে রাজ্যের সর্বত্র কর্মযজ্ঞ চালু রয়েছে৷ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তর জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মাধ্যমে রাজ্যের দুর্গম অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষকে স্বাস্থ্য পরিষেবার সুুফল পৌঁছে দিতে অভিনব প্রয়াস গ্রহণ করা হয়েছে৷ আজ বিধানসভায় বিধায়ক রতন ভৌমিক, বিধায়ক মবস্বর আলী ও বিধায়ক নারায়ণ চৌধুরী আনীত এক দৃষ্টিআকর্ষণী নোটিসের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন৷ দৃষ্টিআকর্ষণী নোটিসটি ছিল ’রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবায় ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীর অপ্রতুলতার কারণে স্বাস্থ্য পরিষেবায় সমস্যা সৃষ্টি হওয়া সম্পর্কে’৷
এই দৃষ্টিআকর্ষণী নোটিসের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সকল অংশের মানুষের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা সুুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০২২ সালের মধ্যে সকল প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিকে স্বাস্থ্য ও সুুস্থতা কেন্দ্রে উন্নীত করা হবে৷ ২০১৯-২০ তে মোট ৩০৫টি এবং ২০২০-২১ বছরের বর্তমান সময় পর্যন্ত ২৮০টি স্বাস্থ্য ও সুুস্থতা কেন্দ্র চালু আছে৷ রাজ্যে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ চিকিৎসকরা তাদের হারানো মনোবল ফিরে পেয়েছেন৷ এখন জটিল অস্ত্রোপচার রাজ্যেই সম্ভবপর হচ্ছে৷ জনগণকে স্বাস্থ্য পরিষেবা দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে স্বাস্থ্যকর্মী ও আশাকর্মীরা নিরন্তর প্রয়াস জারি রেখেছেন৷ রাজ্যের বর্তমানে ২টি মেডিকেল কলেজ, ৬টি রাজ্যভিত্তিক হাসপাতাল, ৬টি জেলাভিত্তিক হাসপাতাল, ১২টি মহকুমাভিত্তিক হাসপাতাল, ২৩টি গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ১১৭টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ১০০১টি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে৷ রাজ্যের কিছু কিছু হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীর স্বল্পতা থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে রোগীদের পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছেন৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে বর্তমানে অ্যালোপেথি চিকিৎসক রয়েছেন ৯৭৮ জন, হোমিও চিকিৎসক রয়েছেন ১৭ জন, আয়ুর্বেদ চিকিৎসক রয়েছেন ৪০ জন, দন্ত চিকিৎসক রয়েছেন ৫৩ জন, নার্স রয়েছেন ২,২১০ জন ও প্যারামেডিকেল কর্মী রয়েছেন ৩,১০৫ জন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর চিকিৎসকদের অবসরের পর তাদের চাকুরীতে পুনর্বহালের বয়সসীমা দুটি পর্যায়ে ৬৫ বছর পর্যন্ত করা হয়েছে৷ সকল ক্যাটাগরীর চিকিৎসকগণ এরফলে উপক’ত হবেন৷ রাজ্যে গত দুই বছর সময়ে মোট নিউরো সার্জারী করা হয়েছে ৩০০টি৷ এছাড়াও নিউরো সংক্রান্ত ১,৩০০ জন রোগী জিবি হাসপাতালে চিকিৎসার সুুযোগ পেয়েছেন৷
বর্তমানে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর, বেসিক টিচার মিলিয়ে মোট ৮২ জন ফ্যাকাল্টিকে উচ্চপদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে৷ আমবাসাতে একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জন্য সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করছে৷ ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগত চিকিৎসা সুুবিধা সম্পন্ন উত্তর-পূর্ব ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ ক্যান্সার হাসপাতাল অটল বিহারী রিজিওন্যাল ক্যান্সার হাসপাতাল চালু করা হয়েছে৷ রাজ্যে নতুন করে ২টি জেলা হাসপাতাল নির্মাণ করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে৷ এই জেলা হাসপাতালগুলি নির্মাণ করা হবে খোয়াই ও সিপাহীজলা জেলায়৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা সুুষ্ঠভাবে প্রদানের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে অ্যালোপেথি চিকিৎসক নিয়োগ করার জন্য স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে৷ রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবায় নার্স নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে৷ ইতিমধ্যেই স্টাফ নার্স পদের রিক্রটমেন্ট রুলস হয়ে গেছে৷ বর্তমানে ৭৫টি নার্স পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে৷ স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নের জন্য বর্তমান সরকার ১২১ জন মেডিকেল অফিসার নিয়োগ করেছেন৷ তাছাড়া অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী যেমন ৪৯৩ জন ফার্মাসিস্ট, ১৪৩ জন ল্যাবরেটরি টেকনেশিয়ান, ২৮ জন রেডিওগ্রাফার, ২১ জন অপথ্যালমিক অ্যাসিস্টেন্ট, ১৪ জন ইসিজি টেকনেশিয়ান পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ তাছাড়া এম পি ডব্লিউ পদে ৪৭ জনকে নিয়োগের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে৷