ত্রিপুরায় মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে, ব্রু শরণার্থীরাও বাঙালি উদ্বাস্তুদের জন্য সম সহায়তা চেয়েছেন : মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ২০ জানুয়ারি (হি. স.) : মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে। কারণ, ব্রু শরণার্থীরা এখন কাঞ্চনপুরে বাঙালি উদ্বাস্তুদের তাঁদের মতোই সহায়তা প্রদান হোক চেয়েছেন। ব্রু শরণার্থীরা ত্রিপুরা সরকারকে এই মর্মে চিঠি দিয়েছেন।আজ দ্বাদশ বিধানসভার ষষ্ঠ অধিবেশনে রাজ্যপালের ভাষণের উপর ধন্যবাদসূচক প্রস্তাবের উপর আলোচনা করতে গিয়ে এ-কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷

তাঁর মতে, নতুন সরকার গড়ার পর ত্রিপুরার মানুষের মানসিকতার সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হয়েছে৷ পরিবর্তন হয়েছে মানুষের ভাবমুর্তি, স্বভাব, মানসিকতা ও কর্মসংস্কৃতির৷ বেড়েছে কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা, সময়ের কাজ সময়ে শেষ করা, সফলতার হার ও স্বচ্ছতা৷ এর সঙ্গে বেড়েছে একত্মতাবোধ৷ উদাহরণ হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ব্রু শরণার্থীদের ত্রিপুরাতে পুনর্বাসনের সিদ্ধান্তের পর, তাদের স্থান দেওয়ার জন্য যে সকল স্থানীয় বাঙালিরা উদ্বাস্তু হয়েছেন, তাদেরকেও সরকার পক্ষ থেকে একই রকম সহায়তা করার জন্য ব্রু শরণার্থীদের কাছ থেকে রাজ্য সরকারের কাছে চিঠি এসেছে৷

মুখ্যমন্ত্রী এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে আরও বলেন, আগে কেবলই শুনতে হত, আমরা পিছিয়ে পড়া রাজ্যের জনগণ৷ কিন্তু এখন প্রধানমন্ত্রী দেশের জনগণের নিকট ত্রিপুরার মানুষের মানসিকতাকে অনুসরণ করতে বলেন৷ ত্রিপুরার জনগণের কাছে এর চাইতে গৌরবের বিষয় আর কি হতে পারে, দাবি মুখ্যমন্ত্রীর৷

তিনি বলেন, আমাদের দেশ পরিচালনায় রয়েছে ভারতের সংবিধান ও দীন দয়াল উপাধ্যায়ের একাত্ম মানবতাবাদ৷ তাঁর দাবি, বর্তমান সরকারের আমলে জি এস টি সংগ্রহ বেড়েছে, টি এস আর ও পুলিশের ড্রেসিং এলাউন্স বৃদ্ধি করা হয়েছে৷ নারী নির্যাতন ও সড়ক দুর্ঘটনার হার হ্রাস পেয়েছে৷ সরকারি বিভিন্ন পরিষেবাকে ডিজিটালাইজড করে স্বচ্ছতা আনার প্রক্রিয়া জারি রয়েছে৷

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পঞ্চদশ অর্থকমিশনের আর্থিক ঘোষণা আসার পরই শূণ্যপদগুলি পূরণ করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে৷ ইতিমধ্যেই এ সরকারের সময়কালে খালি হয়ে যাওয়া সকল শূণ্যপদগুলির জন্য অর্থ দপ্তরের কাছ থেকে আর্থিক অনুমোদন নিয়ে রাখা হয়েছে৷ তাঁর বক্তব্য, সরকার সাধ্যের মধ্যে সকলের জন্যই কাজ করতে সচেষ্ট৷

বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রেগায় শ্রমদিবস বাড়িয়ে ৪ কোটি করা হয়েছে৷ নতুন সরকার সেজ, এস ও পি, গোমতী প্রোটোকল রোড নির্মাণে সচেষ্ট রয়েছে৷ অটল জলধারা মিশনে ২০২২ সালের মধ্যে রাজ্যের প্রতিটি বাড়িতে পানীয়জলের সংযোগ দেওয়া হবে৷ ইতিমধ্যে ৫২ হাজার নতুন সংযোগ দেওয়া হয়েছে৷ তিনি বলেন, নতুন সরকার জৈব পদ্ধতিতে চাষের জন্য চাষিদের উৎসাহিত করছে৷ রাজ্যের ৬,০০০ হেক্টর জমিকে এরজন্য চিহ্ণিত করা হয়েছে৷ এরফলে ৯,০০০ জন কৃষক উপকৃত হবেন৷ তাছাড়া দেশের মধ্যে ত্রিপুরাতেই যাতে প্রথম জৈব পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা যায়, সে লক্ষ্যেও সরকার কাজ করছে৷

তাঁর কথায়, রাজ্য স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে চলছে৷ জব ক্রিয়েটর তৈরী হচ্ছে৷ সরকারি সেক্টরও যে ব্যবসা এবং আয় করতে পারে তা এরাজ্যের সরকারি অধিগৃহীত সংস্থাগুলো করে দেখাচ্ছে৷ তাঁর দাবি, বর্তমানে বহির্রাজ্যের মানুষ এ রাজ্যে ভ্রমণের জন্য আসছেন৷ রাজ্যে পর্যটকের সংখ্যা উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ তিনি বলেন, রাজ্যের ৯১ শতাংশ উজ্জলা যোজনার প্রকৃত সুুবিধাভোগীদের গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হয়েছে৷ ই-পি ডি এস চালু করার ক্ষেত্রে সারা দেশের প্রথম ৩টি রাজ্যের মধ্যে ত্রিপুরা অন্যতম৷

রাজ্যপালের ভাষণের উপর আলোচনা করতে গিয়ে পরিষদীয় মন্ত্রী তথা শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ বলেন, রাজ্যপালের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে এই সরকারের নীতি, দৃষ্টিভঙ্গী ও দিশা৷ এই রাজ্যকে মডেল রাজ্য বানানোর যে সংকল্প নিয়ে রাজ্য সরকার কাজ করছে তার প্রতিফলন ঘটেছে রাজ্যপালের ভাষণে৷ তিনি বলেন, এই সরকার প্রকৃতপক্ষেই জনগণের সরকার৷ এছাড়াও তিনি কৃষি ও কৃষক কল্যাণ, গ্রামোন্নয়ন, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া, খাদ্য, জনসংভরণ ও ক্রেতা সুুরক্ষা, বিদ্যুৎ, উপজাতি কল্যাণ, পূর্ত প্রভৃতি দপ্তরের কর্মসূচি নিয়েও বিস্তৃত আলোচনা করেন৷ এছাড়াও আলোচনা করেন উপজাতি কল্যাণ মন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া, বিধায়ক সুুদীপ রায় বর্মণ, বিধায়ক অরুণ চন্দ্র ভৌমিক ও বিধায়ক সুুভাষ দাস৷ আলোচনার পর রাজ্যপালের ভাষণের উপর ধন্যবাদ সূচক প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। বিরোধীরা রাজ্যপালের ভাষণের উপর ধান্যবাদসূচক আলোচনার সময় সভায় উপস্থিত ছিলেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *