রাজ্যের ৬টি নদীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজ চলছে, ব্যয় হবে ৬৭ কোটি ৪৯ লক্ষ টাকা

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩ মার্চ৷৷ দ্ধগুষিকাজে সেচ অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ তাই বেশি পরিমাণ চাষযোগ্য জমিকে সেচের আওতায় আনার লক্ষ্যে পূর্তদপ্তরের জলসম্পদ বিভাগকে পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করতে হবে৷ আজ সচিবালয়ের ২নং সভাকক্ষে পূর্ত দপ্তরের পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন৷
পর্যালোচনা সভায় পূর্ত দপ্তরের জলসম্পদ, জাতীয় সড়ক, বিল্ডিং, সড়ক ও সেতু, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়৷ সভায় মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, জলসম্পদ বিভাগের অধীনে যে সমস্ত সেচ প্রকল্পগুলির সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে তা দ্রত সংস্কারের জন্য দপ্তরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে৷ এক্ষেত্রে দপ্তরের আধিকারিকদের ক্ষেত্র পর্যায়ে পরিদর্শন করে অচল সেচ প্রকল্পগুলি দ্রত সংস্কারের জন্য উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সভায় পূর্তদপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে জানান, রাজ্যে মোট চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ২ লক্ষ ৫৫ হাজার ২৪১ হেক্টর৷


এরমধ্যে ৮২ হাজার ৭৫৩ হেক্টর জমি জলসম্পদ দপ্তরের মাধ্যমে সেচের আওতায় আনা হয়েছে৷ জলদপ্তর ৩টি মিডিয়াম ইরিগেশন প্রজেক্ট, ৪৮টি ডাইভারসন প্রকল্প, ১,৫৯৫ টি লিফট ইরিগেশন প্রকল্প, ২৯০টি ডিপ টিউবওয়েল প্রকল্প, ৩টি মলবোর টিউবওয়েল এবং ৭টি হাইপাওয়ার লিফট ইরিগেশন প্রকল্পের মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিত করছে৷ তিনি জানান, বাধারঘাটে ৩টি আর সি সি কালভার্ট নির্মাণের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে৷ এরমধ্যে ১টি কালভার্টের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে৷ এছাড়াও উদয়পুরের খিলপাড়ায় ১টি আর সি সি কালভার্টের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের পথে৷ এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান, বিদ্যৎ সংযোগের কারণে যে সমস্ত সেচ প্রকল্পগুলির অচল অবস্থায় রয়েছে তা দ্রত চালু করার লক্ষ্যে জলসম্পদকে বিদ্যৎ ও পঞ্চায়েত দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করতে হবে৷ পঞ্চায়েত এলাকায় যে সমস্ত সেচ প্রকল্প অচল অবস্থায় রয়েছে তা দ্রত চালুর ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিকল্পনা নেওয়ার জন্য পঞ্চায়েত দপ্তরের আধিকারিকদের পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি আরও বলেন, বাধারঘাটে যে আর সি সি কালভার্ট তৈরী করা হয়েছে তা দ্রত চালু করার উদ্যোগ নিতে হবে৷
পূর্ত দপ্তরের সচিব সভায় আরও জানান, নাবার্ডের অর্থানুকুল্যে রাজ্যের ৬টি নদীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজ চলছে৷ এর জন্য ব্যয় হবে ৬৭ কোটি ৪৯ লক্ষ টাকা৷ পূর্ত দপ্তরের জলসম্পদ বিভাগ ২০২০-২১ থেকে ২০২৪-২৫ এই পাঁচটি অর্থবর্ষে ৩৬ হাজার কৃষি জমিকে সেচের আওতায় আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে৷


সভায় জলজীবন মিশন বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সচিব কিরণ গিত্যে জানান, আগামী ২০২২ সালের মধ্যে রাজ্যের ৮ লক্ষ ৯৯৭ টি পরিবারকে ট্যাপ সংযোগের মাধ্যমে পানীয় জল পৌছানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত মোট ১ লক্ষ ৯৫ হাজার ১২৩ টি পরিবারকে টেপের মাধ্যমে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে৷ এরমধ্যে ৩৭০টি জনবসতিতে ১০০ শতাংশ টেপ সংযোগের মাধ্যমে পানীয় জল পৌঁছানো হয়েছে৷
সভায় স্বচ্ছ ভারত মিশন (গ্রামীণ) বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে পূর্তদপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে জানান, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে স্বচ্ছভারত মিশন (গ্রামীণ) প্রকল্পে মোট ৭৩ হাজার ৯২৯টি ব্যক্তিগত শৌচালয় তৈরী করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল৷ এরমধ্যে ৪৩ হাজার ৬৩৬ টির কাজ শেষ হয়েছে এবং ২৬ হাজার ১৭৯ টির কাজ চলছে৷ কমিউনিটি টয়লেট নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে ৭৪টি৷ এরমধ্যে ২৬টির কাজ শেষ হয়েছে এবং ৪২ টির নির্মাণ কাজ চলছে৷


পর্যালোচনা সভায় পূর্ত দপ্তরের সচিব রাজ্যের জাতীয় সড়কগুলির বর্তমান অবস্থা, কোন কোন অংশে মেরামতির কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে, কাজের অগ্রগতির বিষয়গুলি সভায় তুলে ধরেন৷ তিনি জানান, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে জাতীয় সড়কের ৬৯.৭৮ কিমি অংশের উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল৷ এখন পর্যন্ত ৪৫ কিমি জাতীয় সড়কের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে৷ তাছাড়া সেন্ট্রাল রোড এণ্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাণ্ড প্রকল্পে ২২টি প্রজেক্টে ২০২.৯৭ সড়কের উন্নয়ন কাজ চলছে৷ এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী পূর্ত দপ্তর জাতীয় সড়ক প্রকল্পে যে সমস্ত কাজ হাতে নিয়েছে তা সময়ের মধ্যে শেষ করার উপর গুরুত্বারোপ করেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা অতিমারির কারণে পূর্ত দপ্তর বিল্ডিং ও সড়ক নির্মাণ সহ যে সমস্ত কর্মসূচি ব্যাহত হয়েছে তা দ্রত শেষ করতে হবে৷
পর্যালোচনা সভায় পূর্ত দপ্তরের চীফ ইঞ্জিনীয়ার (বিল্ডিং) সঞ্চয়িতা দাস জানান, পূর্ত দপ্তরের বিল্ডিং বিভাগ রাজ্যের ২৭টি দপ্তরের ২১২টি প্রজেক্টের কাজ হাতে নেয়৷ এরমধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮৫ টি প্রজেক্টের কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে৷ সভায় মুখ্যমন্ত্রী এসমস্ত নির্মাণ কাজে গুণগতমান বজায় রাখা ও দ্রত শেষ করার উপর গুরুত্বারোপ করেন৷ পর্যালোচনা সভায় পূর্ত দপ্তরের সচিব প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার অগ্রগতি নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেন৷ পর্যালোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুখ্য সচিব মনোজ কুমার, প্রধান সচিব জে কে সিনহা, পূর্ত দপ্তরের চীফ ইি’নীয়ার দীপক চন্দ্র দাস ও অন্যান্য আধিকারিকগণ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *