ইন্দো-বাংলা সম্প্রীতির যৌথ উদ্যোগ, ১০ বছর বাদে ঘরে ফিরে গেলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তানসেন

আগরতলা, ২ জানুয়ারি (হিঃসঃ)৷৷ দীর্ঘ ১০ বছর বাদে দেশে ফিরলেন তানসেন মিয়া৷ বাংলাদেশী ওই নাগরিক মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে আগরতলা আখাউড়া চেকপোস্ট দিয়ে এদেশে প্রবেশ করেছিলেন৷ তারপর তার খোঁজ পাওয়া গিয়েছে তামিলনাড়ুর কালপাক্কামে৷ গতকাল রাতে আগরতলায় আখাউড়া সীমান্তে পরিবারের সদস্যদের হাতে তাকে তোলে দেওয়া হয়েছে৷ এখন তিনি সুস্থ৷ তাই, এতকাল বাদে পরিবার এবং দেশে ফিরে অনুভূতি জানাতে চোখ ছলছল করছিল তার৷ দুই দেশের কূটনৈতিক স্তরের চেষ্টায় হারানো মানুষ ফিরে পেয়ে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলেন তানসেন মিয়ার স্ত্রী মীনা বেগম৷ শুধু তার চোখেমুখে প্রিয়জনকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ ফুটে উঠেছে৷

এর জন্য তামিলনাড়ুর এস্পায়ারিং লিভস স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকেও কৃতজ্ঞাতা জানাতে ভুলেননি তাঁরা৷ অবশ্য, তানসেনের দেশে ফিরে যাওয়ায় ইন- বাংলা সম্প্রীতির এক নতুন অধ্যায় রচিত হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে৷
এস্পায়ারিং লিভস স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য মনীশ কুমার পুরো ঘটনা তুলে ধরে জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন নিখোঁজদের খোঁজে তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়াই আমাদের প্রধান কাজ৷ এখন পর্যন্ত এমন ১০৪ জন নিজের বাড়ি ফিরে যেতে পেরেছে৷ তিনি বলেন, ২০১৮ সালের অক্টোবরে তামিলনাড়ুর কাঞ্চিপুরম জেলায় লিটল হার্টস হোমে গিয়েছিলেন৷ ওই হোম মূলত মানসিক ভারসাম্যহীনদের পরিচর্যা করে৷ সেখানেই তানসেন মিয়ার সাথে আমার দেখা হয়৷ মনীশের কথায়, তানসেনের সাথে কথা বলে বুঝতে পারেন তিনি বাংলা বুঝেন৷ তাই, তার সাথে বাংলাতে কথা বলার চেষ্টা করি৷

তাতে তিনি আমাকে ভরসা করে সমস্ত বিষয় জানান৷ মনীশ বলেন, তাঁর সাথে কথা বলেই জানতে পেরেছিলাম তানসেন মিয়া এদেশের নাগরিক নন৷ তিনি বাংলাদেশ থেকে এদেশে এসেছেন৷ কিন্তু তামিলনাড়ু কিভাবে পৌছেছে তা তিনি বলতে পারেননি৷ শুধু বলেছেন, আগরতলায় আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে তিনি এপারে এসেছেন৷ তারপর একের পর এক ট্রেন বদল করে তিনি তামিলনাড়ু পৌছেছেন৷ মনীশ জানিয়েছেন, তানসেন নিজেই তার বাংলাদেশের ঠিকানা দিয়েছেন আমাদের৷ আমরা সেই ঠিকানায় খোঁজ করে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেছি৷


মনীশের দাবি, দিল্লিস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং ভারত সরকারের সহায়তায় তাকে দেশে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে৷ কারণ, তিনি বেআইনিভাবে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন৷ তবে, ভারতে তাঁকে চিকিৎসা করা হয়েছে৷ তাতে, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছেন৷ লিটল হার্টস সংস্থাই সমস্ত চিকিৎসার বন্দোবস্ত করেছে৷ মনীশ বলেন, ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর থেকে তানসেন মিয়া লিটল হার্টস সংস্থার তত্বাবধানে রয়েছেন৷ পুলিশ তাকে উদ্ধার করে সেখানে নিয়ে গিয়েছিল৷

কারণ, তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন৷মনীশের কথায়, তানসেন বাংলাদেশের চিটাগাং ডিভিশনের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার শিবপুরের ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা৷ বাংলাদেশ হাইকমিশন তার ঠিকানা নিশ্চিত করেছে৷ সে মোতাবেক গত ১৩ জুলাই তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ সম্ভব হয় আমাদের৷ এরপর থেকেই তাকে দেশে ফিরে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়৷ অবশেষে, গতকাল রাতে আগরতলায় আখাউড়া চেকপোস্ট দিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা তাকে বাড়ি ফিরে নিয়ে গেছেন, জানান মনীশ কুমার৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *