৷৷ সায়ন্তক চৌধুরী৷৷
বয়স্কা মহিলা অটোতে উঠার জন্য এক পা বাড়াতে অটো চালক বলে উঠলেন—
উইঠেন না মাসী৷
হতভম্ব মহিলা৷ জানতে চাইলেন— কেন বাবা৷
চালক— তিনজনের বেশী নেওয়া যাইবো না৷

মহিলা— আগেতো পিছনে চার-পাঁচজনও নিছ বাবা৷
চালক— হ, নিছি৷ তহন আছিল বাম সরকার৷ অহন অইলো বিজেপি সরকার৷ তিনজনের বেশী লওন যাইতো না৷
মহিলা— আমার অফিসের তাড়া বাবা৷ লেইট অইয়া যাইছে৷
চালক— আমার পুলিশে তাড়া মাসি৷
মহিলা— ভাড়া বেশী দিমু বাবা৷
চালক— পুলিশের তাড়া ক্যাডা খাইবো মাসি?
মহিলা— হঠাৎ কইর্যা ক্যান্ এমুন নিয়ম আইলো?
চালক— বিজেপি সরকারকে জিগান গিয়া৷
চালক অটো হাঁকিয়ে চলে গেল৷ অফিস যাত্রী সেই মহিলা ফের অটো খঁুজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো৷
ইদানিং অটো চালকদের উপর রাজ্যের পরিবহণ দপ্তর কঠোর মনোভাব নেয়াতে চালকরা পড়েছে বিপাকে৷ এতদিন তারা ‘লারেলাপ্পা’ করে চলছিল৷ কেননা, তখন তাদের মাথার উপর ছিল সিট্যু৷ তাই উচ্চ আদালতের রায়কে বুড়ো আঙ্গুল দেখাতেও তারা দ্বিধাবোধ করেনি৷ অটোতে ছয় থেকে সাতজন পর্যন্ত যাত্রী তোলা হত৷ এনিয়ে অটো চালক ও যাত্রীদের মাঝে ঝগড়াও হত৷ হাতাহাতির ঘটনাও ছিল৷ তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের পরিবহণ মন্ত্রী ছিলেন হেভিওয়েট নেতা মানিক দে৷ তিনিও প্রকাশ্যে অটো চালকদের উচ্চ আদালতের রায় মানতে বলেছিলেন৷ কিন্তু, এ বলাতে তেমন অনুশাসন ছিল না৷ ছিল প্রচ্ছন্ন সহানুভূতির ছোঁয়া৷ ফলে সিট্যু নেতারা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছিল৷ মর্জি মাফিক যাত্রী পরিবহণ ছিল অটো চালকদের একচেটিয়া অধিকার৷ কিন্তু বিধিবাম৷ পতন হল বাম সরকারের৷ এলো বিজেপি সরকার৷ রাতারাতি জিরো থেকে হিরো হয়ে গেল বিজেপি৷ নির্বাচনে পরিবহণ মন্ত্রী মানিক দের শোচনীয় পরাজয় হল৷ নতুন পরিবহণমন্ত্রী হলেন বিজেপির প্রণজিৎ সিংহ রায়৷
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত অটোর ভাড়া নির্ধারণ করে অটোর দৌরাত্ম্য রুখতে তৎকালীন রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেন৷ কিন্তু, ওই সময় সেই নির্দেশ তেমন মান্যতা পায়নি৷ বর্তমানে রাজ্য পরিবহণ মন্ত্রী উচ্চ আদালতের সেই নির্দেশকে মান্যতা দিতে উদ্যোগ নেন৷ ফলে দেখা দেয় বিপত্তি৷ এরই মাঝে গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো অটো চালকদের ঘাড়ে ঝুলছে রোড পারমিট ফতোয়া৷ পয়লা এপ্রিল থেকে এই ফতোয়া কার্যকর হবে বলে পরিবহণ মন্ত্রী জানালেও তা কার্যকর হয়নি৷ অটো চালকদের গলায় আইকার্ড ঝুলানোর কথা বলেছিলেন পরিবহণ মন্ত্রী৷ তাতে লেখা থাকবে রুটের কথা৷ কিন্তু, পয়লা এপ্রিলেও সেই কার্ড অটো চালকদের গলায় ঝুলেনি৷ তবে এটাও সত্য যে, অটো চালকরা তাদের নির্দিষ্ট রুটে গাড়ি না চালিয়ে লাভজনক রুটে গাড়ি চালাচ্ছে সিট্যুর কল্যাণে৷ বর্তমানে নাকি তা আর হচ্ছে না৷ এই বিষয়ে পুলিশকে নাকি দেয়া হয়েছে পূর্ণ স্বাধীনতা৷ এতদিন পুলিশ নাকি থাকত চোখ বুজে৷ বর্তমানে নাকি চোখ কান খোলা রাখবে৷ তাই ফাঁকির জো নেই৷ তবুও অনেক চালক তিনের বেশী যাত্রী নিচ্ছে৷ তবে পুলিশের কড়াকড়ি এবং মজদুর সংঘের দাবড়ানি থাকলে চালকরা তিনের বেশী যাত্রী নিতে পারবে না৷ কিন্তু, রুট পারমিটের বিষয়টি তাদের কাছে যেন গলার কাঁটা হয়ে আছে৷ এনিয়ে পরিবহণ দপ্তরের ভাবনা কি তা দপ্তর মন্ত্রীই জানেন৷ তবে একটা অংশের অটো চালক তাদের নির্দিষ্ট রুটে অটো চালালে যে পথে বসবে তা নির্ঘাত বলা যেতে পারে৷ যা আদৌ কাম্য নয়৷