বড়মুড়ায় হাওড়ার উৎসে গিয়ে দেখলেন, ব্যবস্থা নিলেন মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২ এপ্রিল৷৷  বড়মুড়ায় হাওড়ার উৎসে দুটি বাঁধ নির্মাণ করা হবে৷ তাতে আগরতলা শহরে পরিশ্রুত বিশুদ্ধ পানীয় জল

সোমবার বড়মুড়া পাহাড়ে হাওড়া নদীর উৎসস্থল ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ ছবি নিজস্ব৷

সরবরাহ সম্ভব বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ শুধু তাই নয়, ভারী বর্ষায় আগরতলাকে বানভাসী হওয়ার হাত থেকেও বাঁচানো সম্ভব হবে৷ দ্রুত কাজ শুরু করতে তিনি সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন৷ তাঁর আরো ধারণা, এই দুটি বাঁধকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্রও গড়ে তোলা সম্ভব৷ শুধু তাই নয়, বাধ নির্মাণে হাওড়ার নাব্যতাও বাড়বে৷ ফলে, মানুষ জলপথেও আগরতলায় আসতে পারবেন৷ এদিকে, সুকল, অঙ্গনওয়ারী কেন্দ্র এবং শৌচালয় নির্মাণের কাজ পরিদর্শন করে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সমস্ত অনিয়মের জন্য যারা দায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷

মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব সোমবার সকালে বড়মুড়ায় হাওড়ার উৎসস্থল পরিদর্শনে যান৷ বেলবাড়ী ব্লকের অন্তর্গত চাম্পাবাড়ী এ ডি সি ভিলেজে চাম্পাছড়াকে ভিত্তি করে প্রস্তাবিত রেইন ওয়াটার রিজার্ভার প্রজেক্টের স্থান পরিদর্শন করেন৷ পরিদর্শনকালে জলসম্পদ দপ্তরের তত্বাবধায়ক বাস্তুকার জানান, এখানে ২৫ মিটার উচ্চতায় বাঁধ দিয়ে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করা হবে৷ এর জল ধারণ ক্ষমতা হবে ৬৪০ মিলিয়ন কিউবিক মিটার৷ প্রকল্পটির সন্নিহিত এলাকা হলে (ক্যাচমেন্ট এরিয়া) ১৩ বর্গ কিলোমিটার৷ জলসম্পদ দপ্তর এই বহুমুখী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে৷ আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা৷ ৩ বছরে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷

মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, এই বাঁধ নির্মাণের ফলে ৬৯৭৫ মিলিয়ন গ্যালন জল শুখা মরশুমে (৬ মাস) প্রতিদিন হাওড়া নদীতে ছাড়া হবে৷ এরফলে শুখা মরশুমে হাওড়া নদীর পার্শ্ববতী এলাকাসহ আগরতলা শহরে অবস্থিত বিভিন্ন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও উত্তোলক সেচ প্রকল্পব (এল আই স্কিম) উপকৃত হবে৷ প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, এই রিজার্ভারটি গড়ে উঠলে এখান থেকে বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ করা যাবে আগরতলা শহরে৷ ফলে আগরতলাবাসী পরিস্রুত বিশুদ্ধ পানীয় জল পাবেন৷ এছাড়াও পানীয় জল পরিশোধন  খরচও কম হবে৷

এরপর মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব পূর্ব দেবেন্দ্রনগর এ ডি সি ভিলেজের চন্দ্র সাধু পাড়া গ্রামটি পরিদর্শন করেন৷ এ গ্রামে জলসম্পদ দপ্তর রেইন ওয়াটার রিজার্ভার ওভার হাওড়া রিভার আপার সাইড অব চন্দ্রসাধু পাড়া নামে  একটি প্রজেক্ট বাস্তবায়নের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে৷ এ প্রকল্পটির সন্নিহিত এলাকা (ক্যাচমেন্ট এরিয়া) ৮৫০ বর্গ কিলোমিটার৷ ১৫ মিটার উচ্চতা বাঁধ সম্পন্ন এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৩৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে৷ এর জলধারণ ক্ষমতা হবে ৩৮০ মিলিয়ন কিউবিক মিটার৷ শুখা মরশুমে এই প্রকল্প থেকে প্রতিদিন ৪২৮২ মিলিয়ন গ্যালন জল হাওড়া নদীতে ছাড়া হবে৷ এরফলে এই দুটি জলাধার প্রকল্পে আগরতলা শহরে অবস্থিত বিভিন্ন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও ১৩টি উত্তোলক সেচ প্রকল্প উপকৃত হবে৷

এই প্রকল্প দুটি রূপায়িত হলে এখানে আগরতলা শহরের কাছাকাছি একটি পর্যটন কেন্দ্রও গড়ে উঠবে বলে আশাব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ আগামী  দেড় বছরের মধ্যেই এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে আগরতলা শহর বর্ষাকালে বন্যা কবল থেকে মুক্ত করা সম্ভব হবে বলে তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস৷ তাঁর মতে, এই প্রজেক্টের ফলে মাটির নীচে যে জলস্তর রয়েছে তাও বৃদ্ধি পাবে৷ এতে মাইক্রো হাইডেল পাওয়ার প্রজেক্ট করার সম্ভাবনাও রয়েছে৷ শুধু তাই নয়, হাওড়া নদীর নাব্যতাও বাড়বে৷ তাঁর কথায়, হাওড়া নদীর নাব্যতা বাড়লে জলপথেও আগরতলায় আসা সম্ভব হবে৷ তখন শুধু জাতীয় সড়কের উপর নির্ভরশীল থাকতে হবে না৷

বন দপ্তর থেকে জানানো হয় চাম্পাবাড়ী ভিলেজে বনদপ্তর থেকে ৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে কনজারভেশন অব ফরেষ্ট নামে প্রজেক্ট বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে৷ পরিদর্শনের সময় মুখ্যমন্ত্রী জানান, এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পার্শ্ববর্তী গ্রামের জুমিয়ারা ফল ও বাগিচা  ফসল করার সুযোগ পাবেন৷

মুখ্যমন্ত্রী এরপর  চাম্পাবাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেন৷ পরিদর্শনকালে তিনি বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক  ও শিক্ষিকাদের সাথে কথা বলেন৷ বিদ্যালয়ের শৌচালয় ও মিড ডে মিলের বিষয়ে খোঁজখবর নেন৷ এখানকার একমাত্র সাবমার্সিবল পাম্পটি প্রত্যক্ষ করেন৷ দেখা যায়, এই জলের উৎসটি অকেজো অবস্থায় রয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী আগামী এক মাসের মধ্যে পাম্পটি সংস্কার করার জন্য নির্দেশ দেন৷ বাড়ি বাড়ি শৌচালয় নির্মাণের ক্ষেত্রে অপরিকল্পিতভাবে যে সকল স্থান র্নির্বাচন করা হয়েছে তা দেখে মুখ্যমন্ত্রী তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷

এরপর মুখ্যমন্ত্রী রাধাচরণ প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেন৷ তিনি ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক – শিক্ষিকাদের সাথে কথা বলেন৷ মিড ডে মিলের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে গিয়ে দেখা যায়, চাল ও ডালের মিশ্রণে তুলনামূলক আনুপাতিক হারে যথেষ্ট গড়মিল রয়েছে৷ এক্ষেত্রে পুরানো সুকল ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলো ঠিক ঠিক ভাবে কাজ করছেনা বলে মুখ্যমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করে নির্দেশ দিয়েছেন অবিলম্বে পুরানো কমিটিগুলো পরিবর্তন করে নতুন সুকল ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করার জন্য৷

শেষে মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব জিরানীয়া আই সি ডি এস প্রজেক্টের অন্তর্গত রাধাচরণ ঠাকুর পাড়া অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেন৷ তিনি অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রের পড়াশুনা ও বাচ্চাদের বালাহার সম্পর্কে খোঁজখবর নেন৷ পরিদর্শনের পর মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, দিল্লি সফরকালে তিনি হাওড়া নদীকে ভিত্তি করে প্রস্তাবিত দুটি জল সংরক্ষণ প্রকল্প নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের সাথে আলোচনা করবেন ও প্রয়োজনীয় আর্থিক মঞ্জুরীর আবেদন জানাবেন৷ তিনি সাংবাদিকদের জানান, ১৯৭২ সালে ত্রিপুরা পূর্ণ রাজ্যের স্বীকৃতি লাভ করে৷ এরপর থেকে রাজ্যে শিক্ষা ব্যবস্থা, পানীয় জল, যোগাযোগ, কর্মসংস্থান, শৌচালয় ব্যবস্থাপনা, মিড ডে মিল, বনায়ন, যথাযথভাবে গড়ে উঠেনি৷ বহুবছর ধরে আম জনতা এই পরিষেবাগুলি থেকে বঞ্চিত রয়েছেন৷ এখন রাজ্যে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ ত্রিপুরাকে নতুনভাবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ ইতিমধ্যে কাজও শুরু হয়ে গেছে৷

এদিন পরিদর্শনকালে মুখ্যমন্ত্রীর সফর সঙ্গী ছিলেন মুখ্যসচিব সঞ্জীব রঞ্জন, পুলিশের মহানির্দেশক এ কে শুক্লা, বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান সচিব, সচিবগণ, পশ্চিম জেলার পুলিশ সুপার অভিজিৎ সপ্তর্ষি, পশ্চিম জেলার জেলাশাসক ডাঃ মিলিন্দ রামটেকে, পূর্ত দপ্তরের মুখ্যবাস্তুকার, বেলবাড়ি ব্লকের বিডিও সহ বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকগণ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *