আইনের ফাঁকে চলে অটো চালকরা

৷৷ সায়ন্তক চৌধুরী৷৷

৷৷ ১৷৷

অফিস আদালতে ছুটে যাবার পিক আওয়ার৷ স্থান রাজধানীর বটতলা৷ সময় সকাল দশটা৷ রাস্তায় জ্যামের স্বাভাবিক চিত্র৷ যান চালকদের দাঁড়াবার স্থান নেই৷ জ্যামে আটকা পড়লে যাত্রী তুলছে৷ নয়তো চলন্ত অবস্থায় যাত্রী উঠছে৷ দেখা গেল এক অফিস যাত্রী হন্তদন্ত হয়ে ছুটতে ছুটতে চলন্ত অটোয় উঠলেন৷ পেছনে তিনজন যাত্রী৷ নেই বসার গাদাগাদি৷ যাত্রীটি আরাম করে বসে চালকের কাছে জানতে চাইলেন- দাঁড়ান যায় না বুঝি? অটো চালকের নির্বিকার বক্তব্য অহন আইন কড়াকড়ি অইছে৷ দাঁড়ানোর সুযোগ নাাই৷

অটো চালকের কথায় ধরা পড়ে যে, বাম আমলে ট্রাফিক আইনের তেমন কড়াকড়ি ছিল না৷ এখন বিজেপি আমল৷ পরিবহণ আইনে এসেছে কিছুটা পরিবর্তন৷ তাই অটো চালকরা পড়েছে বিপাকে৷ কিন্তু, যত আইন তত ফাঁকও রয়েছে৷ তাইতো দেখা যায় শহরতলীতে অটো চালকরা তিনের বেশী ছয়জন পর্যন্ত যাত্রীও নিচ্ছে৷ নিরাপদ যাতায়াত বুঝে অটো চালকরা এইভাবে যাত্রী নিচ্ছে৷ যাত্রীদেরও কোন আপত্তি নেই৷ কেননা সময়ের তাড়া যে বড়৷

৷৷ ২৷৷

সত্যি কি বাম আমল থেকে বিজেপি আমলে ট্রাফিক ব্যবস্থার কিছুটা রদবদল হয়েছে? বিশ্বাস না হলেও অটোর ক্ষেত্রে কিন্তু এমন হাল দেখা যাচ্ছে৷ ইদানিং অটো চালকরা ট্রাফিক পুলিশকে সমীহ করছে৷ শহরাঞ্চলে ট্রাফিক বিধি মেনে চলার চেষ্টা করছে৷ পরিবহণমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়ের কড়া নির্দেশ হাইকোর্টের রায় মেনে চলতে হবে অটো চালকদের৷ আক্ষরিক অর্থে না হলেও অটো চালকরা হাইকোর্টের নির্দেশ মানছে৷ তবে তাদের ভাষায় আগের চেয়ে ইনকাম কমে গেছে৷ ট্রাফিক পুলিশ নাকি বর্তমানে খড়গ হস্ত৷ মুখ্যমন্ত্রী তথা ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব নাকি আরক্ষা দপ্তরকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন৷ তবে কি আরক্ষা দপ্তর দলদাসের বদনাম থেকে মুক্তি পেল? যান চালকরা তা না বললেও একটা বিষয়ে সবার এক মত যে, ট্রাফিক দপ্তর আগের চেয়ে অনেকটা সতর্ক৷

৷৷ ৩৷৷

কিছুদিন আগে কাঁধে এক তারা লাগানো এক ট্রাফিক পুলিশের সাথে দেখা৷ অনেক দিনের পরিচিত ভদ্রলোক৷ অনেক কথার মাঝে তাকে জিজ্ঞ্যেস করলাম আসলে কি মুখ্যমন্ত্রী আপনাদেরকে স্বাধীনভাবে কাজ করার ছাড়পত্র দিয়েছেন৷ ট্রাফিক ভাই একগাল হেসে বললেন, আগের চেয়ে আমরা অনেক স্বাধীন৷ বামের মত বিজেপি সরকারের হম্বিতম্বি নেই৷ তবে কি আরক্ষা দপ্তর দলদাস মুক্ত হতে চলেছে? যুগ যুগ ধরে চলে আসা পুলিশের বদনাম কি এবার সুনামে পরিণত হবে? আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কি তার স্বভাবসুলভ পথে চলতে পারবে? অস্বীকার করা যাবে না যে, যখনই যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তখনই সেই সরকারের অনুগত থাকে পুলিশ বাহিনী৷ সরকারের ছত্রছায়ায় থেকে মাফিয়ারা পুলিশকে কড়া চোখে ধমক দেয়৷ এমনও দেখা গেছে যে, পুলিশের গায়ে হাত তুলতে দ্বিধা করে না মাফিয়ারা৷ যানচালকদের কাছে ট্রাফিক পুলিশকে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইতেও দেখা গেছে৷ সেই পুলিশ বাহিনী কি রাতারাতি পাল্টে গেল৷ একি ‘চলো পাল্টাই’ এর অভিঘাত? তবে কি এবার থেকে পুলিশ চলবে তার নিজ ঢঙে৷

৷৷ ৪৷৷

২৩ এপ্রিল থেকে রাজ্যে শুরু হবে সড়ক সুরক্ষা সপ্তাহ উদযাপন৷ এদিন রাজধানীর স্বামী বিবেকানন্দ ময়দান থেকে এর সূচনা হবে৷ এবারের সড়ক সুরক্ষা সপ্তাহে কিছু নতুনত্ব থাকবে বলে অনেকে আশা করছেন৷ বাম আমলে সড়ক সুরক্ষা সপ্তাহের নামে উড়েছে অঢেল টাকা৷ বিভিন্ন মোটর সিন্ডিকেটের একের পর এক জমকালো অনুষ্ঠান দেখেছে রাজ্যবাসী৷ দেখেছে এলাহি খানা পিনার আয়োজন৷ এবার বিজেপি প্রথমবারের মত ক্ষমতায় এলো৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের হাতে স্বরাষ্ট্র দপ্তর৷ বাম আমলে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের হাতে ছিল স্বরাষ্ট্র দপ্তর৷ কিন্তু অটো চালকদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ ছিল আরক্ষা দপ্তর৷ নতুন মুখ্যমন্ত্রী শুরুতেই অটো চালকদের লাগাম টানার চেষ্টা করছেন৷ তবে, সড়ক সুরক্ষা সপ্তাহ উদযাপনে কতটুকু স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে পারবে তার উপর নির্ভর করছে অনেক কিছু৷ রাম রাজত্ব না হোক, জনগণ চায় স্বস্তি৷ পুলিশ হোক জনগণের বন্ধু৷ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হোক৷ রাজ্যবাসী একটু নিরাপদ জীবন যাপন করতে চায়৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *