কথার নাম লতা

সুবোধ ঘোষ
‘বলপূর্বক ধর্ষণ করল যুবতিকে জনৈক পাষন্ড’৷ মিডিয়ার দৌলতে ধর্ষণের খবর আম জনতার দরবারে চলে এলো৷ কিন্তু সাংবাদিক বন্ধুটি নিজ অজান্তে ধর্ষণকে শ্রেণীভাগ করে ফেললো৷ কি করে শ্রেণীভাগ করা হল সেই আলোচনায় পরে আসছি৷ তার আগে ধর্ষণের একটি বীভৎস চিত্র চোখের সামনে ভেসে উঠে৷ ভেসে উঠে — নরপিশাচের উল্লাস৷ কোনও যুবতি কিংবা বধূর শরীর নিয়ে ছিনিমিনি খেলা৷ নারীত্বের গরিমা এবং অহংকার লুট করা৷ বিজাতীয় উল্লাসে মেতে উঠা এক ধরনের পুরুষদের হ্যায়েনার মত মুখ৷ মানব সৃষ্টির পর থেকে ধর্ষণের এমন শিকার হচ্ছে নারী জাতি৷ নারী যেন পুরুষদের ভোগ্য পণ্য৷ তাদের চিত্ত বিনোদনের সামগ্রী৷ সমাজটা যে পুরুষতান্ত্রিক৷ নারী সুরক্ষার কথা যতই বলা হোকনা কেন — কোথাও যেন একটু ফাঁকি রয়ে গেছে৷ ওই ফাঁক যেন বেহুলা লখিন্দরের লোহার বাসর ঘরে থাকা ছোট একটি ছিদ্রের মত৷ আর ওই পথে নারীদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে একশ্রেণীর কামুক পুরুষ৷ সারা বিশ্বজুড়ে চলছে এমন ধর্ষণের ভয়াল পরিবেশ৷
ছোট রাজ্য ত্রিপুরাও এমন নারকীয় সংক্রামক রোগ থেকে রেহাই পায়নি৷ ধর্ষণের শিকার হচ্ছে আট থেকে আশি পর্যন্ত বৃদ্ধরা৷ এমন মাস নেই যে, রাজ্যের কোথাও না কোথাও ধর্ষণ হচেছ না৷ আবার ধর্ষণ করে প্রমাণ লোপাটের জন্য ধর্ষিতাকে খুন পর্যন্ত করা হচ্ছে৷ মিডিয়ায় প্রতিদিন এমন ধর্ষণের খবর প্রকাশিত হচ্ছে৷ কোনও কোনও পত্রিকায় লেখা হচ্ছে — ‘বলপূর্বক যুবতিকে ধর্ষণ করা হয়েছে’৷ আবার কোনও পত্রিকায় লেখা হচ্ছে — ‘জোরপূর্বক যুবতিকে ধর্ষণ করা হয়েছে’৷ অবচেতনে সাংবাদিক বন্ধুরা ভুল করছেন এখানে৷ ওই যে লেখা হচ্ছেবলপূর্বক কিংবা জোরপূর্বক ‘বল’ ও ‘জোর’ দুটি সমার্থক শব্দ৷ প্রশ্ণ হল — বলপূর্বক ধর্ষণ হলে কি মসৃণভাবে ও ধর্ষণের একটা পর্ব রয়েছে? ধর্ষণ মানেই তো বলপ্রয়োগ করে নারীর ইজ্জত লুট করা৷ এ ক্ষেত্রে জোর শব্দটা কেন আসে? কেন না, মসৃণভাবে ধর্ষণের কোন ইতিহাস রাজ্য, দেশ কিংবা বিশ্বজুড়েও নেই৷ ধর্ষণ মানেই অনিচ্ছার বিরুদ্ধে নারীর ইজ্জত লুট করা সেই ক্ষেত্রে বলপূর্বক কিংবা জোরপূর্বক বললে ধর্ষণকে শ্রেণীভাগ করা হয়৷ তখন জানতে ইচ্ছা হয়— ধর্ষণ কয় প্রকার ও কি কি? কিন্তু ধর্ষণের কোনও শ্রেণীভাগ নেই৷ ধর্ষণ মানেই বলপ্রয়োগ করে একশ্রেণীর পুরুষের জৈবিক ইচ্ছা চরিতার্থ করা৷ তাই এক্ষেত্রে বলপ্রয়োগ কিংবা জোরপূর্বক শব্দ ব্যবহার করা কতটুকু গ্রহণযোগ্য তা কিন্তু বিবেচনার অবকাশ রাখে৷ কিন্তু একশ্রেণীর সাংবাদিক ধর্ষণের আরো বিশেষণ ব্যবহার করে ধর্ষণের গুরুত্বকে যেন ভাগ করে দিল৷ এমন শব্দ প্রয়োগ কোনও অবস্থায় কাম্য নয়৷ ধর্ষণ প্রতিরোধে মিডিয়ার ভূমিকা প্রশংসনীয়৷ তবে শব্দ সংযোজনায় এক শ্রেণীর সাংবাদিককে একটু সচেতন হতে হবে৷ কেন না, বলপূর্বক শব্দটি এলে সমঝোতার বিষয়টিও এসে যায়৷ কিন্তু সমঝোতার মাধ্যমে ধর্ষণ হয় বলে জানা নেই৷ তাইতো ধর্ষণের কোনও প্রকারভেদ নেই৷ আছে সমাজে এক শ্রেণীর নরপিশাচদের তান্ডব৷ ধর্ষণ সমাজে একটি দুষ্ট ক্ষত হিসাবে চিহ্ণিত৷ ফলে ধর্ষণের বিরুদ্ধে মিডিয়ার সরব ভূমিকা একান্ত আবশ্যক৷ এবং শব্দ প্রয়োগেও সচেতনতার বিশেষ প্রয়োজন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *