চাবুয়া (অসম), ২০ মার্চ (হি.স.) : অসমের বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের কথা যদি কেউ ভেবে থাকে তা-হলে সে কেবল বিজেপিই। কংগ্রেসের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন প্ৰধানমন্ত্ৰী নরেন্দ্র মোদী। আজ শনিবার উজান অসমের ডিব্রুগড় জেলার অন্তর্গত চা বাগান জনজাতি অধ্যুষিত চাবুয়ায় বহু লক্ষ জনতার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বিশাল সমাবেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন মোদী।
মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল কয়েকজন মন্ত্রী ও বিধায়ক তথা সংশ্লিষ্ট এলাকার বিজেপি মিত্রজোটের প্রার্থীদের মঞ্চে বসিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী উদাত্ত ভাষণের শুরুতে অসমিয়া ভাষায় প্রথমে অসমবাসীক হোলির শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি অসমে গৌরবময় আহোম রাজত্বের প্রসঙ্গে বলেছেন। চাবুয়ার সমাবেশে জনসমুদ্ৰ দেখি উৎফুল্লিত মোদী কংগ্রেস নেতাদের এই দৃশ্য দেখে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে শতবর্ষ পুরনো ওই দলের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের তীব্র সমালোচনা করেন। প্ৰধানমন্ত্ৰী বলেন, ‘চা বাগানের শ্ৰমিকদের নিয়ে কংগ্ৰেস এতদিন খেলায় মত্ত ছিল। অসমে এসে ভোটের যাচ্ঞা করতে কংগ্রেসের লজ্জিত হওয়া উচিত ছিল। এখন গালভরা প্রতিশ্রুতি দিলেও কংগ্ৰেস এখন অসমের জনতার কাছ থেকে শতযোজন দূরে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চাবুয়ার নামের মধ্যে চা বিরাজিত। এখানের চা বিশ্বের প্রতিটি জায়গায় সুগন্ধ ছড়াচ্ছে, আমরা সকলেই তা জানি। কিন্তু, আজ একটা বেদনাদায়ক ঘটনায় আমাকে হতাশ করছে, আমি তা না বলে পারছি না। বলেন, দেশের প্রাচীনতম দল যে দেশে ৫০-৫৫ বছর শাসন করেছে তারা অসমের চায়ের পরিচয় মুছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এবং এ ধরনের নির্লজ্জ কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করছেন ওই দলের নেতারা। এ ঘটনায় কংগ্রেসকে কখনও ক্ষমা করা যায় না। তাই কংগ্রেসের শাস্তি হওয়া উচিত। এ ঘটনা যদি অসমের অপমান না হয় তবে আর কী? কংগ্রেস অসমের কৃষ্টি-সংস্কৃতি, রীতিনীতি ভুলে গেছে।
রাহুল, প্রিয়াঙ্কার নাম না ধরে তিনি বলেন, থাইল্যান্ড, শ্ৰীলংকার চা বাগানের ছবি লাগিয়ে ওই সব ছবি অসমের চা বাগানের বলে দাবি করে সর্বভারতীয় কংগ্ৰেস নেতার বিজ্ঞাপন দেওয়ার ঘটনাকে দুৰ্ভাগ্যজনক আখ্যা দিয়ে মোদী বলেন, ‘আমি যখন অসম বা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্য রাজ্যগুলিত যাই তখন সেখানকার সংস্কৃতির সাথে যুক্ত হতে পেরে গর্ব অনুভাব করি। আমি অসমিয়া গামোছা পরে গর্বিত বোধ করি। অথচ কংগ্রেস এ নিয়ে তামাশা করে। এআইইউডিএফ-এর নাম না নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা কংগ্রেসের সঙ্গে মহাজোট করেছে, যা অসমের সংস্কৃতির পক্ষে বড় হুমকি। কংগ্ৰেস যাদের সঙ্গে মিত্ৰতা করেছে তা অসমের জন্য বিপজ্জনক।’ এছাড়া অসমের কৃষক, চা বাগানের শ্ৰমিকদের কল্যাণে রাজ্যের বিজেপি সরকার অফুরন্ত কাজ করছে বলে দাবি করে তিনি মুখ্যমন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সনোয়ালের ভূয়সী প্ৰশংসা করেন।
নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘এবারের কেন্দ্ৰীয় বাজেটে অসমের চা বাগানের বসবাসকারীদের জন্য গণমুখি প্রকল্প ইত্যাদি বাস্তাবায়ন করতে এক হাজার কোটি টাকা ধাৰ্য করেছি। শ্ৰমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন থাকায় বিজেপি সরকার এ ব্যাপারে বিশেষ কিছু করতে পারেনি। চা ব্যবসায়ীরা যদি শ্ৰমিকদের সুখ-দুখের কথা না বুঝে তা-হলে কে বুঝবে?’ তিনি বলেন, চা জনগোষ্ঠীর বাচ্চাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হাজার হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন চা বাগানে প্রায় ১২৫টিরও বেশি স্কুল খোলা হয়েছে। হাসপাতালের সুবিধাদি বিকাশ করা হচ্ছে। গর্ভবতী মহিলা এবং তাঁদের সন্তানসন্ততিদের জন্য হাজার হাজার টাকা উপলব্ধ করা হচ্ছে। একইভাবে পাকা বাড়ি, শৌচালয়, পানীয় জলের ব্যবস্থা, জমি ইজারা ইত্যাদির কাজ দ্রুত গতিতে ডাবল ইঞ্জিন সরকার এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এনডিএ সরকার অসমের যুবক-যুবতীদের কৰ্মসংস্থানের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ভাবছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
বিগত কংগ্রেস সরকারের প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাঁচ বছর আগে পর্যন্ত অসমে রাস্তাঘাট, সেতুর অবস্থা কী ছিল? একবার ভেবে দেখুন। কংগ্রেসের অপশাসন থেকে অসমকে মুক্ত করার পর এখন রাজ্যের যাতায়াত ব্যবস্থার দ্ৰুত উন্নতি হচ্ছে। বগিবিল, ধলা-শদিয়া সেতুর প্রসঙ্গও তাঁর ভাষণে টেনে আনেন প্ৰধানমন্ত্ৰী। তিনি বলেন, কংগ্ৰেসের ধর্ম হচ্ছে মিথ্যা প্ৰতিশ্ৰুতি দেওয়া। কংগ্ৰেসের তীব্ৰ সমালোচনা করে মোদী বলেন, ‘শতবর্ষ পুরনো কংগ্রেস কেবল মিথ্যা প্ৰতিশ্ৰুতি দেয়। সমগ্ৰ দেশের মানুষ এখন কংগ্ৰেসের মিথ্যাচারিতা বুঝতে পেরেছেন, তাই এই দলের জনপ্ৰিয়তা এখন আর নেই। মিথ্যা প্ৰতিশ্ৰুতির ডালি নিয়ে অসমে ফের আসা-যাওয়া করছেন কংগ্ৰেসের নেতারা। তাই জনসাধারণ, আপনারা এই দল বা মহাজোট সম্পর্কে সাবধানে থাকবেন।’
রাজ্যে ডাবল ইঞ্জিনের সরকারকে আরও শক্তিশালী করতে অসমে কতটা উৎসাহ, এনডিএ-কে কতটা আত্মবিশ্বাস রয়েছে তার প্রমাণ আজকের সমাবেশে উপস্থিত বহু লক্ষ মানুষ বিরোধীদের বুঝিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে রাজ্যের সর্বানন্দ সরকারের কাজকর্মে আপনারা কতটা বিশ্বাস রেখেছেন, আজকের সমাবেশে এসে যে ভালোবাসা, আশীর্বাদ দিয়েছেন তা আমাদের কাছে পরম সৌভাগ্যের বিষয়।
মোদী বলেন, আমরা আত্মনির্ভর ভারত গঠন করতে নিরন্তর চেষ্টা করছি। এই কাজকে এগিয়ে নিতে এই অঞ্চলের জনতার সবচেয়ে বড় ভূমিকা রয়েছে। কেবল চা রফতানি নয়, এই অঞ্চল থেকে অনেক জৈব সামগ্রীর রফতানি হতে পারে। এখানকার পণ্যসামগ্রী ইউরোপ এবং মধ্য প্রাচ্যে পৌঁছে যাচ্ছে। এই চিন্তাভাবনাকে সাকার করতে কৃষকদের উৎপাদিত সামগ্রী রেলপথে পশ্চিম ভারতে সরাসরি রফতানি হচ্ছে। ফল, মাছ, শাকসবজি ইত্যাদি পণ্য এখন সরাসরি বড় বড় বাজারে পৌঁছে যাচ্ছে। এখানে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের বিশাল সম্ভাবনাও রয়েছে। এনডিএ সরকার ধারাবাহিকভাবে এই শিল্পগুলিকে উৎসাহিত করছে। যাতে এখানকার যুবকরা আরও ভালো রোজগার করতে পারেন।