নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২০ জুলাই৷৷ বাম জমানায় ত্রিপুরায় তফশিলি জাতি কল্যাণে প্রচুর টাকা অব্যয়িত রয়েছে৷ শুধু তা-ই নয়, প্রধানমন্ত্রী আদর্শ গ্রাম যোজনায় অন্তর্ভক্তির জন্যও তদ্বির করেনি পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার৷ তবে, রাজ্যে সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর ৩১টি পঞ্চায়েত ওই যোজনায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে৷ অনেক আগেই দ্বিতীয় দফার সূচি ঘোষণা হয়ে গেলেও মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লবকুমার দেবের লাগাতার দরবারে কেন্দ্রীয় সরকার ত্রিপুরাকে ওই যোজনায় এখন অন্তর্ভুক্ত করেছে৷ এদিকে, তফশিলি জাতি কল্যাণে অব্যয়িত টাকা এখন খরচ করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে৷
শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ জানিয়েছেন, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে প্রধানমন্ত্রী আদর্শ গ্রাম যোজনা শুরু হয়েছিল৷ প্রথম দফায় ১১টি রাজ্যের ১,৫০০ পঞ্চায়েত ওই যোজনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল৷ কিন্তু, তখন ত্রিপুরা ওই যোজনায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি৷ তিনি আরও জানান, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দ্বিতীয় দফায় ২৫টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৪,৪০০টি পঞ্চায়েত ওই যোজনায় অন্তর্ভুক্ত হয়৷ কিন্তু দ্বিতীয় দফায়ও ত্রিপুরা ওই যোজনার অন্তর্ভুক্ত হয়নি৷ তবে ত্রিপুরায় সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লবকুমার ত্রিপুরাকে ওই যোজনায় অন্তর্ভুক্তির জন্য কেন্দ্রের সাথে লাগাতার দরবার করেন৷ ফলে, গত ৫ নভেম্বর কেন্দ্রীয় সরকার চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, আদর্শ গ্রাম যোজনায় ত্রিপুরাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷ তাতে, ত্রিপুরার ৩১টি পঞ্চায়েত বাছাই হয়েছে৷ তিনি বলেন, ইতিমধ্যে প্রথম ধাপে ৩ কোটি ২২ লক্ষ টাকা কেন্দ্রীয় সরকার ওই যোজনায় ত্রিপুরাকে বরাদ্দ করেছে৷
শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, ৫০ শতাংশের অধিক তফশিলি জাতি জনসংখ্যার পঞ্চায়েতগুলিকে এই যোজনার অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে৷ মূলত, তফশিলি জাতির আর্থ, সামাজিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষ্টি, সংসৃকতির উন্নয়নে ওই যোজনা এনেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ শিক্ষামন্ত্রীর কথায়, তফশিলি জাতি এবং অ-তফশিলি জাতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসমতা কাটিয়ে তোলাই এই যোজনার অন্যতম লক্ষ্য৷ সে-ক্ষেত্রে ওই পঞ্চায়েতগুলির উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে৷
শিক্ষামন্ত্রীর দাবি, তফশিলি জাতিভুক্ত সমস্ত মানুষের খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জীবন-জীবিকা সুনিশ্চিত করার সাথে অপুষ্টি দূর করা, শিশুমৃত্যুর হার কমানো, গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণ, বিদ্যুতায়ন, কৃষি, দক্ষতা বিকাশ এবং অর্থনৈতিক বিকাশের লক্ষ্যে এই যোজনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে৷ তাঁর কথায়, তফশিলি জাতি অংশের মানুষের সার্বিক উন্নয়ন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাথমিক উদ্দেশ্য, তা এই যোজনার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে৷
তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী আদর্শ গ্রাম যোজনা ত্রিপুরায় বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে তিন ধরনের কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ রাজ্য ভিত্তিক কমিটি, স্টিয়ারিং কমিটি এবং প্রধামন্ত্রী আদর্শ গ্রাম যোজনা কমিটি৷ তাঁর কথায়, রাজ্যভিত্তিক কমিটিতে আরও তিনটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ তাতে, এই যোজনা সঠিকভাবে বাস্তবায়নে সহজ হবে৷
তবে, এই যোজনা ছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকার তফশিলি জাতির উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিয়েছে, তা বাম জমানার তফশিলি জাতি কল্যাণে বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ থেকে আবারও প্রমাণিত হয়েছে৷ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরায় ৪০ শতাংশ তফশিলি জাতি জনসংখ্যার ১৬৮টি পঞ্চায়েত এবং ২০ শতাংশ জনসংখ্যার ২৩৬টি পঞ্চায়েত রয়েছে৷ তাঁদের উন্নয়নে সাব-প্ল্যানে প্রচুর টাকা বরাদ্দ হয়েছে, অথচ বাম জমানায় সেই টাকা খরচই হয়নি, আক্ষেপের সুরে বলেন তিনি৷ শিক্ষামন্ত্রী জানান, তফশিলি জাতি কল্যাণে বিশেষ কেন্দ্রীয় সহায়তা বাবদ সাব-প্ল্যানে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৫ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা ত্রিপুরার জন্য বরাদ্দ হয়েছিল৷ অথচ, খরচ হয়েছে মাত্র ৭ কোটি ১৯ লক্ষ টাকা ৷ তেমনি, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৭ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল এবং তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার খরচ করেছে ১৪ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা ৷ একইভাবে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বরাদ্দ ২৬ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকার মধ্যে খরচ হয়েছে মাত্র ৪ কোটি ১৯ লক্ষ টাকা ৷ স্বাভাবিকভাবেই ওই টাকা এখন তফশিলি উন্নয়ন খাতে খরচ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে৷