কলকাতা, ১৪ ফেব্রুয়ারি (হি.স.): মধুবালাকে তাঁর জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানাল আন্তর্জাতিক সার্চ ইঞ্জিন গুগল। বৃহস্পতিবার ডুডল মারফত মধুবালাকে তাঁর জন্মদিনের শ্রদ্ধা জানিয়েছে গুগল। বৃহস্পতিবার মধুবালার ৮৭-তম জন্মদিন।

১৯৩৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি দিল্লির এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মধুবালা। তার পারিবারিক নাম ছিল মমতাজ জাহান দেহলভী। বাবা আতাউল্লা খান পেশোয়ারের ইয়ুসুফজায়ি গোত্রের পাঠান। মধুবালার শৈশবে তার পরিবারকে অনেক কঠিন সময় পার করতে হয়েছিল।মাত্র নয় বছর বয়সে তিনি তখন শিশু শিল্পী হিসেবে অভিনয়ের ডাক পেয়েছিলেন বোম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। শিশুশিল্পী হিসেবে তার অভিনয় দেখেই তার মধ্যে জাত অভিনেত্রীর ছাপ খুঁজে পেয়েছিলেন অনেক ছবি নির্মাতা। অভিনয় জীবনে প্রবেশের কিছুদিন পর অভিনেত্রী দেবিকা রানী চৌধুরী তার অপরূপ রূপ ও প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে তার নাম দেন মধুবালা। পরবর্তীতে এ নামেই পর্দায় হাজির হন তিনি আর নামটি জায়গা করে নেয় লাখো-কোটি দর্শকের হৃদয়-পটে।
মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে ‘নীল কমল’ (১৯৪৭) সিনেমায় প্রধান অভিনেত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। রাজ কাপুরের বিপরীতে অভিনয় করা এ সিনেমাই সর্বশেষ সিনেমা যেখানে তিনি ‘মধুবালা’ নয় ‘মমতাজ’ নামে পর্দায় হাজির হয়েছিলেন। এরপর ‘মধুবালা’র বড় পর্দায় আগমন আর পরবর্তী দু’বছরের গল্প শুধু এগিয়ে চলার, তার রূপের জাদুতে রূপোলী পর্দাকে মোহাবিষ্ট করার।এক সময় ক্যারিয়ারের পাশাপাশি জোয়ার আসে মধুবালার ব্যক্তিগত জীবনেও। ‘তারানা’ ছবিতে তিনি অভিনয় করেন দিলীপ কুমারের বিপরীতে। এ ছবির সেটেই তারা একে অপরের প্রেমে পড়েন। শুটিং চলাকালীন একদিন মধুবালা তার হেয়ার ড্রেসারকে একটি লাল গোলাপ ও উর্দুতে লেখা চিরকুটসহ দিলীপ কুমারের কাছে পাঠান এবং তাকে ভালবাসলে ফুলটি গ্রহণ করতে বলেন। দিলীপ কুমার মুগ্ধ হয়ে ফুলটি গ্রহণ করেন। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ান মধুবালার বাবা। তিনি ততদিনে একটি প্রোডাকশন হাউসের মালিক। তাঁর পরিকল্পনা ছিল দিলীপ কুমার ও মধুবালার বিয়ের পর তারা শুধুমাত্র তার প্রোডাকশনের সিনেমাতেই অভিনয় করবেন। কিন্তু এ ধরনের অর্থলোভী আচরণ দিলীপ কুমারের পছন্দ হয়নি। একদিকে তার ভালবাসা অন্যদিকে পরিবার।
গভীর অভিমান বুকে চেপে মধুবালা সম্পর্ক ভেঙে দিয়েছিলেন দিলীপ কুমারের সঙ্গে। আর বলা হয়ে থাকে শুধুমাত্র প্রেমিকের ওপর প্রতিশোধ নেয়ার জন্যই তিনি বিয়ে করেছিলেন কিশোর কুমারকে। প্রতিশোধ নেয়ার জন্য বিয়ে করলেও তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের ছিল না। কিশোর কুমারও বুঝতে পারতেন যে মধুবালা দিলীপ কুমারকেই ভালবাসেন।ক্রমে অসুখের ফলে তিনি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। দুঃসহ যন্ত্রণায় নয়টি বছর পার করে ২৩ই ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে মাত্র ছত্রিশ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়ে চলে যান কোটি মানুষের স্বপ্নের রানী, এক বুক অভিমান আর ভালবাসার জন্য বুভুক্ষু হৃদয় নিয়ে চলে যান রূপোলী পর্দার ভালবাসার প্রতিমা মধুবালা।