নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৪ নভেম্বর৷৷ সিপিএম পার্টি অফিসে ঢুকে সভা বন্ধ করার হুমকি দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধলাই জেলার আমবাসায় তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সিপিএম নেতৃত্ব মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি রাজ্য সভাপতি বিপ্লব কুমার দেবের হস্তক্ষেপ চাইলেন৷ এবং মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপেই পরিস্থিাতি স্বাভাবিক হয়েছে বলে দাবি করলেন সিপিএম নেতৃত্ব৷
রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ কখনো শাসক ও বিরোধী ছাত্র সংগঠনের মধ্যে সংঘর্ষ, কখনো আবার বিরোধী দলের মিছিলে হামলা৷ প্রতিটি ঘটনাতেই শাসক দলের দিকে অভিযোগ তুলছে বিরোধী দল৷ অন্যদিকে শাসক দলের তরফ থেকে বলা হচ্ছে বিরোধী দলের বিক্ষুব্ধরাই স্বদলীয়দের উপর হামলা চালাচ্ছে৷ কিন্তু, রবিবার বিরোধী সিপিএম দলের পার্টি অফিসে ঢুকে মিটিং বন্ধ করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাসক দল বিজেপির নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে৷ ঘটনাটি ঘটেছে ধলাই জেলার আমবাসায়৷ সিপিএমের ধলাই জেলা অফিসে বিজেপির নেতা কর্মীরা ঢুকে হুলুস্থুল কান্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সিপিএম সাংসদ জীতেন্দ্র চৌধুরী৷ শ্রীচৌধুরীর উপস্থিতিতেই এই ঘটনা ঘটেছে৷ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমবাসায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে৷
সংবাদে প্রকাশ, রবিবার দুপুর বারোটা নাগাদ আমবাসাস্থিত সিপিএম পার্টি অফিসে দলের একটি বৈঠক হচ্ছিল৷ জেলার আধীন বিভিন্ন মহকুমা থেকে প্রতিনিধিরা এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন৷ মিটিংয়ে পৌরোহিত্য করেন পূর্ব ত্রিপুরা লোকসভা আসনের সাংসদ জীতেন্দ্র চৌধুরী৷ হঠাৎ করে কারো কোন অনুমতি না নিয়ে বিজেপির স্থানীয় কিছু নেতা ও কর্মী সিপিএম পার্টি অফিসে ঢুকে পড়েন বলে জানিয়েছেন সাংসদ৷ তিনি বলেন, অফিসে ঢুকেই হৈ চৈ শুরু করে দেয়৷ বিশ্রি ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে৷ হুমকি দেওয়া হয় অবিলম্বে এই বৈঠক বন্ধ করতে হবে৷ সেই সাথে বলা হয়, আগামীদিনে কোন ধরনের বৈঠক বা সভা সমাবেশ করতে হলে বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্বদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে৷ জীতেন্দ্র চৌধুরী আরও বলেন, মুহুর্তের মধ্যেই উত্তেজনার পরিবেশ সৃষ্টি হয় ঘটনাস্থলে৷ সাথে সাথেই তিনি প্রথমে বিষয়টি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে জানায়৷ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আমবাসা থানার পুলিশ সহ আরক্ষা দপ্তরের পদস্থ আধিকারীকরা৷ পুলিশের উপস্থিতিতেও হুমকি দেওয়া হয় বলে সাংসদ জীতেন্দ্র চৌধুরী অভিযোগ করেন৷ পরে তিনি পরিস্থিতি বিবেচনা করে মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি বিপ্লব কুমার দেবকে ফোন করেন এবং বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করেন৷ মুখ্যমন্ত্রীকে বলার পর কিছুক্ষণ বাদে বিজেপির নেতা কর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়৷ চলে যাওয়ার সময়ও পুলিশের সামনেই নানা ধরনের গালিগালাজ ও হুমকি দিয়ে যায়৷
জীতেন্দ্র চৌধুরী এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বলেন, এদিনের ঘটনা গণতন্ত্রের জন্য একটি হুমকি৷ মিছিল, মিটং করা যাবে না এটা কোন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বা রাজ্যে সম্ভব? তিনি বলেন, বিজেপি যে রাজ্যে জনবিচ্ছিন্ন হচ্ছে এদিনের ঘটনা তা আবারও প্রমাণ করে দিল৷ গত সাত মাসে বিজেপি জোট সরকার নির্বাচনের পূর্বে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেগুলি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, তাতে জনগণ তাদের উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলছে এবং মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে৷ এই পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতের অশনি সংকেত পেয়েই সিপিএমের আন্দোলন কর্মসূচীতে বাধা দিচ্ছে৷ সন্ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে৷ তিনি বিজেপি রাজ্য নেতৃত্বদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বিজেপির নেতা কর্মীদের রাজনৈতিক শৃঙ্খলা সম্পর্কে অবহিত করা প্রয়োজন৷ যে আগুন নিয়ে বিজেপি খেলতে শুরু করেছে, সেই আগুনে অন্যের যতটা ক্ষতি হবে তার চেয়ে বেশী ক্ষতি হবে নিজেদেরই৷ তিনি শাসক দলকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, পাঁচ বছর বাদে আবার পাঁচ বছর আসবে৷ আর সেটা ভুললে চলবে না৷