কলকাতা, ২৭ জানুয়ারি, (হি.স.): “অভিন্দন যাত্রা আসলে ওদের বিসর্জন যাত্রা| এটা মাথায় রাখবেন|” এনআরসি, এনপিআর, সিএএ-র বিরোধিতা করতে গিয়ে সোমবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় এই ভাষাতেই কেন্দ্রের শাসক দলকে এক হাত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়|
বিজেপির অভিনন্দন যাত্রাকে ব্যঙ্গ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ওটা কিসের যাত্রা? যেন রাজা-রানীর কাছে এসেছে| ওটা আসলে ওদের বিসর্জন যাত্রা|” এর পর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলা কিন্তু খুব শক্তিশালী| দেশকে স্বাধীন করেছে| নেতাজি সুভাষচন্দ্র, শ্রীরামকৃষ্ণের আদর্শ বহন করে নিয়ে এসেছে বাংলা| নেহেরু লিয়াকত চুক্তি, ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি অনুযায়ী যারা দেশের নাগরিক হয়েছেন, তাঁরা যদি বিদেশি হয়ে যান, তাহলে তো সর্বনাশ! এটা একটা মৃত্যুর খেলা| এই ফাঁদে পা দেবেন না|”
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আবারও বলছি এই আইন বাতিল করতে হবে। ইতিহাস বদলাতে চাইছে বিজেপি। ওরা দেশকে ভাঙতে চাইছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন শুধুমাত্র হিন্দু বা মুসলিমের বিষয় নয়। এটা মানবিকতার লজ্জা। বিজেপি নিজেদের রাজনৈতিক এজেন্ডা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে দেশকে রসাতলে পাঠাচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ওরা বাবা-মায়ের জন্মের শংসাপত্র দেখতে চাইছে| যারা দিতে পারছে না, তাদের বলছে এটা বাধ্যতামূলক নয়| ব্যাংকে কখনও বলছে আধার বাধ্যতামূলক, কখনও বলছে বাধ্যতামূলক নয়| কিন্তু আইনে লিখিতভাবে এটা বলছে না| পরে এই না দেখানটাকেই ওরা ইস্যু করবে| বন্ধুদের বলছি সবাইকে বোঝান- এনপিআর মানবো না| তাহলে এনআরসি-কে সমর্থন করতে হবে| সিএএকে সমর্থন করতে হবে| ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়| ঝগড়া না করেসবাই একসঙ্গে আন্দোলন করি স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে| এই আইন সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক| সংবিধানের আত্মা কে অপমান করার সামিল| এই আইন অমানবিক, ধর্মনিরপেক্ষতার পরিপন্থী|
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই আইন মানতে পারছিনা| সংবিধানের প্রতি আমাদের কর্তব্য আছে| আদর্শ যদি বাঁচাতে না পারি দেশ বাঁচবে না| সেক্ষেত্রে রাজ্য বাঁচবে না, সমাজ বাঁচবে না, ব্যক্তিও বাঁচবে না| আমার ধর্ম আমার কাছে, তোমার ধর্ম তোমার কাছে| অনেকবার একথা বলেছি| ভারতের সংবিধানকে রাজনৈতিকভাবে অপব্যবহার করে দেশকে খন্ডিত করার চেষ্টা করছে বিজেপি| ওরা যদি মনে করে দেশ কোন পথে চলবে ওরা ঠিক করবে, তা হতে পারে না| ইতিহাসকে বদলে দিলাম, এটাও হতে দেওয়া যায় না| এক সময় নেলসন ম্যান্ডেলার আন্দোলন দেখেছি|কিভাবে বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন উনি| এখানে এটা হিন্দু মুসলমানের ব্যাপার নয়, বৃহত্তর সমাজের ব্যাপার| যা চলছে তা সংস্কৃতির লজ্জা| আইন পাশ হয়েছে গায়ের জোরে| সংবিধান খন্ডন করা যায় না|
কিছু কিছু রাজ্য থেকে বাঙ্গালীদের তাড়ানো হচ্ছে| এই মন্তব্য করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আর বাঙালি যদি এখান থেকে অন্যদের তাড়ায় তাহলে কী হবে? আগুন জ্বলবে| ডাউটফুল সিটিজেন, এনপিআর-এর নামে যা হচ্ছে আটকাতে হবে| এত টেনশন নিয়ে কখনও কেউ থাকতে পারে নাকি? মানুষের বাঁচার অধিকার আছে| সংকীর্ণতার, জাতপাতের ভিত্তিতে এসব হচ্ছে| এটা বিজেপির প্রতিশোধ মূলক আচরণ| আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে দেখাবো| আমরা ছিলাম, আমরা আছি, আমরা থাকব| জাতপাতের ভিত্তিতে ভাগ হতে দেব না|
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যারা অনুপ্রবেশকারী অনুপ্রবেশকারী বলে চিৎকার করছেন, তাদের বলছি সীমান্ত কাদের হাতে? কেন্দ্রের হাতে। নেপাল-দার্জিলিংয়ের সীমান্ত কেন্দ্রের হাতে। বিএসএফ, এসএসবি তো আমাদের নয়। আগে রাজনীতি করত না। এখন গ্রামে গ্রামে ঢুকে গুলি করছে। আগে কলকাতা পুলিশকে সব জানাত। বিমানবন্দর তো আমাদের হাতে নয়। সিআইএসএফ দেখে। আমরা কী করে জানব? আগে কলকাতা পুলিশকে সব জানাত| এখন জানাচ্ছে না।”