ঐহিত্যের পরম্পরায় ব্যবসায়ীদের হালখাতা

সায়ন্তক চৌধুরী
ছাত্র ছাত্রীদের জন্য অনেক ধরনের খাতা রয়েছে৷ বিষয়বস্তু অনুসারে এক একটি খাতার নাম এক এক রকম৷ এতসব খাতার পরও আর একটি খাতা রয়েছে৷ অবশ্য এই খাতার গুরুত্ব ছাত্র ছাত্রীদের কাছে একেবারেই নাই৷ এই খাতার সাইজ বাঁধাই ও মলাটও ভিন্নতার দাবি রাখে৷ এই ধরনের খাতার কাটতিও প্রচুর৷ প্রতিটি খাতার মলাট লাল (সালুু) কাপড় দিয়ে বাঁধা৷ ব্যবসায়ী মহলে এই খাতার কদর যেন নিজ জীবনের চেয়েও বেশি৷ ব্যবসায়ী মহলে বানিজ্যে বসতে লক্ষ্মী বলে একাট কথা রয়েছে৷ আর সেই বানিজ্যের হিসাব রাখিবার জন্য এই বিশেষ ধরনে বাঁধানো খাতার প্রয়োজন পড়ে৷ এই খাতার পোষাকি নাম হল হালখাতা৷
বলা যেতে পারে – এখন হালখাতা বিক্রির শেষ সময়৷ রবিবার ১৪২৫ বাংলা সালের প্রথম মাস বৈশাখের প্রথম দিন৷ এদিন ব্যবসায়ীরা হালখাতার শুভ উদ্বোধন করেন৷ তাই শনিবার পর্যন্ত হালখাতা বিক্রির দোকান গুলোতে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়ীদের ভিড় যে থাকবে তা বলাই বাহুল্য৷ কেননা, প্রতিটি ব্যবসায়ী নতুন বাংলা বছরের প্রথম দিনে নতুন হালখাতার উদ্বোধন করেন৷ বছরের প্রথম দিন প্রতিটি দোকান বিশেষ সাজে সেজে উঠে৷ করা হয় পূজার আয়োজন৷ অবশ্য তার অগে শুভ হালখাতা নিয়ে ছুটে বিভিন্ন মন্দিরে৷ হালখাতার প্রথম পাতায় সিঁদুর দিয়ে স্বস্তিকা চিহ্ণ আঁকা থাকে৷ তার নিচে থাকে সিদুঁর মাখানো এক টাকা কয়েনের ছাপ৷ এসব কাজ মন্দিরের ঠাকুর মশায় করে থাকেন৷ সকাল থেকে বিভিন্ন মন্দিরে ব্যবসায়ীদের ভিড় দেখা যায়৷ হালখাতা দেব দেবীরর পায়ে ছোঁয়ানোর পর নিয়ে আশা হয় দোকানে৷ তারপর দোকানে চলে পূজা৷ বিশেষ হিন্দু বাঙালির মাঝে এ পূজার চল রয়েছে৷ রয়েছে বছরের প্রথম দিন হালখাতার শুভ উদ্বোধন করার চল৷ তাইতো বাংলা নববর্ষের প্রথমদিন হিন্দু বাঙালি ব্যবসায়ীরা যেন তাদের ঐতিহ্যের কাছে নতজানু হয়৷ সিদ্ধি দাতা গণেশকে স্মরণ করে বাংলা বছরের প্রথম দিন ব্যবসার সূচনা করেন৷ সেই সাথে প্রতিটি দোকানে থাকে মিষ্টি মুখের ব্যবস্থা৷ খদ্দেররা চিরাচরিত বাঙালি পোষাক পড়ে তাদের বাধা ধরা দোকানে যায়৷ দোকানের মালিকের সাথে তাদের চলে কুসল বার্তার বিনিময়৷ হাতজোড় করে প্রণাম এবং কোলাকুলির পর্ব শেষ হবার পর চলে মিষ্টি খাবার ধুম৷ তারপরে পুরানো হালখাতার বাকি হিসাব দেখে কিছু টাকা দিয়ে শুভ হালখাতার উদ্বোধন করেন৷ অবশ্য অনেকে চৈত্র সংক্রান্তির আগেও কিছু বাকি শোধ করে দেন৷ এভাবে প্রতি বাংলা বছরের প্রথমদিন চলে শুভ হালখাতার উদ্বোধন৷ আবার একটি বছরের জন্য সেজে উঠে দোকান৷ সারাদিন দোকানে বাঁধা ধরা খদ্দেরদের আসা যাওয়া চলে৷ এ হালখাতার উদ্বোধন ঘিরে সবার মনে যেন এক আনন্দের ঢেউ জেগে উঠে৷ বাংলা বছর ঘিরে প্রতিটি হিন্দু বাঙালি এক শিহরিত আনন্দে সিক্ত হয়৷ বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাঙালি হিন্দুদের জীবন আবর্তিত হয় এ বাংলা বছর ঘিরে৷ বছরের প্রথম দিনে যে তারই সূচনা হয়৷ আজ যা শুভ হালখাতা চৈত্রের শেষে তা পুরানো হয়ে যায়৷ অনেক দেনাদারের নামে ভারাক্রান্ত হঠে উঠে সেই হালখাতা৷ আবার নতুন হালখাতা দিয়ে ব্যবসার সূচনা হয়৷ এভাবে হিন্দু বাঙালি ব্যবসায়ীদের কাছে শুভ হালখাতা হয়ে উঠে স্বস্তির প্রতীক৷ ব্যবসায়ীদের জীবনের নির্যাস যেন হালখাতার প্রতিটি পাতায় ছড়িয়ে থাকে৷ বছর ঘুরে বছর আসবে৷ আবার হালখাতার শুভ সূচনা হবে৷ এইভাবে হিন্দু বাঙালি ব্যবসায়ীদের মাঝে হালখাতা টিকে থাকবে কালের গতি যতদিন থাকবে ততদিন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *