গুণগত শিক্ষার ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে : মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২ জানুয়ারি৷৷ রাজ্যকে সার্বিক উন্নতির লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুণগত শিক্ষার প্রসার একান্ত প্রয়োজন৷ তাই ত্রিপুরায় নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে গুণগত শিক্ষা প্রদানের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হচ্ছে৷ এজন্য এনসিইআরটি পাঠ্যক্রম চালু-সহ রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে৷ কারণ রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার কোনও কিছুর সঙ্গে কখনও আপস করবে না৷ বৃহস্পতিবার মহারানি তুলসিবতী উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে তিনদিন ব্যাপী ৪৭-তম রাজ্যভিত্তিক বিজ্ঞান, অঙ্ক এবং পরিবেশ বিষয়ক প্রদর্শনীর উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এ কথা বলেন৷


মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে এনসিইআরটি পাঠ্যক্রম চালু করার ক্ষেত্রে বাধাদানের চেষ্টাও করা হয়েছিল৷ কিন্তু শিক্ষা দফতর খুব কম সময়ের মধ্যে সাফল্যের সঙ্গে এই পাঠ্যক্রম চালু করতে পেরেছে৷ ফলে রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা এখন থেকে জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় সাফল্য অর্জন করতে পারবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন৷
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ত্রিপুরায় গুণগত শিক্ষার প্রসারে এবং ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে দৃঢ় মানসিকতা তৈরি করার লক্ষ্যে শিক্ষা দফতর সারা রাজ্যে একই প্রশ্ণপত্রে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা চালু করেছে৷ রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছেলেমেয়েদের গুণগতমানের শিক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে একই ধরনের প্রশ্ণপত্রে পরীক্ষা নেওয়া একান্ত আবশ্যক ছিল৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরা সরকার চায় আরও বেশি ছাত্রছাত্রী বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহী হোক এবং রাজ্যের পাশাপাশি দেশের নাম উজ্জ্বল করুক৷

রাজ্যে বর্তমান সরকার আসার পর বেশি সংখ্যায় ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয় চালুর জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে এ বছর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের হারও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞান, জ্ঞান, শিক্ষা এই শব্দগুলির সার্থকতা তখনই আসবে যখন শিক্ষাব্যবস্থা সঠিক ব্যবস্থার মধ্যে থাকবে৷ বিগত সরকারের দীর্ঘ সময়কালে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা সঠিক ছিল না বলেই জাতীয় স্তরে রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা সেভাবে সাফল্য পায়নি৷ তিনি বলেন, শিক্ষকরা হলেন মানুষ গড়ার কারিগর৷ গুণগত শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে শিক্ষকদের আরও বেশি করে দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি৷


অনুষ্ঠান মঞ্চে ৪৭-তম বিজ্ঞান, অঙ্ক এবং পরিবেশ বিষয়ক প্রদর্শনী উপলক্ষ্যে স্মরণিকার আবরণ উন্মোচন করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ এছাড়া গত বছর কলকাতায় অনুষ্ঠিত পূর্বাঞ্চলীয় বিজ্ঞান মেলায় সাফল্য অর্জন করার জন্য তিন ছাত্রকে অনুষ্ঠানমঞ্চে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়৷ সংবর্ধনাস্বরূপ তাদের হাতে স্মারক উপহার তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী-সহ অনুষ্ঠানের অন্যান্য অতিথিগণ৷ অনুষ্ঠান শেষে ইসরোর একটি ভ্রাম্যমান গাড়ির ফিতা কেটে শুভ সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷
সভ্যতার অগ্রগতি এবং মুক্ত মনের বিকাশের জন্য বিজ্ঞান চর্চা অত্যন্ত প্রয়োজন৷ বিজ্ঞানের নিত্য নতুন আবিস্কার সভ্যতাকে বিকশিত করেছে এবং আমাদের জীবনযাত্রাকে আরামপ্রদ করেছে৷ বিজ্ঞান মেলায় অংশ নিয়ে এ-কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ৷ সাথে তিনি যোগ করেন, জেলাভিত্তিক বিজ্ঞান মেলায় আবার প্রদর্শিত মডেলের সংখ্যা বেড়েছে৷


তিনি বলেন, এন সি ই আর টি’র গাইড লাইন মেনেই এই ধরনের বিজ্ঞান মেলা ও প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়ে থাকে৷ এবারের রাজ্যভিত্তিক এই বিজ্ঞান, অংক ও পরিবেশ বিষয়ক প্রদশর্নীতে রাজ্যের ৮টি জেলা থেকে ১০টি করে মোট ৮০টি মডেল প্রদর্শিত হবে৷ তার কথায়, জেলাভিত্তিক বিজ্ঞান মেলাগুলিতে গত বছরের তুলনায় এবার বেশী মডেল প্রদর্শিত হয়েছে৷ জেলাভিত্তিক বিজ্ঞান মেলাগুলিতে যেখানে গতবছর ৪০৭টি মডেল প্রদর্শিত হয়েছিল সেখানে এবছর জেলাভিত্তিক বিজ্ঞান মেলায় ৬৮৮টি মডেল প্রদর্শিত হয়েছে৷ এবারের বিজ্ঞান, অংক ও পরিবেশ বিষয়ক প্রদর্শনী ও মেলার অন্যতম আকর্ষণ হল মেলায় ইসরোর ১২ জন বিজ্ঞানী উপস্থিত থাকবেন এবং আলোচনায় অংশ নেবেন৷ এরমধ্যে আমাদের রাজ্যের ২ জন বিজ্ঞানীও রয়েছেন৷ ইসরোর পদ্মশ্রী প্রাপক বিজ্ঞানী ভি. আধিমূর্তিও থাকবেন যিনি চন্দ্রযান -১ এবং ২ অভিযানের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন৷


শিক্ষামন্ত্রী বলেন, রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে রাজ্য সরকার শিক্ষাকে বেশী গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে৷ বিজ্ঞান ও অংক এই দুটি বিষয়ে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের খঁজে বের করার লক্ষ্যে এবছর থেকে ’সায়েন্স এণ্ড ম্যাথ টেলেন্ট সার্চ’ নামে নতুন একটি প্রকল্প চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার৷ এই প্রকল্পে দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণীর ২০০ জন অংক এবং ২০০ জন বিজ্ঞান বিষয়ে মেধাবী ছাত্রছাত্রীকে ১৫ মাসে ৫০০ টাকা করে স্কলারশীপ দেওয়া হবে৷ এছাড়াও রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে জাতীয়স্তরে শীর্ষে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে সুুপার থার্টি, সুকল অব এক্সেলেন্স ইত্যাদি প্রকল্পও রাজ্য সরকার চালু করেছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *