ভুল বুঝিয়ে এনএইচআইডিসিএল-কে কাজের হস্তান্তর হয়েছে, দাবি সুদীপের, জাতীয় সড়কের নির্মাণ ও সংস্কারে গতি আনতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, বললেন মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ২০ জানুয়ারি (হি.স.) : জাতীয় সড়ক নির্মাণ এবং সংস্কারের দায়িত্ব এনএইচআইডিসিএল (ন্যাশনাল হাইওয়ে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড)-কে হস্তান্তরে ত্রিপুরার ৯ শতাংশ রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে৷ এই দাবি করে ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্য সুদীপ রায় বর্মণ বলেন, ভুল বুঝিয়ে সরকারি কাজ কেন্দ্রের অধীনস্থ সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এই দাবি খারিজ করে দিয়ে বলেন, কাজের গতি বাড়ানোর লক্ষ্যেই এনএইচআইডিসিএলকে জাতীয় সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের দায়িত্ব হস্তান্তর করেছে৷ এই বিষয়ে এদিন বিধানসভায় সুদীপ রায় বর্মণ এবং মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের মধ্যে দীর্ঘ সময় বাদানুবাদ হয়েছে৷ যুক্তি পাল্টা যুক্তি উভয়েই তুলে ধরেছেন৷

এদিন বিধানসভায় বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণের তারকা চিহ্ণ প্রশ্ণের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী তথা পূর্তমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, রাজ্য পূর্ত দপ্তরের অধীনে জাতীয় সড়ক শাখা রয়েছে৷ ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে ওই শাখা গঠন করা হয়েছে৷ বর্তমানে ওই শাখার অধীনে তিনটি ডিভিশন ও পাঁচটি সাব ডিভিশন অফিস রয়েছে৷ এদিন তিনি রাজ্য পূর্ত দপ্তরের জাতীয় সড়ক শাখার কাজ এনএইচআইডিসিএল-কে হস্তান্তরের কারণ হিসাবে বলেন, জাতীয় সড়কের উন্নতিকরণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজ কেন্দ্রীয় সরকারের সড়ক পরিবহন এবং মহা সড়ক মন্ত্রক কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে৷ জাতীয় সড়ক উন্নতিকরণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজের দায়িত্ব এনএইচআইডিসিএল, এনএইচএআই, বিআরও এবং রাজ্য পূর্ত দপ্তর-র মধ্যে কোন সংস্থাকে ন্যস্ত করা হবে তাও কেন্দ্রীয় মন্ত্রক স্থির করে দেয়৷ তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের সড়ক পরিবহন এবং মহাসড়ক মন্ত্রক ২০১৮ সালের ১৭ জুলাই এবং ২০ আগস্ট বিজ্ঞপ্তি জারি করে ত্রিপুরার জাতীয় সড়কগুলির উন্নতিকরণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব এনএইচআইডিসিএল-র উপর ন্যস্ত করা হয়৷ তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ত্রিপুরার জাতীয় সড়কের উন্নতিকরণ ও সংস্কারের কাজ পূর্ত দপ্তরের মহা সড়ক শাখার হাত থেকে এনএইচআইডিসিএল-র কাছে পর্যায়ক্রমে হস্তান্তর করা হচ্ছে৷

এবিষয়ে বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ বলেন, এনএইচআইডিসিএল-কে কাজ হস্তান্তর করে রাজ্যের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে৷ মোট কাজের ৯ শতাংশ ক্ষতি ত্রিপুরাকে বহন করতে হচ্ছে৷ তাঁর কথায়, নিয়ম অনুযায়ী কোন সংস্থাকে কাজের বরাত দিতে গেলে দরপত্র আহ্বান করতে হয়৷ কিন্তু, কোন কারণ ছাড়া কেন এনএইচআইডিসিএল-কে দেওয়া হল তা বোঝা যাচ্ছে না৷ তিনি অনুমান করে বলেন, এই সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রীর অগোচরে হতে পারে৷ তাতে তাঁর আশঙ্কা, এই সিদ্ধান্তের বিরূপ প্রতিক্রিয়া ভবিষ্যতে তাড়া করতে পারে৷

সুদীপবাবুর বক্তব্যের পাল্টা যুক্তি তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের দাবি, ত্রিপুরা সরকার প্রচন্ড গতিতে কাজ করতে চাইছে৷ কিন্তু, পূর্ত দপ্তরের হাতে কাজের দায়িত্ব থাকলে অর্থের বরাদ্দের হার আশানুরূপ হচ্ছে না৷ তাই, এনএইচআইডিসিএল-কে কাজের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ একটি তথ্য তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পূর্ত দপ্তরের হাতে কাজের দায়িত্ব থাকাকালীন ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৭ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা পেয়েছে ত্রিপুরা৷ অথচ এনএইচআইডিসিএল-র হাতে কাজের দায়িত্ব তুলে দিতেই সংস্কার খাতে ৩ গুণ বেড়ে ত্রিপুরা পেয়েছে ৪২ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা৷ মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ২০১৬ সাল থেকে পূর্ত দপ্তরের জাতীয় সড়ক শাখা তিনটি ডিপিআর কেন্দ্রের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছিল৷ কিন্তু, ২টি ডিপিআরের অনুমোদন মিলেছে৷ তেমনি, জোলাইবাড়ি থেকে বিলোনিয়া জাতীয় সড়কের ডিপিআর এখনো অনুমোদিত হয়নি৷ মুখ্যমন্ত্রী এদিন জোর গলায় বলেন, এনএইচআইডিসিএল-কে জাতীয় সড়ক উন্নতিকরণের দায়িত্ব দেওয়ামাত্রই ৬টি কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে৷ তাতে ব্যয় হবে ১১৮ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা৷ মুখ্যমন্ত্রী এদিন বোঝাতে চেয়েছেন, এনএইচআইডিসিএল-কে সরাসরি কাজের দায়িত্ব দেওয়া হলে তাতে প্রাধান্য পাওয়া যায়৷ সেই তুলনায় পূর্ত দপ্তরের মাধ্যমে কাজ করানো হলে কাজের অনুমোদন পেতে অনেকটা সময় ব্যয় হয়ে যায়৷

কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রীর এই যুক্তিতে সুদীপ রায় বর্মণ আশ্বস্ত হতে পারেননি৷ তিনি পাল্টা যুক্তি তুলে ধরে বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর তদানীন্তন উপদেষ্টা বিজয় ছিববর এনএইচআইডিসিএল-কে রাজ্যের সমস্ত জাতীয় সড়কের নির্মাণ ও সংস্কার কাজের দায়িত্ব তুলে দেওয়ার পেছনে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন৷ তাঁর পরামর্শেই এই সিদ্ধান্ত হয়তো মন্ত্রিসভার অগোচরেই নেওয়া হয়েছে৷ তিনি বিদ্রূপের সুরে বলেন, বিজয় ছিববর এনএইচআইডিসিএল-কে ত্রিপুরার কাজের দায়িত্ব তুলে দিয়েই ওই সংস্থাতে চাকুরিতে যোগ দিয়েছেন৷ সুদীপবাবুর দাবি, মুখ্যমন্ত্রীকে ভুল বোঝানো হয়েছে৷ তাই, ওই সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া উচিত হবে৷

তাতে মুখ্যমন্ত্রী আবারও যুক্তি তুলে ধরে বলেন, কাজের গতির প্রশ্ণেই এনএইচআইডিসিএল-কে সমস্ত জাতীয় সড়কের কাজ হস্তান্তর করা হয়েছে৷ তাতে, দুর্নীতির কোন প্রশ্ণই আসে না৷ মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, এনএইচআইডিসিএল-র হাতে কাজের দায়িত্ব দেওয়া হলে কেন্দ্রীয় সরকার অধিক অর্থ বরাদ্দ করে৷ মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবি খারিজ করে দিয়ে পাল্টা সুদীপবাবুর বক্তব্য, কেন্দ্রীয় অধীনস্থ সংস্থার হাতে কাজের দায়িত্ব থাকলেই অধিক অর্থ বরাদ্দ হবে এমন কেন্দ্রীয় সরকারের এমন দৃষ্টিভঙ্গী আমি মনে করি না৷ পরিশেষে, মুখ্যমন্ত্রী সমস্ত বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে বিধানসভায় আশ্বস্ত করেছেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *