নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৯ নভেম্বর৷৷ রাজ্যের বিদ্যালয়গুলিতে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এন সি আর টি পাঠ্যক্রম চালু করার বিষয়ে আজ সচিবালয়ের ২নং কনফারেন্স হলে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের সভাপতিত্বে এক উচ্চ পর্যায়ের পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়৷ পর্যালোচনা সভায় শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ, মুখ্য সচিব এল কে গুপ্তা, অতিরিক্ত মুখ্যসচিব সুশীল কুমার, মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান সচিব কুমার অলক, পূর্ত দপ্তরের প্রধান সচিব মনোজ কুমার, বিদ্যালয় শিক্ষা এবং উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের উচ্চপদস্থ আধিকারিগণ উপস্থিত ছিলেন৷ এ দিনের পর্যালোচনা সভায় বিদ্যালয় শিক্ষা এবং উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের বিভিন্ন কার্যাবলীর পর্যালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷
সভায় বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা ইউ কে চাকমা জানান, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে রাজ্যে এন সি ই আর টি সিলেবাস চালু করা প্রস্তুতি স্বরূপ প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত এন সি ই আর টি পাঠ্যবইকে বাংলায় অনুবাদ করা কাজ শেষ হয়েছে৷ তিনি জানান, এন সি ই আর টি এর নিয়ামুসারে এন সি ই আর টি থেএক ৫ শথাংশ রয়ালিটি প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ের জন্য কপিরাইট নেওয়া হয়েছে৷ ইংরেজী মাধ্যম বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ্য বই এর জন্য এন সি ই আর টিকে সাপ্লাই অর্ডার দেওয়া হয়েছে৷ বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়গুলির প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেমীর জন্য এন সি ই আর টি এর ইংরেজী বই থেকে বাংলা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর জন্য ইংরেজী ভাষায় পাঠ্যবই এন সি ই আর টি থেকে সংগ্রহ করার হয়েছে৷ বিদ্যালয় শিক্ষা অধিকর্তা জানান, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে একাদশ শ্রেণীর এন সি ই আর টি পাঠ্য বই বাংলায় অনুবাদ করার কাজ শেষ হবে৷
পর্যালোচনা সভায় বিদ্যালয় শিক্ষা অধিকর্তা জানান, এন সি ই আর টি এর পাঠ্যক্রম চালু করার ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ২৪০ জন প্রাথমিক এবং ২০০ জন মাধ্যমিকস্তর মিলে মোট ৪৪০ জন শিক্ষককে এন সি ই আর টি এর বিশেষজ্ঞদের দ্বারা প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে৷ এই ক্ষেত্রে ৩ থেকে ৬ ডিসেম্বর প্রাথমিকস্তরের শিক্ষকদের এবং জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহে মাধ্যমিকস্তরের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছে৷ এই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকরা পরবর্তী সময়ে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকস্তরের ৪০ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেবে৷ ৮টি জেলা জুড়ে ৬০টি স্থানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং সমস্ত প্রশিক্ষণ আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷ এছাড়াও সভায় আরও জানানো হয় যে নতুন এন সি ই আর টি সিলেবাস প্রশ্ণের নিয়মাবালী, পারফমেন্স রিপোর্ট কার্ড নতুন করে তৈরির কাজ চলছে৷ এছাড়াও ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীর বিজ্ঞান এবং অঙ্ক বই ডিজিটাইজেশন করার কাজ চলছে৷ এছাড়াও ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীর বিজ্ঞান এবং অঙ্ক বই ডিজিটাইজেশন করার কাজ চলছে৷ সভায় আগামী শিক্ষাবর্ষ এপ্রিল মাস থেকে এন সি ই আর টি এর সিলেবাসযুক্ত করে পাঠ্যক্রম চালু করার কথা আলোচনা হয়৷
বিদ্যালয়ের সময়সূচি পরিবর্তন করার আলোচনার প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী বিদ্যালয়ের ছেলে মেয়েরা যেন সংসৃকতি এবং খেলাধুলার জন্য পর্যাপ্ত সময় পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে বিদ্যালয়ের সময়সূচি ঠিক করার বিষয়ে দপ্তরকে ভাবনা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের নির্দেশ দেন৷ এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী বিদ্যালয় পরিকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রেও গুরুত্বারোপ করে প্রয়োজনীয় উফদ্যোগ নিতে দপ্তরকে নির্দেশ দেন৷ শিক্ষাদপ্তরে নিযুক্ত সমস্ত কর্মরত ব্যক্তিদের জন্য লোগো ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷
পর্যালোচনা সভায় রাজ্যের বিভিন্ন সরকারী এবং সরকারী সহায়তাপ্রাপ্ত বিদ্যালয়গুলিতে পানীয় জল সরবরাহ, শৌচাগারের ব্যবস্থা এবং বিদ্যুতায়ন সম্পর্কেও পর্যালোচনা করা হয়৷ সভায় উচ্চশিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা জানান, ৩৭৪টি বিদ্যালয়ে পানীয়জলের কোন ব্যবস্থা নেই৷ ২১১৫টি বিদ্যালয়ে পানীয়জল জমা রাখার ব্যবস্থা নেই৷ এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শহর অঞ্চলের ছেলে মেয়েদের মতো করে গ্রামের ছেলে মেয়েরা যাতে সুকলব্যাগ এবং জলের বোতল নিয়ে যেতে পারে সেই উদ্যোগ নিতে হবে দপ্তরকে৷ এতে করে সুকল পড়ুয়াদের সুকলব্যাগ এবং জলের বোতনল সুকলে নিয়ে যাওয়ার অভ্যাস তৈরি হবে৷ বিদ্যালয়গুলিতে পানীয়জলের সমস্যা কিছুটা সমাধান হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের উন্নয়নে শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত থাকা প্রয়োজন৷ গুণগত শিক্ষার পাশাপাশি বিদ্যালয়গুলির পরিবেশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা প্রয়োজন৷ বিদ্যালয়ের শিক্ষা শিক্ষিকাসহ ছাত্র ছাত্রীদের বিদ্যালয়ে সপ্তাহে একদিন করে সাফাই কর্মসূচি রাখা প্রয়োজন৷ এছাড়াও শিক্ষক শিক্ষিকারা শৌচাগার ব্যবহারের বিষয়ে ছাত্র ছাত্রীদের সচেতন করতে হবে৷
এদিনের পর্যালোচনা সভায় বিদ্যালয়ের শৌচাগার পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে আলোচনা করা হয়৷ এদিনের সভায় উচ্চশিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা জানান, মুখ্যমন্ত্রী বি এড অনুপ্রেরণা যোজনায় বি এড কোর্স করতে উচ্ছুক ছাত্র ছাত্রীদের জন্য ২৫ নভেম্বর আয়োজিতচ ঋণ মেলায় ৭৬৩টি আবেদন জমা পড়ে৷ এ পর্যন্ত মোট ১২২৩টি আবেদনপত্র ব্যাঙ্কে জমা পড়েছে৷ তিনি জানান, রাজ্যে আরও ৬টি সাধারণ ডিগ্রী কলেজ যথাক্রমে পুরাতন আগরতলা, জিরানীয়া, কাকড়াবন, পানিসাগর, কদমতলা, সালেমায় স্থাপন করার জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে৷ এছাড়াও করবুক মহকুমায় একটি ডিগ্রী কলেজ স্থাপন করার বিষয়েও সভায় আলোচনা হয়৷ সভায় উচ্চশিক্ষা দপ্তরেরর বিভিন্ন কর্মসূচিগুলি সম্পর্কেও অবহিত করা হয়৷ রাজ্যে আই আই টি স্থাপনের বিষয়ে এবং ৪টি বি এড কলেজ স্থাপনের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কেও সভায় পর্যালোচনা করা হয়৷ এছাড়াও কলেজগুলিতে অনলাইন ভর্তির পদ্ধতি শুরু করার বিষয়েও সভায় আলোচনা হয়৷
মুখ্যমন্ত্রী উচ্চশিক্ষা দপ্তরেরর পর্যালোচনা করতে গিয়ে বলেন, রাজ্যের বাইরে যে সমস্ত ছলে মেয়েরা উচ্চশিক্ষার জন্য পড়াশুনা করতে যান সেই পরিসংখ্যান নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো রাজ্যেই গড়ে তুলতে হবে যাতে করে রাজ্যের ছেলেমেয়েরা শিক্ষাগত দিকদিয়ে সকল সুযোগ সুবিধা এখানেই পেতে পারে৷ এছাড়াও সভায় শিক্ষা দপ্তরের বার্ষিক কাজের পরিকল্পনা এবং সাফল্যগুলি তুলে ধরা হয়৷
2018-11-30