শহুরে এবং গ্ৰামাঞ্চলের স্বাস্থ্য পরিষেবায় সমতা রক্ষার আহ্বান উপ-রাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডুর

গুয়াহাটি, ১৮ এপ্রিল (হি.স.) : শহুরে এবং গ্ৰামাঞ্চলের স্বাস্থ্য পরিষেবায় সমতা রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের উপ-রাষ্ট্রপতি মুপ্পাভারাপু ভেঙ্কাইয়া নাইডু। তিনি বলেছেন, শহরের মানুষ যতটা স্বাস্থ্য পরিষেবা পান, তা গ্রামাঞ্চলের গরিব রোগীরা পান না। তাই এই তারতম্যকে অবশ্যই দূর করতে যত্নশীল হতে হবে। গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্য পরিষেবার পরিকাঠামো উন্নত করতে আরও বেশি হাসপাতাল তৈরির পাশাপাশি উপযুক্ত জায়গা চয়ন করে সেখানে সুবিধাযুক্ত মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন উপ-রাষ্ট্রপতি নাইডু। তাছাড়া, গ্রামাঞ্চলে কর্মরত স্নাতক ডাক্তারদের চিকিৎসা-বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পাঠক্ৰমে অগ্ৰাধিকারের ভিত্তিতে ভরতি করতেও বলেছেন তিনি।

আজ বুধবার বেলা ১১টায় স্থানীয় শ্রীমন্ত শংকরদেব কলাক্ষেত্রে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে নগদবিহীন ‘অটল অমৃত যোজনা’ নামের স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্পের শুভউদ্বোধন করে আয়োজিত সমাবেশ এভাবেই বক্তব্য পেশ করছিলেন উপ-রাষ্ট্রপতি মুপ্পাভারাপু ভেঙ্কাইয়া নাইডু। বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে তিনি নবাজ শিশুমৃত্যুর প্রসঙ্গও এনেছেন। বলেন, জাতীয় স্তরে নবজাতকের মৃত্যু হার ৩৭ শতাংশ হলেও অসমে এই হার ৪৪ শতাংশ। এ ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে নবজাতকমৃত্যুর হার কমাতে সক্ৰিয় পদক্ষেপ গ্ৰহণ করতে রাজ্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান উপ-রাষ্ট্ৰপতি। সমগ্ৰ দেশে স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্পের সংখ্যা বাড়ানোর প্ৰয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করার পাশাপাশি দেশের সর্বস্তরের জনসাধারণের সমউন্নয়ন করা এবং সামাজিক বৈষম্য দূর করতে সুসংহত বিকাশ সাধনের কথাও বলেছেন তিনি।

বেঙ্কাইয়া নাইডু

নগদবিহীন ‘অটল অমৃত যোজনা’ নামের স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্পের উদ্বোধন করে নাইডু জানান, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ অনুয়ায়ী গোটা পৃথিবীর জনসংখ্যার অৰ্ধেক জনতাই উন্নত মানের স্বাস্থ্য প্ৰযত্নের সুযোগ-সুবিধা লাভ করতে পারেন না। তবু সমগ্ৰ বিশ্বের সাত শতাংশ জনসাধারণ জরুরিকালীন স্বাস্থ্যজনিত চিকিৎসার জন্য সৰ্বস্বান্ত হন বলে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপে প্রকাশ হয়েছে, জানান তিনি। এরই পরিপ্ৰেক্ষিতে দারিদ্ৰ্যসীমারেখার নীচে এবং দরিদ্ৰ সীমারেখার ঊর্ধ্বে পরিবারের সদস্যদের জন্য অটল অমৃত অভিযান নামের যে প্রকল্প অসম সরকার সূচনা করেছে তাতে সন্তোষ ব্যক্ত করেছেন তিনি। একে অসম সরকারের এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ বলেও উপ-রাষ্ট্ৰপতি মন্তব্য করেছেন। বলেন, এর দ্বারা গোটা রাজ্যের প্ৰায় প্ৰত্যেক নাগরিক মানসম্পন্ন স্বাস্থ্য প্ৰযত্ন পরিষেবা পাবেন। এর দ্বারা নানান জটিল রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করবেন রোগীরা।

প্রকল্পটির যদি সাৰ্থক বাস্তবায়ন হয়, তা হলে রাজ্যের জনসাধারণ বর্তমান সরকারকে আজীবন স্মরণ করবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন উপ-রাষ্ট্রপতি। ভাষণে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে দেশ সংক্ৰামক এবং অসংক্ৰামক রোগ, উভয়ের বোঝা বহন করছে। পলিও, ধনুষ্টঙ্কার ইত্যাদির মতো ব্যাধি দেশে প্ৰায় নিয়্ন্ত্ৰণ হয়েছে। তবে স্ট্রোক, হৃদরোগের মতো অসংক্ৰামক রোগব্যাধি জনসাধারণের পরিবৰ্তিত জীবনশৈলী এবং কায়িক শ্ৰমহীনতার ফলে বাড়ছে বলেও জানান উপ-রাষ্ট্ৰপতি। এই ব্যাধিগুলোকে নিয়ন্ত্রিত করে সুস্থ জীবনধারণ করতে তিনি যোগাভ্যাস তথা শারীরিক ব্যায়ামকে স্কুলের পাঠক্ৰমে অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে অন্তৰ্ভুক্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে রাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এ প্ৰসঙ্গে প্ৰকৃতি, সংস্কৃতি এবং ভবিষ্যতকে এক সঙ্গে এগতে হবে বলেও ভাষণে উল্লেখ করেছেন উপ-রাষ্ট্রপতি এম ভেঙ্কাইয়া নাইডু।

কথার টানে তিনি ধৰ্ষণের মতো ঘৃণ্য ঘটনাকে নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক হচ্ছে না বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে ধৰ্ষণকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্ৰহণের ওপরও গুরুত্ব দিয়ে বক্তব্য পেশ করেছেন উপ-রাষ্ট্ৰপতি নাইডু।

উল্লেখ্য, দারিদ্যসীমারেখার নীচে ব্যক্তিবর্গ, অর্থাৎ যে পরিবারের বার্ষিক আয় ১.২ লক্ষ আয় এবং দারিদ্র্যসীমারেখার ঊর্ধ্বে (বার্ষিক আয় ১.২ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা) বিদ্যমান পরিবারের সদস্যরা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। সঅসম এবং বহিঃরাজ্যের কয়েকটি বেসরকারি এবং সরকারি হাসপাতালগুলিকে এই প্রকল্পের আওতায় তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত ওই সব হাসপাতালে সুবিধাভোগীরা এই প্রকল্পের অধীনে ইস্যু করা কার্ড দেখিয়ে বিনামূল্যে বা নগদবিহীন চিকিৎসার সুবিধা পাবেন। তালিকাভুক্ত ওই সব হাসপাতালে ‘এএএ’ কেন্দ্র থাকবে, সেখানে আরোগ্য মিত্ররা এ ব্যাপারে সুবিধাভোগীদের সহায়তা করবেন। এই প্রকল্পের বলে দুই লক্ষ টাকা ব্যায়সাপেক্ষে ছয়টি বিশেষ রোগের চিকিৎসা করা হবে।

আজকের অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করেছেন রাজ্যপাল অধ্যাপক জগদীশ মুখি, মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *