নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৮ নভেম্বর ৷৷ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পরিচালিত মাধ্যমিক এবং উচ্চমাদ্যমি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় প্রথম ১০ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে স্থান করে নেওয়া কৃতি তপশিলি জাতির ছাত্র-ছাত্রীদের এখন থেকে মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হবে৷ রাজ্যের তপশিলি জাতির ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহ দিতে রাজ্য সরকার এই পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ পুরস্কার স্বরূপ দেওয়া হবে ২৫ হাজার টাকা৷ আজ তপশিলি জাতি কল্যাণ দপ্তরের উদ্যোগে রবীন্দ্র সতবার্ষিকীভবনের ২ নং প্রেক্ষাগৃহে ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পরিচালিত ২০১৮ মাধ্যমিক/উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীণ সদর মহকুমা এলাকার তপশিলি জাতি ছাত্রছাত্রীদের ড বি আর আম্বেদকর স্মৃতি মেদা ও স্বর্ণ পদক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন৷ তিনি বলেন, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী সবকা সাথ সবকা বিকাশ মন্ত্রের মধ্য দিয়ে সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কাজ করছেন রাজ্য সরকারও সেই দিশাতেই কাজ করছে৷ কোন ছাত্র-ছাত্রীই দুর্বল নয়৷ ছাত্র-ছাত্রীদের এই মনোভাবের পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে৷ এরজন্য দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে পরিবারের পাশাপাশি পাড়া প্রতিবেশীদেরও৷ তিনি বলেন, পিছিয়ে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহ দিয়ে তাদের মনোবল বাড়িয়ে তুলতে হবে যেন পরবর্তী সময় তারা আরও ভালো ফলাফল করতে অনুপ্রাণিত হয়৷ সবাইকে সেই দিশায় কাজ করার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী৷ এই দিশাতে কাজ করলেই কোন ছাত্রছাত্রী লক্ষ্যহীন হয়ে শিক্ষায় পিছিয়ে থাকবে না৷ তিনি আরও বলেন, শিক্ষার প রিকাঠামোই শুধু মেধাবী ছাত্রছাত্রী গড়ে তুলতে পারে না৷ ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, ড বি আর আম্বেদকরের মতো মেধাবী ব্যক্তি পরিকাঠামো ছাড়াও শিক্ষা ক্ষেত্রে নিজেদের উল্লেখযোগ্য স্থান করে নিয়েছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী আম্বেদকরের কথা উল্লেখ করে ব লেন, কেবলমাত্র একজন শিক্ষকের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ইচ্ছা শক্তির মধ্য দিয়ে জীবনে সর্বশেষ্ট হয়ে উঠেন এবং দেশের সংবিধান প্রণয়ন করেন৷ তিনি বলেন, মা বাবার চেয়ে বড় শিক্ষক কেউ নয়৷ এই মনোভাব ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তৈরি হলে ঘরে ঘরে বিদ্যােসাগরের মতো মেদাবী ছাত্র-ছাত্রী গড়ে উঠবে৷
মুখ্যমন্ত্রী অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, নিজের ছেলে মেয়েদের উৎসাহিত করার পাশাপাশি আশেপাশের ছাত্রছাত্রীদেরকেও এগিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দিতে হবে৷ ত্রিপুরাকে মডেল রাজ্য বানানোর যে স্বপ্ণ সেটা অর্থ্যনৈতিক ক্ষেত্রের পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো এবং তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রেও ত্রিপুরাকে মডেল রাজ্যে পরিণত করে তুলতে হবে৷ এই উদ্দেশ্য পরণে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন৷
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেন, ঞ্চংবিধান রচনা করার সময় বলা হয়েছে যারা শিক্ষা সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে তাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে৷ তারা যেন উপরে উঠতে পারে তাদের জন্যই বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
তিনি বলেন, মেধা প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর মধ্যে রয়েছে৷ সেই মেধাকে বিকশিত করার দায়িত্ব শিক্ষকদের৷ পুঁথিগত বিদ্যার পাশাপাশি গুণগত শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়ে সর্বক্ষেত্রে নিজেদের তৈরি করার জন্য ছাত্রছাত্রীদের প্রতি আহ্বান রাখেন৷ শিক্ষামন্ত্রী তথ্য দিয়ে জানান, স বচেয়ে বেশি তপশিলি জাতি সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছে কমলপুর মহকুমায় এবং সবচেয়ে কম মানুষ রয়েছেন জম্পুইজলা মহকুমায়৷
তিনি বলেন, রাজ্যের পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য রাজ্য সরকার তপশিলি জাতি কল্যাণ দপ্তরের মাধ্যমে গত বছর থেকে এবছর পর্যন্ত এস সি সম্প্রদায়ের ৬০ জন ছাত্রছাত্রীকে বিএড পড়ার জন্য রাজ্যের বাইরে পাঠানো হয়েছে৷ ডিএলএড পড়ার জন্য ৪০ জন এসসি সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েদের বাইরে পাঠানো হয়েছে৷ প্যারামেডিক্যােল কাের্সে ৪১ জনকে বাইরে পাঠানো হয়েছে৷ দেশের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত নতুন একটি প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী আদর্শ সংখ্যা ৮২৭৮ শতাংশ৷ দেশের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত নতুন একটি প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী আদর্শ গ্রাম যোজনার কথা উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ যোজনায় অন্তর্ভূক্ত গ্রামের এসসি সম্প্রদায়ের লোকেরা যেন আর্থিক এবং সামাজিক দিক দিয়ে এগিয়ে যেতে প ারে সেই দিকে বিশেষ গুরগুত্ব দিয়ে এ যোজনা ঘোষণা করা হয়েছে৷ এছাড়া কেন্দ্রীয় সকার এবং রাজ্য সরকার বি ভিন্ন প্রকল্প, বোর্িং হাউজ, এস সি ছাত্রছাত্রীদের প্রি ম্যাট্রিক স্কলারশিপ, স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রশিক্ষণ ইত্যাদি প্রকল্পের কথা উল্লেক করেন শিক্ষামন্ত্রী৷ শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, সুস্থ প্রতিযোগিতার মদ্য দিয়ে এস টি, এস সি এবং ওবিসি, সংখ্যালঘু, জেনারেল ছাত্র-ছাত্রীদের এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলেই সব কা সাথ সবকা বিকাশ সফল হবে৷
উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পরিচালিত উচ্চ মাধ্যমিক এবং মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মেধা তালিকায় ১০ জন কৃতি ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে এসসি সম্প্রদায়ভুক্ত কৃতি ছাত্রী যথাক্রমে অনুস্কার সরকার এবং স্বর্ণদীপা মজুমদারকে স্বর্ণ পদক, শংসা প ত্র এবং মুখ্যমন্ত্রী বিশেশষ পুরস্কার স্বরূপ ২৫ হাজার টাকার চেক তুলে দেন৷ এছাড়া উচ্চমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সদর মহকুমার ৪৪৯ জন ছাত্রছাত্রী যারা ৬০ সতাংস ও তার অধিক নম্বর পেয়েছেন তাদেরকেও ড বি আর আম্বেদকর ধো পুরস্কার দেওয়া হ য়৷ অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেষণ করেন তথ্য ও সংসৃকতি দপ্তরের শিল্পীরা৷