বকেয়া পরিশোধে দেরি, কেন্দ্র ও টেলিকম সংস্থাগুলিকে তিরস্কার সুপ্রিম কোর্টের

নয়াদিল্লি, ১৪ ফেব্রুয়ারি (হি.স.) : সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেও পাওনা না মেটানোয় অ্যাডজাস্টেড গ্রস রেভিনিউ (এজিআর) মামলায় টেলিকম সংস্থাগুলিকে তীব্র ভর্ৎসনা করল শীর্ষ আদালত। আবার শীর্ষ আদালতের নির্দেশের পরেও ডিরেক্টরেট অব টেলিকমের এক কর্তা এমন নির্দেশ দিয়েছেন, যা কার্যত স্থগিতাদেশের নামান্তর। ওই অফিসারকে তুলোধনা করেছে বিচারপতি অরুণ মিশ্রের বেঞ্চ। ‘‘আমরা কি সুপ্রিম কোর্ট বন্ধ করে দেব? দেশে কি আইন-কানুন আদৌ আছে? দুর্নীতির শেষ হওয়া দরকার।’’— এমন সব কড়া মন্তব্য করেছেন বিচারপতিরা। পাশাপাশি দুই টেলিকম সংস্থা এবং ওই আধিকারিককে আদালত অবমাননার নোটিসও ধরিয়েছে বিচারপতি অরুণ মিশ্রর বেঞ্চ।

আদালত আদেশানুসারে না করার কারণ ব্যাখ্যা দিয়ে আদালতে আগামী ১৭ মার্চের মধ্যে উত্তর দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ১৭ মার্চ। স্পেকট্রামের জন্য ডিরেক্টরেট অব টেলিকমের কাছে ভোডাফোনের দেনা ৫০ হাজার কোটি টাকা। ভারতী এয়ারটেলের ঋণ বকেয়া রয়েছে ৩৫ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া এমটিএনএল, বিএসএনএল, রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস, টাটা কমিউনিকেশনসেরও ৯২ হাজার কোটি টাকা বকেয়া। গত বছরের অক্টোবরে দুই সংস্থাকেই এই পাওনা মিটিয়ে দিতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু সেই টাকা এখনও না মেটানোয় দুই সংস্থার কর্তাদের উপর চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতিরা। শুক্রবার সব সংস্থার চিফ ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টরদের আগামী ১৭ মার্চ আদালতে হাজিরা দিয়ে কারণ ব্যাখ্যা করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এটাই তাঁদের সাফাইয়ের ‘শেষ সুযোগ’ বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। বিচারপতি অরুণ মিশ্র বলেন, ‘‘সব ধরনের দুর্নীতি বন্ধ হওয়া দরকার। এটাই তাঁদের শেষ সুযোগ ও শেষ হুঁশিয়ারি।’’ টেলিকম সংস্থাগুলি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে বিন্দুমাত্র সম্মান দেখায়নি বলেও মন্তব্য করেন বিচারপতি মিশ্র।

২০১৯ সালের সুপ্রিম কোর্টের ওই নির্দেশের পর ডিরেক্টরেট অব টেলিকমের এক কর্তা একটি নির্দেশিকা জারি করেন। তার জেরে শীর্ষ আদালতের রায়ে কার্যত স্থগিতাদেশের পরিস্থিতি তৈরি হয়। ওই আধিকারিককে এ দিন নোটিস ধরিয়ে কার্যত জেলে পোরার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিচারপতিরা। আজ শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে বেঞ্চের নির্দেশ, সন্ধ্যার মধ্যে ওই অফিসারকে বরখাস্ত করা হোক। নয়তো তিনি জেলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকুন। মামলার অন্য দুই বিচারপতি এস এ নাজির এবং এম আর শাহ ওই আধিকারিককে আরও কড়া ভাষায় ভর্ৎসনা করে বলেন, আমরা কি সুপ্রিম কোর্ট বন্ধ করে দেব? দেশে কি কোনও আইন কানুন আছে? একজন সরকারি আধিকারিক কী করে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রদ করতে পারেন? তাঁর (ওই আধিকারিক) বিরুদ্ধে সরকার কি ব্যবস্থা নিয়েছে? সলিসিটর জেনারেল আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন যে তিনি আদালতের উদ্বেগের বিষয়টি দেখবেন। কিন্তু বিচারপতি অরুণ মিশ্র সেই যুক্তি উড়িয়ে বলেন, ওই অফিসারের পক্ষে সাফাইয়ে আর কিছু বলার থাকতে পারে না। তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ‘‘এটা কি টাকার খেলা নয়? কে এগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা করছে? কার মদতে উনি (ওই আধিকারিক) এ সব করেছেন? আমাদের কি এটা বলব যে, যাঁরা পাওনা মেটাতে চান না, তাঁদের বিরুদ্ধে হাত গুটিয়ে বসেছিলেন ওই অফিসার? আমরা ওঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার প্রক্রিয়া শুরু করছি।’’

‘‘যে সব ঘটনা ঘটেছে, তাতে আমাদের বিবেক ধাক্কা খেয়েছে। আমরা টেলিকম সংস্থাগুলির রিভিউ পিটিশন খারিজ করেছিলাম। তার পরেও একটা পয়সাও জমা পড়েনি।’’— এই মন্তব্য করে তিন বিচারপতির বেঞ্চ আরও বলে, একজন ডেস্ক অফিসার রয়েছেন, যাঁর ‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের উপরেও স্থগিতাদেশ দেওয়ার ঔদ্ধত্য রয়েছে’। গোটা বিষয়টি নিয়ে বিচারপতিরা যে চরম হতাশ ও ক্রুদ্ধ তা বোঝা গিয়েছে আজকের শুনানিতে বিচারপতি অরুণ মিশ্রের নিজেকে নিয়ে মন্তব্যেও। তিনি বলেন, ‘‘আমি নিজের কথা ভাবি না। কিন্তু আইন ব্যবস্থায় এটা কি হচ্ছে? এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *