অযোধ্যয় তৈরি হবে শ্রীরামচন্দ্রের গগনচুম্বী মন্দির : অমিত শাহ

রাঁচি/ঘড়ওয়া, ২৮ নভেম্বর (হি.স.) : দেশের একতা ও অখণ্ডতা বজায় রাখার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার সততার সঙ্গে কাজ করে চলেছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বৃহস্পতিবার ঝাড়খন্ড বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফার শেষ পর্যায়ের নির্বাচনীয় প্রচারে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি এদিন ঝাড়খন্ডের চতরা ও ঘড়ওয়া জনসভা করেন। এদিনের প্রচারে রাম জন্মভূমির প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, ৭০ বছর ধরে চলা অযোধ্যার রাম জন্মভূমি মামলার রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এবার সেই পবিত্র ভূমিতে শ্রীরামচন্দ্রের গগনচুম্বী বিশাল মন্দির গড়ে তোলা হবে। কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকাকালীন ৩৭০ ধারাকে লালনপালন করে এসেছে। কিন্তু মোদী সরকার এই ধারাটি বিলুপ্ত করে নিজের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করেছে।

কংগ্রেসের কোলে বসে ক্ষমতার স্বাদ নিতে চাইছে হেমন্ত সোরেন। বৃহস্পতিবার ঘড়ওয়ার জনসভা থেকে ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চার সুপ্রিমোকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ।  
এদিন ঘড়ওয়ার নির্বাচনী জনসভা বক্তব্য রাখতে গিয়ে অমিত শাহ জানিয়েছেন, বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের সৎ প্রচেষ্টার জন্য এখন গোটা বিশ্বে ভারতের সম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্ষমতার লোভে ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চার সুপ্রিমো হেমন্ত সোরেন কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। ঝাড়খন্ডবাসীর পৃথক রাজ্য গঠনের দাবি কোনওদিনই মেনে নেয়নি কংগ্রেস। কংগ্রেসের কোলে বসে ক্ষমতার স্বাদ নিতে চায় হেমন্ত সোরেন। পাশাপাশি রাজ্যের বিজেপি সরকারের প্রসঙ্গ তুলে তিনি জানিয়েছেন, রঘুবর দাসের নেতৃত্বে ঝাড়খন্ড উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে। মাওবাদীদের বিরুদ্ধে সরব হয়ে তিনি জানিয়েছেন, রাজ্য থেকে মাওবাদীদের চিরকালের জন্য উপড়ে ফেলা হবে। বন্দুক-গুলি দিয়ে উন্নয়ন হয় না, ব্যালটের মাধ্যমেই উন্নয়ন সম্ভব।

রাজ্যের চার দফায় উন্নয়ন করবে বিজেপি সরকার। এই প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যবাসীদের স্থায়ী সরকার উপহার দেওয়ার পাশাপাশি ঝাড়খন্ডে চার দফায় উন্নয়নের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবে রঘুবর দাসের সরকার। গড়বা বিধানসভা কেন্দ্রে ৫১৫ কোটি ব্যায় করে সড়ক তৈরি করা হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে রাজ্যের প্রতিটি বাড়িতে পানীয় জল পৌছিয়ে যাবে।

এদিনের জনসভায় অমিত শাহের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজিপি ডি কে পান্ডে, সাংসদ বি ডি রাম, বিজেপি নেতা আদিত্য সাহু, জওয়াহর পাসওয়ান, গিরিন্দ্রনাথ পাণ্ডে, মুকেশ নিরঞ্জন সিনহা, বিজেপির জেলা সভাপতি ওমপ্রকাশ কেশিয়ারি এবং মুরলীশ্যাম সেনি।

এর আগে ঝাড়খন্ডের চতরায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে অমিত শাহ জানিয়েছেন, ৩৭০ ধারা এবং ৩৫এ বিলুপ্ত করে গোটা দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করার কাজ করেছে বিজেপি। এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করে বিজেপি নিজের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করেছে। কংগ্রেসের প্রবল বাধা সত্বেও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের ফলে অযোধ্যায় রাম মন্দির গড়ে তোলার রাস্তা খুলে গিয়েছে। কংগ্রেস ও ঝাড়খন্ড মুক্তিমোর্চার জোটকে কটাক্ষ করে অমিত শাহ প্রশ্ন তোলেন যে ঝাড়খন্ড রাজ্য গঠনের জন্য  কি করেছে শতাব্দী প্রাচীন দলটি সেই প্রশ্ন জোট শরিক কংগ্রেসকে করা উচিত হেমন্ত সোরেনের। ৬০ বছরের শাসনে কংগ্রেস ঝাড়খন্ডের জন্য কি করেছে সেই প্রশ্নও করা উচিত।

রাজ্যের মাওবাদীদের বাড়বাড়ন্ত কমে গিয়েছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, চতরা অঞ্চলে আগে মাওবাদী প্রভাবিত ছিল। বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় আসার আগে রাতের দিকে বরযাত্রী নিয়ে যেতে সাহস পেত না সাধারণ মানুষ। কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। এখন রাত ১২টাতেও বরযাত্রী নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মাওবাদীদের মাটির ২০ ফুট গভীরে পুঁতে দিয়েছে বিজেপি। রাজ্য যখনই কংগ্রেস ও ঝাড়খন্ড মুক্তিমোর্চার জোট ক্ষমতায় এসেছে তখনই প্রশাসনিক স্তরে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। রাজ্যে পাঁচ বছরের বিজেপি শাসনে প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুত পৌছিয়েছে। কৃষকদের আর্থিক সাহায্য করা হয়েছে। কন্যা সন্তানদের ৮০ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে।

রাজ্যের শিল্প সম্ভাবনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চতরায় প্রস্তাবিত ইস্পাত কারখানা গড়ে তোলা হবে। এতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। এখানে ৭৩ হাজার শৌচালয় গড়ে তোলার কাজ বিজেপি সরকার করেছে। কংগ্রেস এবং ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা জাতপাতের নামে রাজনীতি করে চলেছে। বিজেপি কোনও জাতপাতের নামে রাজনীতি করে না। নরেন্দ্র মোদীর একটি জাতির জন্য কাজ করে চলেছে, তা হল গরিব। যারা গরিব তাদের কাছে সরাসরি সরকারি সাহায্য পৌঁছিয়ে যাবে। সেই কাজই বিজেপি করছে। রাজ্যের ৩৮ লক্ষ গরিবদের বাড়িতে বিদ্যুত সরবরাহ করা হয়েছে। ৬০ বছরে যেখানে ১২ শতাংশ রাজ্যবাসীর ঘরে পানীয় জল সরবরাহের করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেখানে বিগত পাঁচ বছরে বিজেপি শাসনে সেই শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ শতাংশ।

ঝাড়খন্ডবাসীদের আবেগকে যে বিজেপি সম্মান দিয়েছে তার উল্লেখ করে তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্রে অটলবিহারি বাজপেয়ী সরকার গড়ার পরেই পৃথক রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ঝাড়খন্ড।
অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী বা ওবিসির উন্নয়ন নিয়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলতে গিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ জানিয়েছেন, ৭০ বছর ধরে শাসন করেও কংগ্রেস ওবিসিদের উন্নয়নের জন্য কখনও ভাবনা চিন্তা করেনি। ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় এসে ওবিসি মানুষদের সাংবিধানিক সম্মান দেওয়ার কাজ করেছে। ওবিসিদের জন্য কমিশন গঠন করে সেই কাজ করেছে মোদী সরকার। ৬০ বছর ক্ষমতায় থেকেও গরিবদের গ্যাস সিলিন্ডার থেকে বঞ্চিত করেছে কংগ্রেস। গরিবদের ছেলে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়ে উজ্জলা যোজনা মাধ্যমে মা ও বোনেদের গ্যাস সিলিন্ডার প্রদান করেছে। এমনকি বিদ্যুত সরবরাহের কাজও হয়েছে।

উল্লেখ করা যেতে পারে এদিন জনসভায় বক্তব্য রাখার আগে ভারত মাতা কি জয় বলে ধ্বনি দিয়ে ও বিরসা মুণ্ডাকে স্মরণ করে ভাষণ শুরু করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *