নয়াদিল্লি, ২ মার্চ (হি.স.): পাকিস্তানে অবস্থিত সন্ত্রাসবাদীদের মোক্ষম জবাব দেওয়ার জন্য গোটা দেশ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছে| ভারতীয় বায়ুসেনার এয়ার স্ট্রাইকে দেশের প্রত্যেকটি জনগণ অত্যধিক খুশি| কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষ অত্যধিক আত্মবিশ্বাসী| এই সমীক্ষায় আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে সন্ত্রাসবাদ, জাতীয় সুরক্ষা, কাশ্মীর এবং অনুচ্ছেদ ৩৭০-এর মতো বিষয়গুলি সর্বাগ্রে উঠে এসেছে| পাশাপাশি মূল্যবৃদ্ধি, নোটবন্দী, জিএসটি, মহিলা সুরক্ষা, কৃষক সমস্যা এবং শিক্ষার মতো বিষয়গুলি একটু পিছনের সারিতে চলে গিয়েছে | মূল্যবৃদ্ধি, নোটবন্দী, জিএসটি এবং মহিলা সুরক্ষার পরিবর্তে দেশের উন্নয়ন নিয়েই বেশি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন মতামতদাতারা | দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপও লোকসভা নির্বাচনের নির্ণায়ক ইস্যু হিসেবে উঠে এল না | দেশের বিভিন্ন রাজ্যে হিন্দুস্থান সমাচার (বহুভাষী সংবাদ সংস্থা) কর্তৃক সমীক্ষায় এই সমস্ত বিষয়গুলি উঠে এসেছে | ১৯টি রাজ্যে আয়োজিত এই সমীক্ষায় ২৩৩৩ জন মতামতদাতা অংশগ্রহণ করেছিলেন |একসঙ্গে দু’ঘন্টার এই সমীক্ষায় পাঁচটি প্রশ্নের উত্তরের জন্য চার-চারটি করে বিকল্প দেওয়া হয়েছিল| ষষ্ঠ তথা অন্তিম প্রশ্নে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে নির্ণায়ক ইস্যু কি হতে পারে, সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হয়| মতামতদাতাদের কাছে প্রশ্ন করা হয়, যথাক্রমে-১. ভারতীয় বায়ুসেনার এয়ার স্ট্রাইক প্রসঙ্গে আপনার কি প্রতিক্রিয়া ? ২. ভারতীয় বায়ুসেনার এয়ার স্ট্রাইকের পর পুলওয়ামা হামলার প্রতিশোধ কি নেওয়া হল? ৩. এবার কি সন্ত্রাসী হামলা ও কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে? ৪. আপনি কি ভারত সরকারের এই পদক্ষেপকে সমর্থন করছেন? ৫. আপনি কি মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যা বলেছিলেন তাই করে দেখালেন? সমীক্ষায় এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তরে অধিকাংশ মতামতদাতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার এবং সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন|

সমীক্ষায় ৯০ শতাংশ মানুষ পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে বায়ু সেনার এয়ার স্ট্রাইকের কেন্দ্রীয় সামরিক সিদ্ধান্তকে ‘খুব ভাল’ পদক্ষেপ বলে জানিয়েছেন। পাশাপাশি পঞ্চম প্রশ্নের উত্তরে তিন চতুর্থাংশ মানুষ রায় দিয়েছেন যে ‘প্রধানমন্ত্রী যা বলেছিলেন তাই করে দেখিয়েছেন’। সমাজের সকল স্তরের মানুষকে নিয়ে এই সমীক্ষা করা হয়েছে। ১৯টি রাজ্যের মধ্যে ছত্তিশগড় এবং অসমকে বাদ দিয়ে বাকি রাজ্যগুলি বাসিন্দারা প্রায় একই ধরণের উত্তর দিয়েছেন। অসম এবং ছত্তিশগড়ের বাসিন্দারা আগামী লোকসভা নির্বাচনে জাতীয় বিষয়ের পাশাপাশি স্থানীয় সমস্যাগুলির বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে।লোকসভা নির্বাচনে সব থেকে বড় ইস্যুতে সিংহভাগ দেশবাসী জানিয়েছেন, নোটবন্দি এবং জিএসটি নিয়ে যারা সোচ্চার হয়েছিল তাতে কোনও প্রভাবই পড়বে না। নির্বাচনে সব থেকে বড় এজেন্ডা হচ্ছে শক্তিশালী ভারত। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মোদী সরকারের দৃঢ়চেতা সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। সংসদ থেকে সড়ক পর্যন্ত যে সকল বিষয় নিয়ে সরগরম থাকত সমাজ তা এখন পেছনের দিকে চলে গিয়েছে বা আড়ালে চলে গিয়েছে।
৯৭.৮৫ কোটি মানুষের উপর সমীক্ষা চালিয়েছিল বহুভাষিক সংবাদ সংস্থা হিন্দুস্থান সমাচার। সব মিলিয়ে ১৯টি রাজ্য যোগ দিয়েছে। দেশের জনবহুল রাজ্যের মধ্যে উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশ সহ অসম, বিহার, ছত্তিশগড়, দিল্লি, হিমাচলপ্রদেশ, হরিয়ানা, ঝাড়খন্ড, মেঘালয়, মহারাষ্ট্র, ওডিশা, পঞ্জাব, রাজস্থান, সিকিম, তেলেঙ্গানা, উত্তরাখণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ এবং গুজরাট।সমীক্ষার পরিসংখ্যান
দেশব্যাপী সমীক্ষার প্রথম প্রশ্ন ‘ভারতীয় বায়ুসেনার এয়ার স্ট্রাইক (হামলা) প্রসঙ্গে আপনার কি প্রতিক্রিয়া ?’ সমীক্ষায় দেখা গেছে প্রায় পুরো দেশই সেনা এবং জাতীয়তাবাদের সাথে রয়েছে।এই সমীক্ষায় ৮৯.২৮ শতাংশ মানুষ ‘খুব ভাল’, ৮.৫৭ শতাংশ মানুষ ‘ভাল’ এবং ১.৯২ শতাংশ মানুষ বলেন ‘সাধারণ’। এই প্রশ্নের উপর ০.২১ শতাংশ মানুষের কোন মন্তব্য নেই।
সমীক্ষার দ্বিতীয় প্রশ্নও প্রথম প্রশ্নের সঙ্গেই সম্পর্কিত। দ্বিতীয় প্রশ্নে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, ‘ভারতীয় বায়ুসেনার এয়ার স্ট্রাইক (হামলা)-এর পর পুলওয়ামা হামলার প্রতিশোধ কি নেওয়া হল ?’ কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটাকে প্রতিশোধ হিসাবে দেখছে না। প্রতিশোধ হিসেবে ৪১.৪৯ শতাংশ মানুষের প্রতিক্রিয়া ‘আংশিক’। ২৬.৭৮ শতাংশ মানুষ এটিকে ‘ হামলার প্রতিশোধ সম্পূর্ণ’ বলে মনে করেন। ৩২.৩৬ শতাংশ মানুষ মনে করেন যে এখনও প্রতিশোধ নেওয়া হয়নি। ১.০৭ শতাংশ মানু্ষ বলেন, ‘জানি না’।তৃতীয় প্রশ্নে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, \”এবার কি সন্ত্রাসী হামলা ও কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে? \” ৩৮.৭০ শতাংশ উত্তরদাতা ইতিবাচক উত্তর দিয়েছেন। ২৯.৫৩ শতাংশ মতামতদাতা জনিয়েছেন ‘না’। ২৪.৯৪ শতাংশ উত্তরদাতার মত ‘কিছুটা হলেও হবে’ এবং শতকরা ৬.৬০ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, ‘এখনই বলা সম্ভব নয়’।
চতুর্থ প্রশ্নে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, \”আপনি কি ভারত সরকারের এই পদক্ষেপ সমর্থন করছেন? \” এই প্রশ্নের প্রতিক্রিয়া অনেকটা \”ভারতীয় সেনার জয় হোক\” স্বরূপ। সমীক্ষায় শামিল মতামতদাতদের মধ্যে শতকরা ৯৬.২২ জনতা ইতিবাচক উত্তর দিয়েছেন । উত্তরদাতারা জানিয়েছেন, তাঁরা ভারত সরকারের পাশে রয়েছেন।সমীক্ষার পঞ্চম প্রশ্ন ছিল, \”আপনি কি মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যা বলেছিলেন তাই করে দেখালেন?\” যার প্রতিক্রিয়ায় তিন-চতুর্থাংশ উত্তরদাতা ইতিবাচক মতামত দিয়েছেন, \”প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যা বলেছেন তাই করেছেন।\” মতামতদাতাদের মধ্যে ৬৯.৩৫ শতাংশ ইতিবাচক উত্তর দিয়েছেন এবং ১৫.২১ শতাংশ জানিয়েছেন ‘কিছুটা’। শতকরা ১৩.৭৫ উত্তরদাতা না-বাচক এবং ১.৬৭ শতাংশের মতামত ‘জানি না’।
উত্তরদাতাদের মতামতএই সমীক্ষার ষষ্ঠ তথা শেষ প্রশ্নের মাধ্যমে উত্তরদাতাদের মনের কথা জানার চেষ্টা করা হয়েছিল | আগামী লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে জানতে চাওয়া হয়েছিল এবারের ভোটে নির্ণায়ক বিষয় কি হতে পারে ? এই প্রশ্নের জবাবে ৯০ শতাংশের বেশি জনতার জবাব ছিল সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ, জাতীয় নিরাপত্তা, কাশ্মীর ও ধারা ৩৭০ নির্বাচনে নির্ণায়ক বিষয় হবে।
এর পর, অধিকাংশ লোক মনে করেন কেবলমাত্র উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের বিষয়েই দৃষ্টি নিবদ্ধ করে হবে এই নির্বাচন । আর সামান্য কয়েক শতাংশ জনতা মনে করেন মুদ্রাস্ফীতি, জিএসটি, নোটবন্দী, শিক্ষা, নারীর নিরাপত্তা, দুর্নীতি, কৃষক ও শক্তিশালী সরকারের মত বিষয় এই নির্বাচনে গুরুত্ব পাবে বলে নিজেদের মতামতে জানিয়েছেন|