
নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩ সেপ্ঢেম্বর৷৷ রাজ্যে নতুন করে বিলেতি মদের দোকানের লাইসেন্স দেয়া এবং বার খোলার অনুমতি সংক্রান্ত বিষয়ে মঙ্গলবার বিধানসভায় বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন একটি দৃষ্টি আকর্ষণী নোটিশ উত্থাপন করেন৷ নোটিশের জবাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মন্ত্রী তথা উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা বলেন রাজ্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে নতুন করে বিলেতি মদের দোকানের লাইসেন্স দেয়া এবং বার খোলার অনুমোদন দেওয়ার৷
উপমুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেছিলেন নেশা মুক্ত ত্রিপুরা গড়ার শপথ গ্রহণের দিন৷ মুখ্যমন্ত্রীর এই আহ্বানে রাজ্যের মানুষ ফেন্সিডিল, টেবলেট, গাঁজা, মদ ইত্যাদি নেশা সামগ্রীর বিরুদ্ধে সর্বোতভাবে সহায়তা করছে৷ এর মধ্যে নতুন করে মদের দোকানের লাইসেন্স দেয়া এবং বার খোলার অনুমোদন দেওয়া ভুল বার্তা যাবে জনমনে৷
২০১৬-১৭ সালের তথ্য অনুসারে ত্রিপুরায় ১০২টি বিলেতি মদের দোকান এবং ৪০টি দেশি মদের দোকান চালু ছিল৷ বর্তমানে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বিদেশি ও দেশি মদের দোকান চালু রয়েছে যথাক্রমে ৮১ এবং ২১টি৷ জাতীয় গড় অনুসারে প্রতি ১ লক্ষ মানুষপিছু বিদেশি মদের দোকান হল ৬-টি৷
অপরদিকে রাজ্যে ১ লক্ষ মানুষপিছু দেশি মদের দোকান সংখ্যা ২ দশমিক ৮-টি৷ জনসংখ্যার হিসাবে রাজ্যে মদের দোকান কম বলে আজ বিধানসভায় জানান উপমুখ্যমন্ত্রী তথা অর্থ দফতরের মন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা৷
তিনি আরও বলেন, মদের বণ্টন ব্যবস্থা কম হওয়ায় বিভিন্ন সময় বাজারে ভেজাল ও নকল মদের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়৷ যার ফলে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নানা সমস্যা দেখা দেয়৷ এছাড়া যত্রতত্র এবং ভেজাল মদের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে যা অন্যতম বড় একটি কারণ৷ এই সকল বিষয় বিবেচনা করে রাজ্য সরকার নতুন করে আরো ২৪টি মদের দোকানের লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ তবে এই প্রক্রিয়ার টেন্ডার প্রক্রিয়া এখনও হয়নি বলেও জানান তিনি৷ রাজ্য সরকার আশা করছে, নতুন ২৪টি মদের দোকান চালু হলে ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আসবে৷ পাশাপাশি রাজ্যে বার লাইসেন্স দেওয়ার জন্য পাইলট প্রজেক্ট করতে যাচ্ছে রাজ্য সরকার৷ বিশেষত রাজ্যে পর্যটনকে উৎসাহিত করার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বারের লাইসেন্স দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে৷ তবে এর জন্য কিছু বিশেষ নিয়মকানুনকে গুরুত্ব দিয়ে৷
উপ-মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যে সকল হোটেলকে বারের লাইসেন্স দেওয়া হবে তাদের ন্যূনতম ১৫টি সিঙ্গল ও ডাবল রুম থাকবে, হোটেলটি ৪,০০০ বর্গফুট এলাকা জুড়ে হতে হবে, সেই সঙ্গে থাকতে হবে সংযুক্ত ৫০০ বর্গফুটের রেস্তোরাঁ ও পর্যাপ্ত পরিমাণে কার পার্কিং সুবিধা৷ সেই সঙ্গে আবগারি দফতরের শর্ত মেনে বার তৈরি করতে হবে৷ এর পর কী কী অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব পড়ে রাজ্যে এই বিষয়টি নজর রাখা হবে বলেও জানান জিষ্ণু দেববর্মা৷ ট্রেজারি ব্যাঞ্চের বিধায়ক সুদীপ রায়বর্মণের কলিং অ্যাটেনশন নোটিশের প্রেক্ষিতে উপ-মুখ্যমন্ত্রী এ-কথাগুলি জানান৷
তখন সুদীপ রায়বর্মণ বলেন, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী শপথ গ্রহণের পর ঘোষণা করেছিলেন, রাজ্যকে নেশামুক্ত করবেন৷ এই অভিযানে রাজ্যবাসী দারুণভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে সহযোগিতা করছেন৷ এমতাবস্থায় নতুন করে মদের লাইসেন্স দিলে মানুষের মধ্যে ভুল বার্তা যাবে৷ তখন বিরোধী দলের বিধায়ক ভানুলাল সাহাও মদ ও বারের লাইসেন্স নতুন দেওয়ার বিরোধিতা করেন৷ তিনি বলেন, রাজস্ব বাড়লেও এর সামাজিক প্রভাব বিরূপ হবে এবং রাজ্য সরকারের নেশা বিরোধী অভিযানের সঙ্গে বিষয়টির সংঘাত হবে৷
তখন উপ-মুখ্যমন্ত্রী দেববর্মা ভানু লাল সাহাকে পাল্টা প্রশ্ণ করেন, বিরোধীরা যদি নেশার বিরোধিতা করেন তবে তাঁরা যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন কেন রাজ্যকে ড্রাই ঘোষণা করলেন না? সেই সঙ্গে তিনি বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেন, নেশা মুক্ত বলতে রাজ্য সরকার অবৈধ নেশার বিরোধিতা করছে৷

