গুয়াহাটি, ১৩ আগস্ট (হি.স.) : গত ১১ আগস্ট সারা অসম ছাত্ৰ সংস্থা (আসু) অসম চুক্তির ৬ নম্বর অনুচ্ছেদ রূপায়ণে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে অসমিয়ার সংজ্ঞা নিরুপণ করতে কেন্দ্ৰীয় সরকার একটি উচ্চস্তরীয় কমিটি গঠন করেছিল। উচ্চতম আদালতের অবসরপ্ৰাপ্ত বিচারপতি বিপ্লবকুমার শৰ্মাকে চেয়ারম্যান মনোনীত করে গঠিত কমিটি প্ৰতিবেদন প্ৰস্তুত করে রাজ্য সরকারকে দাখিল করেছিল। কিন্তু আসু এবং কমিটির জনৈক সদস্য নিলয় দত্ত রাজ্য সরকার বিষয়টি অবহেলা করছে বলে মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে ওই প্ৰতিবেদনের অন্তর্নিহিত বিষয়বস্তু প্রকাশ করেছেন। উচ্চস্তরীয় কমিটির প্ৰতিবেদন প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য রাজনীতি সরগরম হয়ে উঠেছে। অনৈতিকভাবে এই প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য আসু-র বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলে ধরে এর খেসারত তাদের দিতে হবে বলে সতর্ক করে দিষ়েছেন অর্থ-স্বাস্থ্য ও পূ্র্ত মন্ত্ৰী ড. হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা।
আসু কর্তৃক ৬ নম্বর অনুচ্ছেদ কার্যকরীর জন্য প্রস্তুত প্রতিবেদন প্রকাশ করার কাণ্ডকে বিয়েবাড়ির বর-কন্যার সঙ্গে তুলনা করেছেন মন্ত্রী ড. শর্মা। আসু-র নেতৃত্বকে উদ্দ্যেশ্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে বর কন্যাকে তাঁদের নিজের ঘরে প্রবেশ করার পর তাঁরা কী করছেন সেই খবর নেওয়ার কারণ কী? কিছু বিষয় একান্ত গোপনীয় থাকে সেগুলোর খবর আগাম প্রকাশ্যে আনার প্রয়োজন নেই। অথচ আসু নিজেই দুই বছর অপেক্ষা করার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল।
এদিকে, অসমীয়ার সংজ্ঞা নিৰ্ধারণের অধিকার শুধুমাত্র অসম বিধানসভারই আছে বলে দাবি করেন মন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা। কেন্দ্ৰীয় সরকারের এক্ষেত্রে কোনও ভূমিকা থাকে না। অসম বিধানসভায় ৬ নম্বর অনুচ্ছেদের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের আগে কেন্দ্রীয় সরকারের কিছু করার নেই। ‘রাজ্য সরকার যথাসময়ে কমিটির অনুমোদন নিয়ে আসবে। বিতৰ্ক সৃষ্টি হলে অসমিয়ার সংজ্ঞা নিরুপিত হওয়ার পরবৰ্তী পৰ্যায়ে কেন্দ্ৰীয় সরকার এর উপর হস্তক্ষেপ করতে পারে। মন্ত্রী বলেন, আগেই কেন্দ্রীয় সরকার ডিলিমিটেশন কমিশন গঠন করে দিয়েছে।
হিমন্তের বক্তব্য, ‘সারা অসম ছাত্ৰ সংস্থার মঞ্চ থেকে প্রতিবেদন প্রকাশ না করে সতৰ্কতার সঙ্গে কাজ করলে কার্যসূচি অধিকতর ভালো হতো এবং বিতর্কের সৃষ্টিও হতো না। মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব আরও বলেন ‘কিন্তু প্রতিবেদন প্ৰকাশ করে একপ্রকার জটিলতার সৃষ্টি করা ছাড়া কোনও লাভ হয়নি।’ অসম চুক্তির ৬ নম্বর অনুচ্ছেদ বাস্তবায়নে রাজ্য সরকারের দায়বদ্ধতা রয়েছে। শুধুমাত্র ১২ জন ব্যক্তি অসমিয়ার সংজ্ঞা নিরুপণ করে দিলেই তা শেষ কথা নয়। ’৫১ সালের আগেকার যে সকল অসমিয়া তাঁদের কীভাবে নির্ধারণ করা হবে। এক্ষেত্রে অ্যাডভাইজারি কমিটি নীরব ভূমিকা পালন করছে। সেক্ষেত্রে এনআরসি লাগবে, নাকি জমিজমার কাগজ বিবেচিত হবে? কারণ ’৫১ সালের সময়কালীন জমির কাগজ অনেকেরই নেই বলে উল্লেখ করেন ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা।
এদিকে ৬ নম্বর অনুচ্ছেদ কাৰ্যকর করতে রাজ্য সরকারের সদিচ্ছার অভাব বলে আসু-র মন্তব্যের উত্তরে মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব বলেন, ‘সদিচ্ছার অভাব আছে না-নেই, সেটা আমি রামের ভক্ত হনুমানের মতো বুক চিড়ে দেখালেই বোঝা যাবে। হনুমান যেভাবে বুক চিড়ে রামসীতাকে দেখিয়েছিলেন, আমার বুক চিড়লেও অসমিয়াই দেখা যাবে।’ হিমন্তের প্ৰশ্ন, ‘বাঘবর এবং জনিয়া বিধানসভা নির্বাচন কেন্দ্র দুটিতে যদি অসমিয়ার জন্য আসন সংরক্ষণ করে দেওয়া হয় তা হলে কী লাভ হবে?
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. শর্মার সাফ কথা, অসম চুক্তির ৬ নম্বর অনুচ্ছেদ কার্যকরের জন্য দু বছরের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করতে ১২ জনের অ্যাডভাইজারি কমিটি গঠন করে দিয়েছিল সরকার। প্রতিবেদন দাখিলের পর রাজ্য বিধানসভায় প্রতিবেদনের পর্যালোচনার মাধ্যমে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা। তার পর কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়া রয়েছে। কিন্তু রহস্যজনকভাবে চার মাসের মধ্যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয় নিয়ে আসু রাজনৈতিক অভিসন্ধিতে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। এছাড়া অসমিয়ার সংজ্ঞা নিরুপণে ১২ জনের সিদ্ধান্ত শেষ কথা নয়। এই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার জন্য বিধানসভার গুরুদায়িত্ব রয়েছে।
তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব আসু-র তুঘলকি কাণ্ডে গুরত্ব দিতে চাননি। তাঁর ব্যাখ্যা, আসু এখন আর ছাত্র সংগঠন নয়, রাজনৈতিক দল। তাদের রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে এর যোগ্য জবাব দেবেন, ব্যঙ্গ করে বলেন মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা।