রায়গঞ্জ, ২৩ নভেম্বর (হি.স.) : লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের ফলাফলে মনে হচ্ছে বিজেপি-র কাছে হেরে যাওয়ার ভয় তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায়কে ক্রমাগত তাড়া করে বেড়াচ্ছে৷ তা আজ আবারও প্রমাণিত হয়েছে৷ তাই উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে উপনির্বাচনের প্রচারে বিজেপি-র রোড শো মমতা প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি বিলম্ব করিয়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনের এই আচরণে চটে লাল ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এভাবেই চাঁচাছোলা ভাষায় তৃণমূল কংগ্রেস ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধেছেন৷ শনিবারের রোড শো-য় প্রধান প্রচারক ছিলেন তিনি৷ নির্বাচনী আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিপ্লব দেব৷
![](https://jagarantripura.com/wp-content/uploads/2019/11/IMG-20191123-WA0046-1024x461.jpg)
কালিয়াগঞ্জে আয়োজিত সাংবাদিক এক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী তথা ত্রিপুরা প্রদেশ বিজেপি সভাপতি আক্ষেপের সুরে বলেন, পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রকে শুধু প্রকাশ্যে শ্বাসরোধ করা হচ্ছে না, বিরোধী দল ও তাদের সমর্থকদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে৷ তাই বিরোধীদের রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলিতে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন৷ তাঁর দাবি, তৃণমূল কংগ্রেস পরাজয় ঠেকাতে ব্যর্থ, তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ষড়যন্ত্রে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রচারে অংশ নিতে পারছেন না৷ তাঁর কথায়, রায়গঞ্জেও এই প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছিল৷ সেখানেও একইভাবে নির্বাচনী প্রচারে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছি৷
টিএমসি সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের নিন্দা করে বিপ্লব দেব বলেন, আজকের ঘটনাটি স্পষ্টতই ইঙ্গিত দিচ্ছে, তৃণমূল পরাজয়কে খুব ভয় পাচ্ছে এবং তাই প্রশাসনকে ব্যবহার করে বিজেপির গণতান্ত্রিক কর্মসূচি বিঘ্নিত করার চেষ্টা চলছে৷ তাঁর দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-এর জনপ্রিয়তা প্রতিদিন বেড়ে চলেছে৷ পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় মানুষ অবশ্যই তা বুঝতে পারছেন এবং উপনির্বাচনের ফলাফলে সেটাই প্রতিফলিত হতে চলেছে৷
বিপ্লবকুমার দেব বলেন, সমগ্র দেশ বাংলার মানুষকে শ্রদ্ধা করে৷ কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বৈরাচারী মনোভাব পশ্চিমবঙ্গকে গোটা দেশের কাছে অপমানিত করছে৷ তাঁর কথায়, নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দেশের অন্য রাজ্যে তাঁর গতিবিধির সূচি তৈরি করে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের প্রশাসনকে অবগত করা হয়৷ সে-ক্ষেত্রে আলাদাভাবে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না৷ তাঁর দাবি, পশ্চিমবঙ্গবাসী ভোটের বাক্সে সবকিছুর জবাব দেবেন৷
এদিকে, পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকদের বিরুদ্ধেও তিনি একরাশ ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন৷ তিনি সুর চড়িয়ে বলেন, বিজেপি-র বিরুদ্ধে রাজ্য প্রশাসনের সাথে নির্বাচন কমিশনের স্থানীয় অধিকারিকরাও যুক্ত৷ তাই রাজ্য সরকার স্বৈরাচারী আচরণের সাহস পাচ্ছে৷ তিনি নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন৷
কালিয়াগঞ্জের ভোটাররা তৃণমূলের শাসনে নানাভাবে বঞ্চিত৷ তাই, উপনির্বাচনে তাঁরা ইতিবাচক পরিবর্তনের দিকেই ঝুঁকবেন বলে মনে করেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রদেশ বিজেপি সভাপতি বিপ্লবকুমার দেব৷ কারণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতি মানুষের বিশ্বাস দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে৷ এ-জন্যই আজ (শনিবার) কালিয়াগঞ্জে উপনির্বাচনের প্রচারে রোড শো-য় অংশ নিয়ে বিজেপি মনোনীত প্রার্থীর জয় নিশ্চিত বলে দাবি করেন বিপ্লব দেব৷ তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, সমস্ত বাধা অতিক্রম করে কালিয়াগঞ্জের ভোটাররা বিজেপি প্রার্থীকেই জয়ী করবেন৷
এদিন স্থানীয়দের সহায়তায় অভিভূত বিপ্লববাবু বললেন, পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন নির্ধারিত কর্মসূচি ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব করলেও এই রোড শোয় জনগণের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া মিলেছে৷ তাঁর দাবি, মানুষের মধ্যে উৎসাহ লক্ষণীয়৷ যোগ করেন, কালিয়গঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের আসন্ন উপনির্বাচনে টিএমসির শিকড় ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যাবে৷
আজ তিনি দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপর বাংলার জনগণের পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে৷ বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ শাখা মানুষের স্বার্থে কঠোর পরিশ্রম করে চলেছে৷ তাই, আসন্ন উপনির্বাচনে বিজেপি অবশ্যই বিজয়ী হবে৷ আজকের প্রচার কর্মসূচিকে ঘিরে বিপুল সংখ্যায় মানুষ রাস্তায় নামার জন্য রায়গঞ্জের জনগণকে বিনম্রভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিপ্লব কুমার দেব৷
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গ সফরে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী কালিয়াগঞ্জ উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী কমল সরকারের বাসভবনে গিয়ে তাঁর মেয়ের বিয়ের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন৷