বাংলাদেশে স্বাধীনতা দিবসে একাত্তরের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা

ঢাকা, ২৬ মার্চ (হি.স.) : সূর্যোদয়ের আগে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মঙ্গলবার ভোরে মহান স্বাধীনতা দিবস এবং ৪৯তম জাতীয় দিবসের সূচনা হয়। রাজধানীর উপকন্ঠ সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ভোর থেকেই জনতার ঢল নামে। ভোর পৌনে ছ’টায় প্রথম পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর নীরবতা পালন করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। ওই সময় বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর এবং সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার দেয়। প্রধানমন্ত্রী পরে মন্ত্রিসভার সদস্য ও আওয়ামি লিগ নেতৃবৃন্দকে নিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন স্মৃতিসৌধে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, ভাষাসৈনিক, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধান, বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের প্রধানগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র-যুব সংগঠন, মহিলা সংগঠন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা একের পর এক লাইনে দাঁড়িয়ে ফুল দেন। আসেন সর্বস্তরের মানুষ। ফুলে ফুলে ভরে ওঠে সৌধপ্রাঙ্গণ। জনসমুদ্রে পরিণত হয় স্মৃতিসৌধ এলাকা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে এই স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়।

স্মৃতিসৌধে অনেক সংগঠন ও তরুণ প্রজন্মকে প্লাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে ১৯৭১-এর গণহত্যা, ধর্ষণসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য পাকিস্তানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমা চাওয়ার জন্য দাবি জানাতে দেখা যায়। তাদের বক্তব্যে বলা হয়, পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের কুটনৈতিক সম্পর্কও রয়েছে। তবু এখনও পর্যন্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনও ক্ষমা চায়নি তারা। দেশের বাইরে অবস্থানরত যুদ্ধাপরাধীদের অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের দাবিও জানান।

স্মৃতিসৌধের আনুষ্ঠানিকতাকে ঘিরে গতকাল বিকেল থেকেই এখানে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সৌধপ্রাঙ্গণ ও তার আশপাশের এলাকায় বসানো হয় ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা। পোশাকধারী পুলিশ-র্যা পিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যা ব) ছাড়াও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কড়া নজরদারিতে রাখে পুরো এলাকা।

শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে এনে ঘুষ-দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবে। একাত্তরের শহীদদের প্রতি এটাই হবে সর্বোত্তম শ্রদ্ধা নিবেদন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির বলেন, স্বাধীনতার যে চেতনা ও আদর্শ নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম, তা লুন্ঠিত হয়েছে। দেশে এখন একদলীয় শাসন কায়েম করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মৃতিসৌধ থেকে ফিরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে ফুল দেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ এবং আওয়ামি লিগ নেতৃবৃন্দ। এখানেও বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জনতার ঢল নামে। প্রধানমন্ত্রী পরে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোরদের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। বিকেলে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এক সংবর্ধনার আয়োজন করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *