নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২২ অক্টোবর৷৷ রাজ্যে আশ্রিত রিয়াং শরণার্থীদের সাময়িকভাবে রেশন চালু হয়েছে৷ সোমবার আইনমন্ত্রী রতন লাল নাথ কাঞ্চনপুরে রিয়াং শরণার্থী শিবিরে আশ্রিতদের হাতে রেশন তুলে দেন৷ ১৫ জানুয়ারী ২০১৯ পর্যন্ত তাঁদের রেশন দেওয়া হবে৷ এই সময়ের মধ্যেই শরণার্থীদের প্রতিনিধিরা কেন্দ্রের সাথে নতুন করে আরেকপ্রস্থ আলোচনা করতে চাইছেন৷ কারণ, নিরাপত্তা এবং নির্দিষ্ট কিছু দাবি পুনর্বিবেচনার জন্য কেন্দ্রের সাথে আরো একদফায় আলোচনা জরুরী বলে মনে করেন তাঁরা৷ মূলত, মিজোরামে বিধানসভা নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখেই রাজ্যে আশ্রিত রিয়াং শরণার্থীদের সাময়িকভাবে রেশন চালু করা হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে৷ রিয়াং শরণার্থীদের মিজোরামে ফিরে না গিয়ে রেশন বন্ধ হওয়ার পর পুণরায় কিছুদিনের জন্য রেশন চালু করার পেছনে একটাই কারণ হতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল, তা হল, তাঁদের অধিকাংশই মিজোরামের ভোটার৷
মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের হস্তক্ষেপে কাঞ্চনপুর ও পানিসাগর মহকুমায় অবস্থিত রিয়াং শরণার্থীদের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়া রেশন বন্টনের প্রক্রিয়াটি চালু হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান রাজ্যে অবস্থিত রিয়াং শরণার্থীদের জন্য রেশন পুনরায় চালু করার বিষয়টি যেন কেন্দ্রীয় সরকার বিবেচনা করে৷ সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার পুনরায় শরণার্থীদের মধ্যে রেশন সামগ্রী বন্টনের সিদ্ধান্ত নেয়৷
কেন্দ্রীয় সরকারের গৃহিত সিদ্ধান্ত অনুসারে আজ কাঞ্চনপুর মহকুমার অবস্থিত নাইসিংপাড়া রিয়াং শরণার্থী শিবিরে রাজ্য সরকারের পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে কয়েকজনের হাতে রেশন সামগ্রী তুলে দেন আইন মন্ত্রী রতন লাল নাথ সহ অন্যান্য অতিথিগণ৷ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য বিধানসভার উপাধ্যক্ষ বিশ্বন্ধু সেন, বিধায়ক আশীষ কুমার সাহা, বিধায়ক প্রম কুমার সিং এবং উত্তর ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক সহ অন্যান্য আধিকারীকগণ৷
অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী বলেন, বারবারই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যাতে শরণার্থীরা স্বভূমিতে ফিরে যেতে পারেন৷ আমরাও চাই প্রত্যেকটি শরণার্থী পরিবার স্বভূমিতে ফিরে যাক৷ কারণ, এই শরণার্থী জীবনে শিক্ষা সহ বিভিন্ন বিষয়ে কখনও পূর্ণতা পাওয়া সম্ভব নয়৷ এদিকে, বিধানসভার উপাধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেনের বক্তব্য, রাজ্য সরকার জনগণের মৌলিক চাহিদাগুলি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল৷ তাই, কেউ যাতে উপোস না থাকে সে বিষয়ে রাজ্য সরকারের দৃঢ় নজর রয়েছে৷ এদিন এই অনুষ্ঠানে ৮টি শরণার্থী পরিবারের হাতে রেশন সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়েছে৷
প্রসঙ্গত, কাঞ্চনপুর এবং পানিসাগরে মোট ৫৯০৭টি রিয়াং শরণার্থী পরিবার ৭টি ক্যাম্পে আশ্রিত রয়েছেন৷ মোট জনসংখ্যা ৩৫ হাজার ৩৮৭ জন৷ এরমধ্যে কাঞ্চনপুরে ৪৭৯৮ পরিবার এবং পানিসাগরে ১১০৯ পরিবার আশ্রিত রয়েছে৷ সরকার স্বীকৃতি ছাড়াও দুটি ক্যাম্পে শরণার্থীরা অবস্থান করছেন৷ টানা ২১ বছর ধরে তাঁরা এরাজ্যে শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত৷ ইতিমধ্যে একাধিকবার তাদের মিজোরামে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হলেও, অনেকে ফিরে গিয়েও পুণরায় চলে এসেছেন৷ গত ৩ জুলাই চুক্তি অনুযায়ী তাদের পুণরায় মিজোরামে ফিরে যাবার উদ্যোগ নেওয়া হয়৷ কিন্তু, মাত্র ২০৪ জন রিয়াং শরণার্থী এযাত্রায় মিজোরামে ফিরে গেছেন৷ চুক্তি অনুযায়ী ১ অক্টোবর থেকে তাঁদের রেশন বন্ধ হয়ে যায়৷ কিন্তু, আজ পুণরায় রেশন চালু করা হয়েছে৷ ১৫ জানুয়ারী ২০১৯ পর্যন্ত তাঁদের রেশন চালু থাকবে৷
স্বাভাবিকভাবেই, প্রশ্ণ উঠেছে রেশন বন্ধ করে দেওয়ার পর পুণারায় কেন চালু হয়েছে৷ রাজনৈতিক মহলের মতে, কিছুদিনের মধ্যেই মিজোরামে বিধানসভা নির্বাচন৷ রাজ্যে আশ্রিত রিয়াং শরণার্থীরা অধিকাংশই মিজোরামের ভোটার৷ মোট আটটি আসনের ভোটার এরাজ্যের আশ্রিত রিয়াং শরণার্থীরা৷ এরমধ্যে ৩টি আসনে তাঁরাই নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করবে৷ এই সহজ অংক দিল্লিও বুঝতে পেরেছে, ফলে রেশন চালু করতে সবুজ সংকেত দিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে৷ সুযোগ হাতছাড়া করার বদলে রিয়াং শরণার্থীদের রেশন পুণরায় চালু করে মোক্ষম চাল দেওয়া হয়েছে বলে মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের৷