কলকাতা, ৭ এপ্রিল (হি.স.) : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যাবতীয় অভিযোগ খারিজ করল জাতীয় নির্বাচন কমিশন । জানিয়ে দেওয়া হল, বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষকের কাছ থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পরেই রাজ্যের উচ্চ পদস্থ আইপিএস অফিসারদের সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন ।

কলকাতা ও বিধাননগরের কমিশনার সহ রাজ্যের চার পুলিশকর্তার বদলি সংক্রান্ত বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিঠি ‘দুর্ভাগ্যজনক’, মন্তব্য করল জাতীয় নির্বাচন কমিশন । মমতার চিঠির জবাবে পাল্টা চিঠি পাঠিয়ে নির্বাচন কমিশন রবিবার জানিয়ে দিল, আইন অনুযায়ী নিজেদের এক্তিয়ারের মধ্যে থেকেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে ।
রবিবার নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, চিঠি দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে যে অভিযোগ করেছেন, সেগুলি কোনওটাই ঠিক নয় । কোনও রকমের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেনি কমিশন । কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রভাবেও এই সিদ্ধান্ত নেয়নি তারা । সার্বিক রিপোর্ট, অর্থাৎ বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষকের দেওয়া রিপোর্ট এবং কমিশনের নিজস্ব রিপোর্টের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । কমিশনের তরফে আরও জানানো হয়েছে, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্পূর্ণ অধিকার তাদের আছে ।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার রাতে কলকাতা ও বিধাননগরের পুলিশ কমিশনারকে বদলির নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন । এর পাশাপাশি, ডায়মন্ডহারবার এবং বীরভূমেরর পুলিশ সুপারকেও বদলি করা হয় । এর পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বিজেপির নির্দেশে কাজ করছে কমিশন’।
রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করেই চার পুলিশকর্তাকে রাতারাতি বদলির সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কমিশনকে একটি চিঠি পাঠান । চিঠিতে তৃণমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, ‘দিন কয়েক আগে বিজেপি নেতারা এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের শীঘ্রই বদলি করা হবে, আর ঠিক এরপরই কমিশনের এমন নির্দেশ সামনে এল । এ ধরনের ঘটনাপ্রবাহের ফলে কমিশন সাংবিধানিক দায়বদ্ধতার কথা মাথায় রেখে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন পরিচালনা করবে না কি কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির নির্দেশ মেনে কাজ করবে তা নিয়ে শংসয় তৈরি হচ্ছে’ ।
মমতার এই চিঠির জবাবে রবিবার নির্বাচন কমিশন লিখেছে, ‘আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি চলাকালীন কমিশনের গ্রহণ করা একটি সিদ্ধান্তকে এভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নির্দেশানুসারে গ্রহণ করা বলে দেগে দেওয়া খুবই দুর্ভাগ্যজনক । বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করার জন্য এ ধরনের মন্তব্যের প্রত্যুত্তর দেওয়াও সংস্থার জন্য আদৌ সম্মানজনক বা সঠিক হবে না’ । ওই চিঠিতে কমিশন আরও লিখেছে যে পশ্চিমবঙ্গের জন্য নিযুক্ত বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবের রিপোর্টের ভিত্তিতেই বদলির নির্দেশ কার্যকর করেছে নির্বাচন কমিশন । এছাড়া, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোটের প্রস্তুতি কেমন হয়েছে তা দেখার জন্য নির্বাচন কমিশনের কর্তারা কলকাতায় দু’দিন কাটিয়েছেন । এরপরই কমিশন জানায়, ‘বদলি হওয়া চার অফিসারের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন যাঁরা, তাঁরাও সমতুল অভিজ্ঞ এবং পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের আইপিএস । ফলে, তাঁরা রাজ্যের বাস্তব পরিস্থিতির বিষয়ে সম্যক ওয়াকিবহাল রয়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে’।
ওই চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, নির্বাচনের ঘোষণা হওয়ার পর কমিশনকে রিপোর্ট করেন অফিসাররা । কমিশন চাইলে তাঁদের নতুন জায়গায় পোস্টিং দিতে পারে । আবার সরিয়ে নিয়ে যেতে পারে অন্যত্র ।
এক নির্দেশে রাতারাতি পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপারদের বদলি নিয়ে শনিবার নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লেখেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তাতে কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলেন তিনি । তার জবাবে শনিবারই নির্বাচন কমিশন পাল্টা চিঠি লেখে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে । তাতে বলা হয়, ১৯৫১ সালের জন প্রতিনিধিত্ব আইনের ২৮-এ ধারায় সাফ বলা রয়েছে, রাজ্য সরকার যে অফিসারকে নির্বাচন সামলানোর দায়িত্ব দেবে, নির্বাচন কমিশনকে রিপোর্ট করতে হবে তাঁকে । নির্বাচন কমিশনের হয়ে আইন-শৃঙ্খলা এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সামলাবেন তিনি ।
১৯৯৪ সালে কেরল হাইকোর্টের নির্দেশ উদ্ধৃত করে কমিশন জানায়, সংবিধানের ৩২৪ (৬), ১৯৫০ সালের জন প্রতিনিধিত্ব আইনের ১৩ সিসি এবং ১৯৫১ সালের ২৮-এ ধারা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের হাতে বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে । যার আওতায়, নির্বাচনী আচরণ বিধি চালু হয়ে যাওয়ার পর, কমিশন চাইলে কোনও অফিসারকে নতুন জায়গার দায়িত্বে বসাতে পারে । আবার চাইলে তাঁকে অন্যত্র বদলিও করতে পারে ।