মণিপুরে আধাসেনা জওয়ানদের ওপর হামলার দায় স্বীকার তিন জঙ্গি সংগঠনের, শহিদরা অসম-মণিপুর ও নাগাল্যান্ডের বাসিন্দা

গুয়াহাটি, ৩০ জুলাই (হি.স.) : মণিপুরে আধাসেনা আসাম রাইফেলস-এর ওপর হামলার দায় স্বীকার করেছে তিন জঙ্গি সংগঠন। সংবাদ মাধ্যমে এক যৌথ বিবৃতি পাঠিয়ে গতকাল রাতে মণিপুরের রাজধানী ইমফল থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে চান্দেল জেলার ভারত মায়ানমার সীমান্তবর্তী সাজিকতামপাক এলাকায় হামলার দায় স্বীকার করেছে মণিপুর নাগা পিপলস ফ্ৰন্ট (এমএনপিএফ), পিপলস লিবারেশন আৰ্মি (পিএলএ) এবং ইউনাইটেড লিবারেশেন ফ্রন্ট অব অসম স্বাধীন (আলফা-স্বা)। যৌথ বিবৃতিতে তারা ‘ভারতীয় সম্রাজ্যবাদ’-এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, গতরাতে গুলি ও বোমা হামলায় আসাম রাইফেলস-এর চতুর্থ ব্যাটালিয়নের প্রণয় কলিতা (নম্বর ৪১২১৬০, এইচএভি/জিডি), রতন সালাম (নম্বর ৫০০৯৫৭৪, আরএফএন/জিডি) এবং মেথনা কন্যাক (নম্বর ৫০০৫৮৩৯, আরএফএন/জিডি) শহিদ হয়েছেন। এছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘায়েল হয়েছেন পাঁচজন। তাঁরা সুবেদার এস হাওকিপ, হাবিলদার নিতুল শর্মা, রাইফেলম্যান বিবেকানন, রাইফেলম্যান সন্দির কুমার এবং সেপাই আনিস কুমার (আর্ময়)। আহত পাঁচ ঘায়েল জওয়ানকে ইমফলে অবস্থিত সেনা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট এলাকায় আসাম রাইফেলস-এর চতুর্থ ব্যাটালিয়নের জওয়ানরা নিয়মিত টহল দিচ্ছিলেন। রাস্তায় পোঁতা ছিল উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আইইডি। আইইডিটি বিস্ফোরণের আগেই সম্মিলিত জঙ্গিরা সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ করতে থাকে। জবাবি হামলা করে সেনাও। কিন্তু অতর্কিত হামলায় ততক্ষণে আট জওয়ান গুলিবিদ্ধ হয়ে ভূলুণ্ঠিত হয়ে যান। গোলাগুলি চলে বেশ কিছুক্ষণ। এরই মধ্যে ঘায়েলদের নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। কিন্তু হাসপাতালে কর্তব্যরত ডাক্তাররা তিনজনকে মৃত বলে ঘোষণা করে বাকি ঘায়েল পাঁচজনের চিকিৎসা শুরু করেন।

এদিকে মণিপুরে জঙ্গি হামলায় শহিদদের মধ্যে প্ৰণয় কলিতা (৩৭) নামের জওয়ানের মূল বাড়ি নিম্ন অসমের বরপেটা জেলার পাঠশালার ঘটবর-হালগিরিঘাট এলাকায়। পত্নী সহ সাত এবং দেড় বছর বয়সি দুই সন্তান রেখে গেছেন প্রণয়। জানা গেছে, প্রণয়ের পরিবারকে তাঁর শহিদ হওয়ার খবর ইতিমধ্যে দিয়েছেন আসাম রাইফেলস কৰ্তৃপক্ষ। এই দুঃসংবাদ পেয়ে গোটা এলাকা শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে শহিদ রতন সালাম মণিপুর এবং মেথনা কন্যাকের বাড়ি নাগাল্যান্ডে বলে জানা গেছে। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের বক্তব্য, এই ঘটনা উত্তরপূর্বে গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় হামলা। এদিকে আতর্কিত জঙ্গি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এলাকায় অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। চলছে জোরদার চিরুনি তালাশি।

চান্দেল জেলার ভারত মায়ানমার সীমান্তবর্তী সাজিকতামপাক এলাকায় হামলার দায় স্বীকার করে এমএনপিএফ, পিএলএ এবং আলফা-স্বা তাদের যৌথ বিবৃতিতে ‘ভারতীয় সম্প্ৰসারণবাদ’-এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেছে, আন্তৰ্জাতিকক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদের অবসান ঘটলেও ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের অবসান ঘটেনি। সমগ্ৰ বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যখন জোটবদ্ধ তখন পশ্চিম দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার জনসাধারণ ভারতের সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আসছে। পশ্চিম দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মানুষ এখনও আমাদের স্বাধীনতার জন্য ভারতীয় সাম্ৰাজ্যবাদী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্ৰামের অঙ্গ হিসেবা এমএনপিএফ, আরপিএফ এবং আলফা স্বাধীনের যৌথ সামরিক শক্তি গত ২৯ জুলাই আইওএফ (ভারতীয় দখলদারী শক্তি)-এর বিরুদ্ধে মণিপুরের সাজিকতামপাক এলাকায় হামলা করেছে। তবে তাদের স্বাধীনতা সংগ্ৰামে পশ্চিম দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার নাগরিকরা নিহত এবং আহত হওয়ায় সংগঠনগুলি দুঃখ প্ৰকাশ করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *