নিজস্ব প্রতিনিধি, চড়িলাম, ৩০ জানুয়ারি৷৷ পেটের তাগিদে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন, কিন্তু বাড়ি ফেরা হল না ত্রিপুরার এক যুবকের৷ সিপাহিজলা জেলার মধুপুর থানাধীন পুরাথল রাজনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা মণির হুসেন (২৩) মালয়েশিয়ায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে খবর ছড়িয়েছে৷ বুধবার সকালে তাঁর মৃত্যুর খবর বাড়িতে পৌঁছলে পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন৷ যুবকটি মালেয়শিয়ায় একটি হোস্টেলে কুক হিসেবে কর্মরত ছিলেন৷ তবে, দিন যতই যাচ্ছে মণির হুসেনের মৃত্যুর কারণ নিয়ে চলছে নানা কথা৷ পরিবারের লোকজনও সঠিক ভাবে কিছু বলতে পারছে না৷ এও খবর রটেছে এনকেফেলাইটিসে নাকি ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে৷
মণির হুসেনের দাদু সাহিদ মিয়াঁ জানিয়েছেন, ২০১৮ সালে মালয়েশিয়ায় কাজের সন্ধানে গিয়েছিলেন তাঁর নাতি৷ সেখানে চাকরিও হয়েছিল তাঁর৷ কিন্ত, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হবে তা এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না৷ দাদু সাহিদ বলেন, ২০১৬ সালে মণির বিয়ে করেছিলেন৷ কিন্ত অধিক রোজগারের জন্য সদূর মালয়েশিয়ায় পাড়ি দেন৷ তিনি জানান, ত্রিপুরা সরকারের সাথে যোগাযোগ করে তাঁর মৃতদেহ বাড়িতে আনার চেষ্টা হচ্ছে৷ কিন্তু, কবে নাগাদ তাঁর মৃতদেহ বাড়িতে ফিরবে তা বলতে পারছেন না তিনি৷
মণিরের বাবা শাহজাহান মিয়াঁ পুত্রশোকে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন৷ তিনি বলেন, মণির-সহ তাঁর চার ছেলে এবং এক কন্যা রয়েছে৷ মণির পরিবারের মূল অর্থ উপার্জনকারী ছিলেন৷ মণিরের মৃত্যুতে পুত্রবধূ এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জীবিকা নির্বাহ নিয়ে তিনি ভীষণ চিন্তায় পড়েছেন৷
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদেশে চাকুরী করলেও নিয়মিত বাড়ীর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতো৷ প্রায় ছয়দিন আগে ইমো সিস্টেমে ভিডিও কলিং এর মাধ্যমে মোবাইলে পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলেছিল৷ কিন্তু, গত চারদিন যাবৎ মণির হোসেনকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না৷ বাধ্য হয়ে পরিবারের লোকজন চেতক নামের ওই হোটেলের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে৷ কর্তৃপক্ষ নাকি জানায় মণির হুসেন শারীরিক দিক দিয়ে আসুস্থ৷ মালয়েশিয়ার একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷ এরই মধ্যে পরিবারে আসে দুঃসংবাদ৷ হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায় মণির হুসেনের মৃত্যু হয়েছে৷ কর্তৃপক্ষ আরও জানায় কয়েকদিন ধরেই মণির হুসেনের জ্বর ও শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল৷ রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়৷ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্ত জমাট বেঁধে যায়৷ তাতেই মণির হুসেনের মৃত্যু হয়৷
এদিকে, ভারত ও মালয়েশিয়া সরকারের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে মণির হুসেনের মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ সেই দেশ থেকে বিশালগড়ের পুরাথলস্থিত বাড়িতে মণির হুসেনের কফিনবন্দি মৃতদেহ আসতে কমপক্ষে এক থেকে দেড়মাস সময় লেগে যাবে বলে একটি সূত্রে খবর৷ প্রসঙ্গত, করোনা ভাইরাসের প্রকোপে ভারতে কেরালা ও উত্তরপ্রদেশে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে৷ এরপর গোটা দেশেই বিমানবন্দরে নজরদারী বাড়ানো হয়েছে৷ আগরতলায় বীর বিক্রম বিমানবন্দরেও কঠোর নজরদারী চালানো হচ্ছে বলে খবর৷