নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১১ এপ্রিল ৷৷ লোকসভা নির্বাচনে ত্রিপুরা পশ্চিম আসনে ব্যাপক রিগিংয়ের অভিযোগ তুলেছে বিরোধী সিপিএম ও কংগ্রেস৷ সিপিএম ৪৬০ টি বুথে এবং কংগ্রেস ১৫১টি বুথে পুনঃ ভোট চেয়েছে৷ পাশাপাশি পক্ষপাপিত্তের অভিযোগ এনে রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক এবং মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের অপসারণ দাবি করেছে কংগ্রেস৷ বিরোধীদের এই দাবি ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজেপি৷ বিজেপির দাবি, নির্বাচনে বিরোধীদের হাতে শাসক দলের কর্মীরা আক্রান্ত হলেও কেউ প্রত্যাঘাত করেননি৷ তা এ রাজ্যে নজীর বিহীন ঘটনা৷

এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি অভিযোগ তুলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয়নি৷ কারণ, ভোটের সময় কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীকে দেখা যায়নি৷ তিনি ক্ষোভের সুরে বলেন, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা খুবই নিন্দনিয়৷ তাঁর কথায়, নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই রাজ্যে বিরোধীদের উপর ক্রমাগত আক্রমণ চালিয়েছে শাসকদল৷ এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছিল সিপিএম৷ কিন্তু, আজ নির্বাচনে চরম বিশৃঙ্খলা নজরে এসেছে৷ তাঁর দাবি, প্রশাসনিক ক্ষমতাকে ব্যবহার করে নির্বাচন প্রহসনে পরিণত করেছে শাসক দল৷ ভোটে ব্যাপক রিগিং রয়েছে বলে তিনি জোড় গলায় দাবি করেন৷ এ বিষয়ে তাঁর যুক্তি, দুপুর ১ পর্যন্ত ৩৫ শতাংশ ভোট হয়েছে৷ কিন্তু, বিকেল ৩টা নাগাদ দেখা গেছে, ভোটের হার বেড়ে হয়েছে ৬৮ শতাংশ৷ তাঁর কথায়, দুপুর ১টার পর থেকে বিভিন্ন বুথে ব্যাপক রিগিং রয়েছে৷ সিপিএম’র পোলিং এজেন্টদের জোড় করে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, চিহ্ণিত সিপিএম সমর্থকদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে৷

তিনি বলেন, এই সমস্ত বিষয় আজই দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের জানানো হবে৷ রাজ্যে পূুূুনঃ ভোটের দাবি জানাবে সিপিএম৷ তাঁর কথায়, বিভিন্ন বুথে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর অনুপস্থিতিতে পুনঃ ভোটের তাগিদ দেখা দিয়েছে৷ সিপিএম রাজ্য সম্পাদক গৌতম দাশ জানিয়েছেন, ৪৬০ টি বুথে ব্যাপক রিগিং হয়েছে৷ তাঁর কথায়, সিমনা, মোহনপুর, বামুটিয়া, বড়জলা, খয়েরপুর, আগরতলা, রামনগর, টাউন বড়দোয়ালি, মজলিশপুর, মান্দাই বাজার, প্রতাপগড়, বাধারঘাট, কমলাসাগর, বিশালগড়, গোলাঘাঁটি, সূর্যমণিনগর, চড়িলাম, বক্সনগর, নলছড়, সোনামুড়া, ধনপুর, বাগমা, রাধা কিশোরপুর, মাতাবাড়ি, রাজনগর, বিলোনীয়া এবং শান্তিরবাজারে মোট ৪৬০টি বুথে রিগিং হয়েছে৷ তিনি জানান, মজলিলশপুর, খয়েরপুর, রামনগর, রাজনগর এবং ধনপুরে সবচেয়ে বেশি রিগিং হয়েছে৷ তাই, ওই বুথ গুলিতে পুনঃ ভোটের দাবি জানানো হচ্ছে৷
এদিকে, সাংবাদিক সম্মেলনে পশ্চিম আসনে কংগ্রেস প্রার্থী সুবল ভৌমিক একই সুরে নির্বাচনে শাসক দলের বিরুদ্ধে রিগিংএর অভিযোগ এনেছেন৷ তাঁর কথায়, ১৫১টি বুথে ব্যাপক রিগিং হয়েছে৷ তাই, ওই বুথ গুলিতে পুনঃ ভোট কংগ্রেস দাবি করছে৷ তিনি বলেন, শুরু থেকেই শাসক দলের ভূমিকা ছিল সন্দেহজনক৷ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে আঁচ করতে পেড়েই শাসকদল বিজেপি ভোটে রিগিং এর পথ বেছে নিয়েছে৷ তাঁর অভিযোগ, স্পর্শকাতর বুথ গুলিতে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন ছিল না৷ বহু বুথে কংগ্রেসের পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি৷ খয়েরপুরে মহিলা নেত্রীকে মারধোর করা হয়েছে৷ নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করার পেছনে সুবলবাবু রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক এবং মুখ্য নির্বাচন আধিকারীককে দায়ি করে তাঁদের অপসারণ দাবি করেছেন৷

বিরোধীদের অভিযোগ এদিন খারিজ করে দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপির দাবি, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবের মেজাজে রাজ্যে ভোট হয়েছে৷ বিজেপি প্রদেশ কমিটির মুখ্য মুখপাত্র ডাঃ অশোক সিন্হার কথায়, অতীতে নির্বাচন গুলিতে বিরোধীরা আক্রান্ত হতেন৷ কিন্তু, আজ নির্বাচনে শাসক দলের কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন৷ তা সত্বেও শাসক দলের কর্মীরা প্রত্যাঘাত করেননি৷ এই ঘটনা রাজ্যে নজিরবিহীন বলে দাবি করেন ডাঃ সিন্হা৷ তিনি বলেন, সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক উৎসকানি দিয়ে ধনপুর এবং সোনামুড়ার বিজেপির উপর আক্রমণ করেছিল কংগ্রেস৷ আজকেও চড়িলামে একই ষড়যন্ত্র লক্ষ্য করা গেছে৷ মান্দাই এবং টাকারজলাতে বুথ দখলের চেষ্টা হয়েছে৷ কিন্তু, সমস্ত ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে রাজ্যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিজেপি ভোটারদের অভিনন্দন জানিয়েছে৷ ডাঃ সিন্হার কথায়, নির্বাচনে শুধুই সন্ত্রাস জানে সিপিএম৷ তাই, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকেও অস্বীকার করে সিপিএম ভোটারদের অপমান করেছে৷ তাঁর দাবি, বিপুল ভোটে বিজেপি পশ্চিম আসনে জয়ী হবে৷