রোজভ্যালী কান্ডে জড়িত আছি প্রমাণ হলে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেব ঃ বাদল চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৭ এপ্রিল৷৷ রোজভ্যালি চিটফান্ড কান্ডে জড়িত আছি প্রমাণিত হলে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেবো৷ শুক্রবার

সাংবাদিক সম্মেলনে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী বাদল চৌধুরী৷

সাংবাদিক সম্মেলনে জোড় গলায় বলেন বিধায়ক তথা বিরোধী উপনেতা বাদল চৌধুরী৷ বৃহস্পতিবার তাকে চিটফান্ড কান্ডে সিবিআই জেরা করেছে৷ এ বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদের জেড়ে স্পষ্টিকরণ দিলেন বাদলবাবু৷ তাঁর কথায়, সিআরিপিসি ১৬১ ধারায় সাক্ষি হিসেবে তাঁর বয়ান রেকর্ড করেছে সিবিআই৷ জিজ্ঞাসাবাদে সহযোগিতা করেছেন তাই সিবিআই তাকে লিখিতভাবে ধন্যবাদও জানিয়েছেন বলে জানালেন তিনি৷

বাদল বলেন, রোজভ্যালি কেলেঙ্কারিতে ১৬১ ধারা মোতাবেক আমার বক্তব্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে৷ এর মধ্যে অন্য কোনও বিষয় নেই৷ সরকার থাকাকালীন সময়ে যে সমস্ত পদক্ষেপ রাজ্য সরকার নিয়েছে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় তথও সিবিআইকে দেওয়া হয়েছে৷ তবে এটা ঠিক, ত্রিপুরার অর্থ চিটফান্ডের মাধ্যমে বাইরে গেছে৷ আর এর জন্য দায়ী তৎকালীন কেন্দ্রীয় আইনের দুর্বলতা৷

তিনি বলেন, ২০০০ সালে প্রথম চিটফান্ডের ব্যবসা নিয়ন্ত্রনে আনতে এবং আমানতকারিদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে ২০০০ সাল বিধানসভায় বিল আনে রাজ্য সরকার৷ ২০০২ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা এবং পরবর্তী সময় ইউপিএ সরকার গঠিত হওয়ার পর প্রথম অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং পরে পি চিদাম্বরেমের সঙ্গে এ বিষয়ে বহুবার কথাবার্তা হয়েছে৷ কঠোর আইনের দাবি জানানো হয়েছে৷ এরপর রাজ্য সরকার নিজস্ব আইনের সংশোধনও করে৷

বাদল চৌধুরী বলেন, ২০১১ সালে তৎকালীন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ওয়াই রাও এর সঙ্গে সাক্ষাত করে চিটফান্ডের তৎপরতা রুখতে দাবি জানানো হয়েছিল৷ কিন্ত তিনি পরিষ্কার জানিয়েছিলেন, সেবি এবং ইন্সুরেন্স রেগুলেটরি কমিশন ভিন্ন কেউই এদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে না৷

তৎকালীন রাজ্য সরকারের আমন্ত্রণে ওয়াই রাও রাজ্যেও এসেছিলেন৷ রাজ্য সরকারের দাবি এবং প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে৷ আবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে আরও বেশি করে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাকগুলির শাখা খোলার দাবিও জানানো হয়৷ কিন্তু তাতে খুব বেশি একটি কাজ হয়নি৷ তিনি উল্লেখ করেন৷

প্রাক্তন মন্ত্রী আরও বলেন, কেন্দ্রে যারা সরকারে ছিল বা আছে তাদের সঙ্গে কর্পোরেট হাউসগুলির প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রয়েছে৷ আর এই যোগাযোগের কারণে তারা চিটফান্ড কোম্পানিগুলির বিরুদ্ধে প্রথম কোনও ব্যবস্থাই নিতে চায়নি৷ রাজ্য সরকার বিধানসভায় আইন প্রণয়ন করে৷ কিন্তু তাতে কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদন দিতে ১১ বছর কাটিয়ে দেয়৷

কিন্তু রাজ্য সরকার নতুনভাবে আইন প্রণয়ন করে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়৷ চিটফান্ড গুলির আয় ব্যয় এবং আমানতকারির হিসাব প্রতি মাসে সরকারি প্রতিনিধিদের জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়৷ এজন্য ইন্সটিটিউট অব ফিনান্সের অধীনে কম্পিন্যান্ট অথরিটি তৈরি করা হয়৷ এতে জেলাশাসক, মহকুমাশাসক থেকে শুরু করে পুলিশের ইনস্পেক্টর স্তর পর্যন্ত আধিকারিকদের রাখা হয়৷ আর তৎপরতা শুরু করতেই এই সংস্থাগুলি পালানোর উদ্যোগ নেয় বলে তিনি উল্লেখ করেন৷

তিনি বলেন, রাজ্য সরকার পরবর্তী সময় ৩৭টি মামলা সিবিআইকে তদন্ত করে দেখার জন্য পাঠায়৷ কিন্তু সিবিআই মাত্র পাঁচটি মামলা গ্রহণ করে৷ বাধ্য হয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক রাজ্য সরকার পুলিশের আইজির নেতৃত্বে সিট গঠন করে৷ ৮/৯ টি মামলা ছাড়া বাকি সবগুলিতেই তদন্তের কাজ গুটিয়ে এনেছে পুলিশ৷ এখন বর্তমান সরকারের দায়িত্ব তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া৷

সাবেক অর্থমন্ত্রী আরও উল্লেখ করে, রোজভ্যালি পার্ক বেআইনিভাবে হয়েছে৷ অবৈধভাবে অনেকের কাছ থেকে জায়গা কিনেছে এরা৷ আবার বিভিন্ন ভাবে সরকারি জমি ও তারা দখলে নিয়ে এসেছিল৷ সরকারি জমি থেকে তাদের বিতরণ করা অবশ্য সম্ভব হয়েছে৷ এদের জন্য দুর্বলতা থাকার কোনও কারণই নেই৷ রবীন্দ্র ভবনের পাশে তারা বিশাল বড় বাড়ি বানিয়েছিল৷ অনিয়মের কারণে সেটিও আটকে দেওয়া হয়েছে৷

বাদল আরও জানান, রোজভ্যালিকর্তা গৌতম কুন্ডু শেষ পর্যায়ে চেষ্টা করেছিলেন ১২৪ জন আমানতকারির অর্থ ত্রিপুরা থেকে বাইতে নিতে৷ কিন্তু তা আটকে দেওয়া হয়েছে৷

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্ণের উত্তরে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী বলেন, এখন তাদের সঙ্গে কেউ যুক্ত থাকলে সিবিআই অবশ্যই তাদের ধরতে পারে৷ অর্থমন্ত্রী থাকার সুবাদে যা তথ্য প্রমাণ ছিল সবই সিবিআই এর কাছে দিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ এটা ঠিক রোজভ্যালিকে নানা ভাবে ব্যবহার করেছে৷ অবৈধ আর্থিক কর্মকান্ডের সঙ্গে এই রাজ্যের অনেকে যুক্ত ছিল৷ তাদের গ্রেফতার করার হোক, তাদের বিচার হওয়া প্রয়োজন৷ এদের মধ্যে সিপিআইএম এর কোন লোক থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক৷ তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে যে কাউকে গ্রেফতার করা যেতেই পারে৷

বাদলবাবু জোড় গলায় দাবি করেন, রোজভ্যালি চিটফান্ড কান্ডে জড়িত রয়েছি তা প্রমাণিত হলে সেই মুহূর্তেই বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করবো৷ শুধু তাই নয়, যে কোন শাস্তি পেতেও প্রস্তুত থাকবো৷ এদিন তিনি উল্লেখ করেন, ১৬১ ধারায় জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই সন্তুষ্ট হয়েছে৷ তিনি যে তথ্য প্রমাণ এবং বক্তব্য রেখেছেন তাতে সিবিআই এর আধিকারিকরাও সন্তুষ্ট৷ সিবিআই তাকে লিখিতভাবে তাদের সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *