![](https://jagarantripura.com/wp-content/uploads/2017/06/Ramnath-Kovind.jpg)
নয়াদিল্লি, ২৬ নভেম্বর (হি.স.) : অধিকার ও কর্তব্য একই মুদ্রার দুই দিক। অধিকার রক্ষার জন্য কর্তব্য সম্পাদনের গুরুত্ব অপরিসীম বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
মঙ্গলবার ৭০তম সংবিধান দিবস উপলক্ষ্যে সেন্ট্রাল হলে অনুষ্ঠিত যৌথ সংসদীয় অধিবেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ জানিয়েছেন, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের ভিত্তিই হচ্ছে সংবিধান। ভারতীয় গণতন্ত্র গোটা বিশ্বের নজরে সমীহ আদায় করেছে। সপ্তদশ লোকসভায় ৭৮জন মহিলা সাংসদ নির্বাচিত হয়ে আসাটা গণতন্ত্রের জন্য গৌরবজনক সাফল্য। সংবিধানের রচয়িতাদের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে দেশের সাংবিধানিক প্রধান বলেন, ভীমরাও আম্বেদকরের নেতৃত্বাধী খসড়া কমিটি অসাধারণ দূরদর্শিতা, সততা, সাহস, অধ্যবসায় দেখিয়ে সংবিধানের চূড়ান্ত আকার দিয়েছিলেন। ১৯৪৯ সালের ২৫ নভেম্বর সাংবিধানিক সভায় নিজের শেষ ভাষণে ভীমরাও আম্বেদকর জানিয়েছিলেন যে, দেশের সাধারণ মানুষ এবং রাজনৈতিক দলগুলির আচরণের উপরেই সংবিধানের সাফল্যের নিহিত রয়েছে। সাংবিধানিক নৈতিকতার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আম্বেদকর জানিয়েছিলেন, মতাদর্শগত ফারাকের উর্দ্ধে ওঠে সংবিধানের প্রতি মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখে জনাদেশকে মেনে নেওয়ার মধ্যেই সাংবিধানিক নৈতিকতার প্রতি সৎ থাকা যায়।
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, অধিকার এবং কর্তব্য একই মুদ্রার দুই মুখ। ভারতীয় সংবিধান প্রত্যেক জনগণকে মৌলিক অধিকারের মাধ্যমে বাক এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েছে। পাশাপাশি সার্বজনীন সম্পত্তির সুরক্ষা এবং হিংসার থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। ভয় ও পক্ষপাতিত্বকে পরোয়া না করে সেবার মানসিকতা নিয়ে সাধনা ও সততার সঙ্গে সংবিধানের রচনা করা হয়েছিল। আগামী প্রজন্মকেও এই একই মূল্যবোধের পথিক হওয়াটা জরুরি। প্রত্যেকের আত্মসমীক্ষার মাধ্যমে এই আদর্শগুলিকে নিজেদের মধ্যে আত্মস্থ করা উচিত। বিগত ৭০ বছর ধরে ভারতীয় সংবিধান যে মূল্যবোধ গড়ে তুলেছে এবং সমীহ আদায় করেছে তার পুরো কৃতিত্ব দেশবাসীর। সংসদের স্ট্যাণ্ডিং কমিটির প্রত্যেকেই মহিলা। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিবর্তন।
গণতান্ত্রিক কাঠামোয় সংবিধানই হচ্ছে সর্বোচ্চ আইন। আর এই সংবিধানই প্রত্যেক দেশবাসীদের পথ দেখাবে। রাষ্ট্রের তিনটি ক্ষেত্র মধ্যে রয়েছে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, আমলাতন্ত্র এবং সাধারণ নাগরিক সবারই সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা উচিত। ২০১৫ সালে কেন্দ্রীয় সরকার ভারতীয় সংবিধানের মূল স্থপতিকার ভীমরাও আম্বেদকরের ১২৫তম জন্মজয়ন্তীতে সিদ্ধান্ত নেয় যে ২৬ নভেম্বর সংবিধান দিবস হিসেবে পালন করা হবে। সেই মত এদিন সংবিধান দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
দেশের তথা সমাজের মধ্যে সাম্য ভাবনা বিস্তারে সংবিধানের গুরুত্ব যে অপরিসীম তা মনে করিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন, সমাজে সাম্যের পরিবেশ তৈরি করার নীতিগুলি সংবিধানের মধ্যেই রয়েছে। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে যুগান্তকারি পরিবর্তন এসেছে দেশে। যে কোনও সমস্যার সমাধান ভারতীয় সংবিধানের মধ্যে রয়েছে।
সংবিধানে বর্ণিত অধিকার ও কর্তব্যের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, মানবতার ভাবনাকে পাথেয় করে উন্নয়নের কাজ করে যাওয়া একজন নাগরিকের কর্তব্য। সংবেদনশীল থেকে সেই কর্তব্য পালন করে যেতে হবে। ভারতীয় সংবিধানের উদাহরণ গোটা বিশ্বে দেওয়া হয়। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে ৬১ কোটি মানুষ ভোট দিয়েছে।
এদিন যৌথ সংসদীয় সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উপ-রাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইনা নাইডু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।