নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২২ অক্টোবর৷৷ ভারতবর্ষ একটি কৃষি প্রধান দেশ৷ তাই কৃষির উন্নয়ন হলেই দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে৷ আমাদের দেশের বর্তমান সরকার এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই কৃষি ও কৃষকদের কল্যাণে বিভিন্ন প্রকল্প চালু করেছে৷ আজ গোমতি জেলার মির্জার তখিরাই পাড়া জে বি সুকলে রাইস ডে ও ইনোভেটিভ রাইস ফার্মারস মিটের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তিনি বলেন, দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালে দায়িত্বভার গ্রহণ করে রেডিও-এর মাধ্যমে মন কি বাত অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কৃষকদের জন্য বিভিন্ন বার্তা পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করেছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক মহাত্মা গান্ধি গ্রাম স্বরাজের কথা বলেছিলেন৷ একে আদর্শ করেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী গ্রাম স্বরাজের মাধ্যমে গ্রামের উন্নতির লক্ষ্যে কাজ করছেন৷ আগে কৃষকদের জন্য বিভিন্ন পুরকল্পের অর্থ কৃষকদের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছাতো না৷ তাই প্রধানমন্ত্রী সবক্ষেত্রেই ডিজিটাইজেশন ব্যবস্থা চালু করেছেন৷ এর ফলে কৃষকদের জন্য যেসব প্রকল্প চালু করা হয়েছে সেগুলি এখন সরাসরি কৃষকদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে৷ শুধু তাই নয়, ইপিডিএস ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে এখন প্রকৃত ভোক্তাদের কাছেই রেশন সামগ্রী পৌঁছে যাচ্ছে৷ কৃষকরা যাতে সময় মতো সার, বীজ ও অন্যান্য কৃষি সামগ্রী পেতে পারেন তার ব্যবস্থাও করেছে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার৷ বর্তমান রাজ্য সরকারও সেই দিশাতে কাজ করছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ২০২২ সালের মধ্যে দেশের কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে কাজ করছেন৷ প্রকৃত কৃষকরাই যাতে কৃষি সামগ্রী পেতে পারে সেই ব্যবস্থাও চালু করেছেন বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কৃষকদের কোনও কাজ বা দল নেই৷ তাই সমস্ত অংশের কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি৷ কৃষকদের আর্থিকভাবে উননয়ন করার লে৭ কৃষি সামগ্রীর নূ্যনতম সহায়ক মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ এতে কৃষকরা কৃষিকাজে আরও উৎসাহিত হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে রেশনের মাধ্যমে যে আড়াই লক্ষ মেট্রিকটন চাল দেওয়া হয় তা বহির্রাজ্য থেকে আনতে হচ্ছে৷ এতে অনেক টাকা ব্যয় হচ্ছে৷ তাই রাজ্যের বর্তমান সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এফসিআই-র মাধ্যমে রাজ্যের কৃষকদের কাছ থেকেই প্রতি কেজি ধান সতেরো টাকা করে ক্রয় করবে এবং রেশনের মাধ্যমে ভোক্তাদের কাছে পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের পূর্বতন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী তৎকালীন সময়ে শ্লোগান তোলেছিলেন ‘জয় জওয়ান জয় কিষাণ’৷ লালবাহাদুর শাস্ত্রীর এই শ্লোগানকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার কাজ করছেন দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী৷ গরিবদের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রীজী জনধন অ্যাকাউন্ট চালু করেছেন, কৃষকদের কৃষিকাজের সুবিধার্থে সয়েল টেস্টিং-এর ব্যবস্থা করছেন, ফসল বীমা যোজনা সহ একাধিক প্রকল্প চালু করেছেন৷ রাজ্যের ব তমান সরকারও দেশের কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার যে স্বপ্ণ প্রধানমন্ত্রী দেখেছেন তাকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে রাজ্য সরকারও সেই দিশাতে কাজ করছে৷ রাজ্য সরকার আগামী ৩ বছরের মধ্যে ত্রিপুরাকে মডেল রাজ্য বানানোর যে পরিকল্পনা নিয়েছে তাতে কৃষকদেরও যথেষ্ট অবদান থাকবে৷ পাশাপাশি রাজ্যকে নেশামুক্ত রাজ্য হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের বিশেষ করে মহিলাদের আরও এগিয়ে আসতে হবে৷ তবেই রাজ্যের যুব শক্তিকে নেশার করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করা যাবে৷
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে কৃষিমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায় বলেন, আমাদের রাজ্যের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত৷ তাই কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কৃষকদের কল্যােণে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন৷ কৃষকদের বিনামূল্যে সার, বীজ, ঔষধ প্রদানের পাশাপাশি ভর্তুকিতে বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতিও কৃষকদের প্রদান করা হচ্ছে৷ ব তমানে রাজ্যের কৃষকদের আধিকারিকদের দরজায় যেতে হচ্ছে না, বরং কৃষি আধিকারিকরাই ছুটে আসছেন কৃষকদের কাছে৷ শুধু তাই নয় কৃষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে কৃষক বন্ধু কেন্দ্রও খোলা হচ্ছে৷
অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষেণ ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব এগ্রিকালচারাল রিসার্চ-এর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ত্রিপুরা সেন্টারের যুগ্ম অধিকর্তা বি কে কন্দপল বলেন, আইসিএআর ১৯৭৫সাল থেকে ত্রিপুরা রাজ্যে কাজ করছে৷ ইন্টিগ্রেটেড ফার্মিং সিস্টেমের উন্নয়ন করাই আমাদের মূল কাজ৷ ত্রিপুরায় ধান ও বিভিন্ন সব্জি চাষের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে৷ একে কাজে লাগিয়ে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে৷ ধান সহ ডাল, তৈল বীজ, উদ্যান, বনায়ন, প্রাণী সম্পদ ইত্যাদি ক্ষেত্রেও গবেষণার কাজ করছে আই সি এ আর৷ মির্জার এই স্তানে ৩৬০০ প্রজাতি প্রজাতি ধানের চাষ করা হয়েছে৷ গত ১০ বছর ধরেই এই কাজটি করে যাচ্ছে আই সি এ আর৷
অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন আইসিএআর-এর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অধিকর্তা ড নরেন্দ্র প্রকাশ৷ অনুষ্ঠান মঞ্চে ধবজনগর পুলিশ লাইন পূজা কমিটির পক্ষে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে তিন হাজার এক টাকা মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন বিধায়ক রামপদ জমাতিয়া৷ এদিকে, আজ অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বে মুখ্যমন্ত্রী আই সি এ আর কর্তৃক বিভিন্ন প্রজাতির ধানের ক্ষেত পরিদর্শন করেন৷ পরিদর্শনকালে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কৃষিমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিরাও উপস্থিত ছিলেন৷