নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৫ অক্টোবর৷৷ রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনার পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয়েও আগ্রহী করে তুলতে হবে৷ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যদি বাণিজ্যিক মানসিকতা গড়ে তোলা যায় তবে সে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে সঠিক কর্মসংস্থানের পথ খোঁজে পাবে৷ ছাত্রছাত্রীদের এ-বিষয়ে সঠিক দিশা ও আশা জাগাতে শিক্ষক-অভিভাবকদের দায়িত্ব নিতে হবে৷ শুক্রবার রবীন্দ্রভবনে ২০১৯ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ‘চিফ মিনিস্টারস অ্যানুয়েল স্টেট অ্যাওয়ার্ড ফর অ্যাকাডেমিক একসিলেন্স’ প্রদান অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে এ-কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগামী ১০ বছরে রাজ্যে এগ্রি-মার্কেটিং, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, ফল প্রক্রিয়াকরণ, আইটি হাব, শিক্ষা হাব, পর্যটন হাব ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রচুর রোজগারের সুযোগ সৃষ্টি হবে৷ তাই শিক্ষার্থীদের এখন থেকেই এই সব বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে হবে৷ তাছাড়া সাব্রুমে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হলে ত্রিপুরায় বিনিয়োগ হবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে৷ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ীগণ বস্ত্রশিল্প কারখানা, ফল প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট, বাঁশভিত্তিক শিল্প কারখানা ইত্যাদি শিল্প কারখানা স্থাপন করবেন৷
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক, পরিকাঠামোগত-সহ বিভিন্ন বিষয়ে রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে সরকার৷ তিনি বলেন, রাজ্যের সাত জেলার পরিকাঠামোর উন্নয়নে এডিবি ১,৬৫০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে৷ সাথে যোগ করেন, রাজ্যের বিদ্যুৎ পরিষেবা আধুনিকীকরণের জন্যও এডিবি ১,৯০০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে৷ এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করা শুরু হলে ত্রিপুরা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির জন্য বিজনেস হাব হিসেবে গড়ে উঠবে৷ তাই ছাত্রছাত্রীদের এই সব বিষয়ে এখন থেকেই আগ্রহী করে তোলার পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব৷
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার শিক্ষাক্ষেত্রকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে৷ রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশেষ চিন্তাভাবনা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে৷ তিনি বলেন, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে গুণগত মানের শিক্ষা প্রদানে এনসিইআরটি পাঠ্যক্রম চালু করা হয়েছে৷ তাঁর কথায়, নতুন সরকার গঠনের এক বছরের মধ্যে রাজ্যের ৪,৪৯৪টি বিদ্যালয়ে এনসিইআরটি পাঠ্যক্রম চালু করা সহজ ছিল না৷ কিন্তু শিক্ষক-অভিভাবক এবং শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এটা করা সম্ভব হয়েছে৷
এছাড়া রাজ্যের ২৪টি বিদ্যালয়ে বৃত্তিমূলক শিক্ষা চালু করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রীর মন কি বাত অনুষ্ঠান শুনতে এবং সরাসরি কথা বলার জন্য ৪,৩৯৮টি বিদ্যালয়ে রেডিও সেট দেওয়া হয়েছে৷ ৬৭টি বিদ্যালয়ে গত শিক্ষাবর্ষে নার্সারি কোর্স চালু করা হয়েছে৷ এই শিক্ষাবর্ষে ২০০টি বিদ্যালয়ে নার্সারি কোর্স চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে৷ তিনি বলেন, রাজ্যে এই প্রথম একই প্রশ্ণপত্রে ছাত্রছাত্রীদের ষাণ্মাসিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে৷ এছাড়াও আগামীদিনে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্পোকিং ইংলিশ কোচিং চালু করার উদ্যোগ নেবে শিক্ষা দফতর৷
অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণে মধ্যশিক্ষা দফতরের অধিকর্তা উত্তম কুমার চাকমা বলেন, ছাত্রছাত্রীদের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে উৎসাহ দেওয়ার লক্ষ্যে শিক্ষা দফতর গত বছর থেকে ‘চিফ মিনিস্টারস অ্যানুয়েল স্টেট অ্যাওয়ার্ড ফর অ্যাকাডেমিক একসিলেন্স’ নামে প্রকল্প চালু করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, এ বছর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতী ৯১ জন ছাত্রছাত্রীকে বিভিন্ন বিভাগে পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে৷ এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার মেধা তালিকার প্রথম ৫ জন, সেরা ৫ ছাত্রীকে, সেরা ৫ জন তফশিলি জাতি, সেরা ৫ জন ধর্মীয় সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রী, সেরা ৫ জন ওবিসি ছাত্রছাত্রীকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে৷ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্যের সেরা দিব্যাঙ্গ ছাত্রছাত্রীকেও এই পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে৷ এছাড়া উচ্চমাধ্যমিকের ২৫টি বিষয়ে সবর্োচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদেরও এই পুরস্কার প্রদান করা হয়৷ পুরস্কারপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের পুরস্কারস্বরূপ একটি করে অ্যাপল আইপড এবং শংসাপত্র প্রদান করা হয়েছ৷ এতে মোট ব্যয় হয়ছে ৭ লক্ষ ১৫ হাজার ৪৯২ টাকা৷ পুরস্কারপ্রাপক ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পুরস্কার তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব-সহ অন্যান্য অতিথিগণ৷